৪ জুলাই ২০২৩, মঙ্গলবার, ১১:০১

ডিএনডির লাখো মানুষ পানিবন্দী

- বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট

পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ডিএনডির লাখো মানুষ। শুধু রাস্তাঘাটই নয়; বাসাবাড়িতে ময়লা পানিতে একাকার। অনেক বসতবাড়ির রান্নার চুলা ডুবে আছে পানিতে। অনেক স্থানে ভেঙে পড়েছে পয়ঃনিষ্কাশনব্যবস্থা। ভুক্তভোগী মানুষের আকুতি, কবে দূর হবে ডিএনডিরবাসীর দুর্ভোগ।

টানা বৃষ্টির কারণে ডিএনডির অভ্যন্তরে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার চৌধুরীবাড়ী, লালপুর, পাগলা, কুতুবপুর, ভুইগড়, শান্তিধারা, গিরিধারা, সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি, কদমতলী, মুন্সিবাগ ও শহীদবাগসহ বেশ কিছু নিম্ন এলাকা প্লাবিত হয়। পানি নিষ্কাশন না হওয়ার দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে মানুষের।

গতকাল সোমবার সকালে ফতুল্লার চৌধুরীবাড়ী ও লালপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ এলাকার রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ি হাঁটুসমান পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দী হয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন লক্ষাধিক মানুষ। বাইরে চলাচলে ভ্যান গাড়ি ও নৌকাই তাদের ভরসা। তবে পানি নিষ্কাশনে প্রতিকারের ব্যবস্থা না নেয়ায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ভুক্তভোগী মানুষ।

তবে বিষয়টি জানতে পেরে দ্রুত এই জনদুর্ভোগ নিরসনের লক্ষ্যে রোববার দুপুরে সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল পাম্প হাউজ পরিদর্শনে যান সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধিসহ পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং ডিএনডি উন্নয়ন প্রকল্পের সেনাকর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেন তিনি। আগামী ছয় মাসের মধ্যে সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে তাদের প্রতি তাগিদ দেন। অন্যথায় নিজেই পানিতে নেমে ধর্মঘট পালনের ঘোষণা দেন শামীম ওসমান।

বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে পানি নিষ্কাশনের মাধ্যমে জলাবদ্ধতা দূর করে আগামী বছরের জুন মাসের মধ্যে প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি শেষ করার আশ্বাস দেন নারায়ণগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার মাইনুর রহমান।
তিনি বলেন, আশা করছি দ্রুত আমরা পানি নিষ্কাশন করতে পারব। এ ছাড়া এমপি মহোদয় যা বলেছেন, আমরা ছয় মাসের মধ্যেই পুরো কাজ শেষ করার চেষ্টা করব। তবে জুন মাস নাগাদ সময় প্রয়োজন।

তিনি বলেন, ডিএনডির জলাবদ্ধতা স্থায়ীভাবে নিরসন করতে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ৫৮২ কোটি টাকা ব্যয়ে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। করোনা ও আর্থিক সঙ্কটসহ নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে কাজ যথাসময়ে শেষ না হওয়ায় আরো ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে ১২৯৯ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়। ইতোমধ্যে প্রকল্পটির ৭৩ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে

এ দিকে বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে আছে ফতুল্লা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের লালপুর-পৌষাপুকুর এলাকার রাস্তাঘাট। রাস্তাগুলোতে কোমরসমান পানির পাশাপাশি বাসাবাড়িতেও ঢুকেছে বৃষ্টির পানি। ফলে পানিবন্দী হাজার হাজার মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।
কোমরপানির নিচে তলিয়ে আছে রাস্তাঘাট। প্রতিটি বাড়িতেই কোমরসমান পানি। নিদারুণ কষ্টের মাঝে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট।

অথচ এ ওয়ার্ডে তিন-তিনটি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যানের বসবাস। ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খন্দকার লুৎফর রহমান স্বপনের বাড়ি প্রথমে; তারপরে বন্দর থানার কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেনের বাড়ি এবং বক্তাবলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত আলীর বসবাসও এই চার নম্বর ওয়ার্ডেই।

তিনজন জনপ্রতিনিধি বসবাসের পরেও এই ওয়ার্ডের লালপুর- পৌষাপুকুর পাড় এলাকার রাস্তাগুলো বছরের অধিকাংশ সময়ই থাকে পানির নিচে।

এ দিকে ডিপ টিউবওয়েল ও পানির মোটর ময়লা পানিতে ডুবে থাকার কারণে অনেক এলাকায় অভাব দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির। বিশুদ্ধ পানির জন্য তাদের ছুটতে হচ্ছে বহুতল ভবনগুলোতে। কেউ কেউ ছুটে যাচ্ছেন পাশের এলাকার পরিচিতজনদের বাসাবাড়িতে। টিনশেড, বেড়া-টিনের একতলা বাড়িতে যাদের বসবাস তাদের কষ্টের মাত্রা সবচেয়ে বেশি।

অধিকাংশ বাড়ির ভেতরে ঢুকে গেছে পানি। রাস্তাগুলোতে কোমরসমান পানি। রিকশার পরিবর্তে রাস্তাগুলোতে চলছে ভ্যানগাড়ি।

যে রাস্তায় একসময় রিকশা, অটোরিকশা, ইজিবাইক চলত, হেঁটে নিজ নিজ গন্তব্যস্থলে ছুটে চলত হাজার হাজার মানুষ সেই রাস্তায় চলাচলে তাদের ভরসা একমাত্র ভ্যানগাড়ি। কিছু জায়গায় পানি কম তবে অধিকাংশ জায়গাজুড়ে পানি এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, ভ্যানগাড়ির কাঠের জায়গা ছুঁই ছুঁই।

ফতুল্লা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মাঈনুদ্দিন জানান, জলাবদ্ধতা বা বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনে আমি আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। ঊর্ধ্বতন মহলে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তারা বলেছে, অতি দ্রুত পানি নিষ্কাশনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অনতিবিলম্বে ডিএনডির পানি অপসারণ করা না হলে ময়লা পানিতে নেমে ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান।

শামীম ওসমান বলেন, ঈদের সময় আমি অসুস্থ থাকায় সেখানে যেতে পারিনি। আমার ছেলেকে পাঠিয়েছি এবং তার টিম নিয়ে এলাকাগুলোতে গিয়েছে। ও এসে আমাকে ছবি দেখিয়ে বলল মানুষের যে অবস্থা সেখানে জীবনযাপন করা মোটেও সম্ভব না। সেখানে মানুষকে কোরবানি করতে হচ্ছে। আমি কষ্টে ঈদের দিন বের হইনি। কারো সাথে কথাও বলিনি। আমার প্রত্যাশা আছে কারণ পানিসম্পদ মন্ত্রী মহোদয় আমাকে কথা দিয়েছেন। বলেছেন কয়েকটা দিন সময় দিন। আমার এলাকার ত্রিশ-চল্লিশ লাখ লোক এখানে থাকে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল ময়লাসহ এমন কোনো বিষাক্ত ময়লা নেই যা এই পানিতে নেই। এটা যদি অপসারণ করা না হয় আমি তাহলে ওই ময়লা পানিতে নেমে অবস্থান ধর্মঘটে নেমে যাবো। আমি গলা পর্যন্ত পানিতে নেমে দাঁড়িয়ে থাকব।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/759584