৩ জুলাই ২০২৩, সোমবার, ১১:৪৬

বৃষ্টিতে জলাবদ্ধ রাজধানীর নিম্নাঞ্চল, চরম ভোগান্তি

কয়েকদিনের বৃষ্টিতে রাজধানীর ভেতরের বিভিন্ন এলাকাসহ এর চারপাশের নিচু এলাকা বলে পরিচিত পুরান ঢাকা, মিরপুর, ডেমরা এবং দক্ষিণখানের অনেক এলাকাই তলিয়ে গেছে। মানুষের পয়ঃবর্জ্য মেশা পানি ও ড্রেনের পানির সঙ্গে বৃষ্টির পানি মিলে একাকার হয়ে পড়েছে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, ফসলি জমি, স্কুল-কলেজের মাঠ ও মসজিদ-মাদ্রাসাগুলোর প্রাঙ্গণ। এসব এলাকার লাখো মানুষ এখন পানিবন্দি হয়ে বিপর্যস্ত ও চরম দুর্ভোগে জীবনযাপন করছেন। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

মিরপুর : টানা বৃষ্টিতে মিরপুর ১, ১০, ১১, ১২, গাবতলী মাজার রোড, কালশী, শিয়ালবাড়ি, প্যারিস রোড, সবুজ বাংলাসহ বিভিন্ন জায়গায় জমেছে হাঁটু থেকে কোমর পর্যন্ত পানি। এতে ভয়াবহ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন স্থানীয়রা। মিরপুর ১২ নম্বর কালশী ২২ তলা গার্মেন্ট থেকে সাংবাদিক আবাসিক এলাকা পর্যন্ত হাঁটু থেকে কোমর পানি জমেছে। কালশীর স্থানীয় বাসিন্দা মিরাজ মাহবুব বলেন, কালশী রোডে বৃষ্টি হলে পানি জমে। তবে আগের মতো দীর্ঘস্থায়ী হয় না। পানি নেমে যাওয়ার জন্য যে পাইপগুলো বসানো হয়েছে সেগুলো ময়লা আবর্জনায় ভরে গেছে। এগুলো পরিষ্কার হলে পানি আরও তাড়াতাড়ি নামবে। জলাবদ্ধতা পুরোপুরি নিরসন করতে হলে মুসলিম বাজার খাল পরিষ্কার ও দখলমুক্ত করতে হবে।

ডেমরা (ঢাকা) : রাজধানীর ডেমরায় টানা বৃষ্টিতে ডিএসসিসির ৬৬ ও ৬৭ নম্বর ওয়ার্ডের নিম্নাঞ্চল ভয়াবহ জলাবদ্ধতায় গৃহবন্দি রয়েছে লাখো মানুষ। ঈদের দুদিন আগে শুরু হওয়া টানা বৃষ্টিতে এ স্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে যা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাছাড়া ডিএসসিসির ওয়ার্ডভিত্তিক অভ্যন্তরীণ পাইপ ড্রেনের জমে থাকা আবর্জনা পরিষ্কার করার টেন্ডারভিত্তিক সময় শেষ হলেও ওই কাজ সম্পন্ন হয়নি ওই দুই ওয়ার্ডে। এতে অভ্যন্তরীণ সড়কে বৃষ্টির পানি ও ড্রেনের ময়লা পানি উপচে পড়ে সড়কে ও নিচু বাড়িঘরে ঢুকে পড়ছে। তাছাড়া অভ্যন্তরীণ পানি নিষ্কাশন খালগুলো দিয়ে বৃষ্টির পানি সরতে না পারায় জলাবদ্ধতা বাড়ছে। এ অবস্থায় ড্রেনের আবর্জনা পরিষ্কার না হওয়ায় আসন্ন বর্ষায় ওয়ার্ড দুটির নিম্নাঞ্চলগুলোতে স্থায়ীভাবে পানিবন্দি হওয়ার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।

সরেজমিন দেখা গেছে, ডিএসসিসির ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডের নিম্নাঞ্চল বর্ষণের পানিতে তলিয়ে আছে। দিনমজুর ও সাধারণ শ্রমজীবী মানুষরা কোনো কাজে বের হতে পারছেন না। এতে সংসার, ঘর ভাড়া ও মাসের বাড়তি খরচ জোগান দিতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন নিুআয়ের বাসিন্দারা। এদিকে বৃষ্টির পানিতে মানুষের চলাচলে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। কয়েকদিনের বৃষ্টির পানি সড়কে জমে থাকায় যাত্রীবাহী যানবাহন চলাচল কম থাকায় সুযোগ পেয়ে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করছেন বিভিন্ন যানবাহন চালকরা। বিশুদ্ধ পানির সমস্যায়ও পড়েছেন এলাকাবাসী।

উত্তরা পূর্ব থানা : টানা বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে উত্তরার সড়ক ও মহাসড়ক। রোববার থেকে অফিস আদালত, ব্যাংক-বিমা খোলা। তবে বৃষ্টির কারণে সড়কে যানবাহনের সংখ্যাও বেশি ছিল। একদিকে ছিল রাস্তায় জলাবদ্ধতা, অন্যদিকে তীব্র যানজট। বিকালে বৃষ্টির ফলে উত্তরার পূর্ব থানার আব্দুল্লাহপুর থেকে শুরু করে বিমানবন্দরসংলগ্ন পেট্রোলপাম্পের অধিকাংশ গলিতেই প্রায় হাঁটুসমান পানি জমে গেছে। এছাড়া ৪, ৬ ও ৮নং সেক্টর এবং রেললাইনসংলগ্ন কিছু এলাকায় ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বৃষ্টির পানি ঢুকেছে। রেললাইনের পাশে ফায়দাবাদ, কসাইবাড়ি, চালাবন, আজমপুর, মধ্য আজমপুর, মাজার রোড, ১ ও ৯নং সেক্টর, নলভোগ, কামারপাড়াসহ অলিগলিতে পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। অটোরিকশাচালক মহসীন জানান, এই রোডে অবস্থা একেবারে খারাপ। যেদিকে তাকাই সেদিকেই থৈ থৈ পানি। ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় পানি সরার কোনো উপায় নেই।

দক্ষিণখান (ঢাকা) : রাজধানীর দক্ষিণখান আজমপুর কাঁচাবাজার ও সিএনজি পাম্প থেকে চৈতি গার্মেন্ট পর্যন্ত প্রায় আধা কিলোমিটারের বেশি সড়ক সারা বছর পানিতে ডুবে থাকে। আর সামান্য বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই, পানি জমে নদী হয়ে যায়। আজমপুর রেললাইনের রাস্তার পর থেকে দক্ষিণখান যাওয়ার অন্যতম সড়ক ছাড়াও দক্ষিণখানের বেশিরভাগ এলাকা বৃষ্টি হলে হাঁটুপানিতে ডুবে যায়। কাদামাটি আর জলাবদ্ধতায় দক্ষিণখান মেইন সড়ক ও অলিগলিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। দক্ষিণখান উত্তর সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পরও এলাকায় মানুষ সিটি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

পুরান ঢাকা : কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে পুরান ঢাকার প্রধান সড়কসহ অলিগলি। পুরান ঢাকার সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণির সিদ্দিকবাজার এলাকায় সড়ক হাঁটুপানিতে ডুবে গেছে। তাছাড়া মাজেদ সরদার রোড, নাজিরাবাজার, ইসলামবাগ এলাকার নিচু গলিগুলোতে পানি জমে চরম দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। তবে রোববার সড়কে যানবাহনের সংখ্যা কম থাকায় জলাবদ্ধতার কারণে যানজট দেখা দেয়নি।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/691637