৪ জুলাই ২০২৩, মঙ্গলবার, ১০:৫৮

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণহীন হওয়ার আশঙ্কা

মুমূর্ষু না হলে পরীক্ষা করাচ্ছে না অনেকে

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত বছরের এই দিনের চেয়ে চলতি বছর মৃত্যু বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। ঢাকা শহরে গতকাল সোমবার পর্যন্ত ৫৩ সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে এক হাজার ২২ জন ডেঙ্গুরোগী চিকিৎসাধীন আছে। গত বছর এই দিনে ২০০ জনের বেশি ছিল না। গত বছরের এই দিনে ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যু ছিল না। কিন্তু চলতি বছর গতকাল পর্যন্ত মারা গেছে ৫৬ জন। এসব বিশ্লেষণ করে জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, চলতি বছর নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে যেতে পারে ডেঙ্গু সংক্রমণ। উল্লেখ্য, গতকাল সারা দেশে ৪৩৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে এবং মৃত্যু হয়েছে চারজনের।

এ বছর যারা ডেঙ্গুতে মারা যাচ্ছে তারা ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে মারা যাচ্ছে বলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা: এ বি এম খুরশীদ আলম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এবার জ্বর হলেই আগে ডেঙ্গু হয়েছে কি না পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে।

বাংলাদেশে ডেঙ্গুর মৌসুম ধরা হয় আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু এবার মৌসুম শুরু না হতেই যে হারে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে তাতে মৌসুমে ডেঙ্গুকে সামাল দেয়া কঠিন হতে পারে বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্যবিদ ডা: আহমদ পারভেজ জাবীন। তিনি বলেন, এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি। মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই ছয় মাসে ৫৬ জনের মৃত্যু এর আগে দেখা যায়নি। এ ব্যাপারে ডা: জাবীন বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মৌসুম শুরুর আগের জরিপে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব অনেক বেশি পাওয়া গেছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ব্রুটো ইনডেক্সে এডিস মশার ঘনত্ব ২০ শতাংশের বেশি হলেই পরিস্থিতি বিপজ্জনক বলে বিবেচনা করা হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মৌসুম শুরুর আগেই করা জরিপে ঢাকার উত্তর সিটি করপোরেশনের বহুতল ভবনে এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব ৪৯.৫২ শতাংশ পেয়েছে।

অন্য দিকে, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে এডিস মশার ঘনত্ব পাওয়া যায় ৪১.১৫ শতাংশ। ডা: আহমদ পারভেজ জাবীন এ প্রসঙ্গে বলছেন, জরিপেই অনেক বেশি লার্ভা পাওয়া গেছে। বাস্তবে ঢাকার স্যুয়ারেজ ও ড্রেনেজ সিস্টেম ভালো না থাকায় এখানে-সেখানে পানি জমে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। সে জমে যাওয়া পানিতে ডেঙ্গু ভাইরাসবাহী এডিস মশার ডিম পাড়ার যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে। এখন থেকেই ব্যবস্থা না নিতে পারলে সামনে বিপদ অপেক্ষা করছে। সহজেই ডেঙ্গুর চিকিৎসা করাতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী যেন বিনামূল্যে অথবা নামমাত্র মূল্যে টেস্ট করাতে পারে সে ধরনের ব্যবস্থা নিতে তিনি সরকারের কাছে আহ্বান জানান।

এদিকে ঢাকার হাসপাতালগুলোতে রোগীতে ঠাসা হয়ে আছে। বেশ কিছু সরকারি হাসপাতালে বিছানা না থাকায় ফ্লোরিং করে রোগী চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে মুগদা জেনারেল হাসপাতাল একটি। ঢাকাতেই বেশি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। ঢাকা শহরের ৫৩ সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে আরো এক হাজার রোগী ভর্তি হলেই ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য সিটের ব্যবস্থা করা যাবে না।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অনেকেই মুমূর্ষু না হলে ডেঙ্গু টেস্ট করাতে যাচ্ছে না। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষ, কী করতে হবে বুঝে উঠতে পারছে না। খুব বাধ্য না হলে চিকিৎসকের কাছেও যাচ্ছে না তারা। চিকিৎসকের কাছে গেলেই চিকিৎসকদের একটি অংশ রোগীর সাথে কথা বলার চেয়ে (কেস হিস্ট্রি নেয়া) ডায়াগনোসিসের দিকে বেশি মনোযোগ দেন। এক গাদা পরীক্ষা করাতেই কয়েক হাজার টাকা চলে যায় পকেট থেকে। ফলে দরিদ্র রোগীরা মুমূর্ষু না হলে ডাক্তার অথবা হাসপাতালে যেতে চায় না। দেরিতে হাসপাতালে যাওয়ার কারণে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর হারও বাড়ছে বলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ঊর্ধ্বতনরা বলছেন। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা: মাহমুদুল হাসান বলছেন, জ্বর হলেই ডেঙ্গু হয়েছে কি না তা প্রথমেই পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে। এ কারণে ডেঙ্গু পরীক্ষার ফি সরকারি ও বেসরকারি সব হাসপাতাল অথবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ফিক্সড করে দেয়া হয়েছে। মেডিসিনের চিকিৎসকরা বলছেন, ডেঙ্গুর কিছু লক্ষণ আছে, সেগুলো দেখা দিলেই রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে, সবাইকে নয়।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য আইজিজি, আইজিএম ও এনএসওয়ান টেস্ট করাতে হয়। এর মধ্যে আইজিজি ও আইজিএম একই সাথে পরীক্ষা করানো হয় এবং এই দুই পরীক্ষার জন্য ৫০০ টাকা বেসরকারি হাসপাতাল অথবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোকে নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। ডেঙ্গু পরীক্ষার এনএসওয়ান করাতে বেসরকারিতে লাগে ৩০০ টাকা। আর সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতালে এই দুই পরীক্ষার জন্য ৩০০ করে মোট ৬০০ টাকা লাগে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/759606