৩ জুলাই ২০২৩, সোমবার, ১১:৪০

হজে গিয়ে ধর্ম প্রতিমন্ত্রীসহ নিখোঁজ হন দুই শতাধিক

ফিরতে শুরু করেছেন হাজীরা

হজ করতে গিয়ে মিনায় রাস্তা ভুল করেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান। পাঁচ ঘণ্টা নিখোঁজ থাকার পর সরকারি টিম তাকে খুঁজে বের করে। এভাবে এবার হজে গিয়ে প্রায় ২০০ বাংলাদেশী পথ হারিয়ে ফেলেন। পরে ধর্ম মন্ত্রণালয় ও হাবের তৎপরতায় তাদেরকে উদ্ধার করা হয়। এ দিকে হজযাত্রীরা দেশে ফিরতে শুরু করেছেন। গতকাল মোট সাতটি ফ্লাইট জেদ্দা থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসে। গতকাল সন্ধ্যা থেকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হাজীরা নামতে শুরু করেছেন।

এবার হজে তীব্র গরমসহ আনুষঙ্গিক কিছু সমস্যায় পড়তে হয় হাজীদের। ৪২-৪৫ ডিগ্রি তাপমাত্রার কারণে অনেক হাজী অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদের অনেককে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। অসুস্থদের মধ্যে ৫৩ জন ইন্তেকাল করেছেন। এর মধ্যে এক দিনেই সাতজন মারা যান। এ ছাড়া প্রায় সাড়ে ১৮ লাখ হাজীর একটি বড় আয়োজনে গিয়ে বাংলাদেশী হাজীদের অনেকেই পথ ভুলে হারিয়ে যান। বাংলাদেশী প্রায় আড়াই শতাধিক হাজী হারিয়ে যান। এর মধ্যে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খানও কয়েক ঘণ্টার জন্য হারিয়ে যান। মিনায় রাস্তায় পথ ভুলে নিখোঁজ হন তিনি। নিখোঁজের পাঁচ ঘণ্টা পর সরকারি টিমের সহায়তায় তাকে খুঁজে বের করা হয়। ২৭ জুন মঙ্গলবার নিখোঁজ ও উদ্ধারের এ ঘটনা ঘটে। এর কারণ হিসেবে জানা যায়, তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন হারিয়ে ফেলায় একই সাথে থাকা পানি উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীমসহ অন্যদের হারিয়ে ফেলেন। এ প্রসঙ্গে ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিব সাদিকুর রহমান খান নয়া দিগন্তকে বলেন, ধর্মপ্রতিমন্ত্রী নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন বিষয়টি এমন নয়। তিনি মোবাইল রেখে অন্য তাঁবুতে থাকা হাজীদের খোঁজখবর নিতে গিয়েছিলেন। এ কারণে তাকে খুঁজে পেতে আমাদের দেরি হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর খোঁজ করছিলেন চারজন মন্ত্রীসহ সরকারের প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। পরে ৫ ঘণ্টা পর খোঁজ মেলে ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর। হাব সভাপতি বলেন, প্রতি বছরই মিনা, আরাফায় হাজীদের হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। এবার দুই শতাধিক হাজী হারিয়ে যাওয়ার তথ্য আমরা পেয়েছিলাম। হারানো হাজীদের খুঁজে তাদেরকে হোটেলে পৌঁছানোর দায়িত্ব সউদি সরকারের নিয়োজিত সউদি মোয়াল্লেমদের। তারপরও হাব স্বউদ্যোগে হাজীদের কল্যাণে এ দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছে। মক্কায় হারানো হাজীদের খুঁজে এজেন্সির হোটেলে পৌঁছে দিতে কাজ করেছি আমরা। তাদের খুঁজে বের করে দু-এক ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া তাদের তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় সেবা, নাশতা, পানীয় ইত্যাদির সরবরাহ করা হয়েছে। যাদের বেশি সময় থাকতে হয়েছে তাদের সকাল/দুপুরের/ রাতের খাবার, প্রয়োজন হলে চিকিৎসা ইত্যাদিসহ সর্ব প্রকার সেবা নিশ্চিত করা হয়েছে।

ফিরতি হজ ফ্লাইট শুরু : গতকাল থেকে বাংলাদেশী হাজীরা ফিরতে শুরু করেছেন। গতকাল সৌদি স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ১০ মিনিটে ফ্লাইনাসের একটি ফ্লাইট জেদ্দা ছেড়ে আসে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন হাজীরা। সৌদিয়া এয়ারলাইন্সেরও একটি বিমান সন্ধ্যার কাছাকাছি সময়ে ঢাকায় অবতরণ করে। গতকাল ফ্লাইনাসের আরো তিনটি, সৌদিয়া এয়ারলাইন্সের একটি এবং বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইট হাজীদের নিয়ে জেদ্দা ছেড়ে আসে। আজ আরো ৯টি ফ্লাইটে জেদ্দা বিমানবন্দর ত্যাগ করবেন হাজীরা।

অনুমতি ছাড়া হজ পালনের চেষ্টা, আটক ১৭ হাজার : সৌদি আরবে বিনা অনুমতিতে হজ পালনের চেষ্টায় এ বছর ১৭ হাজার লোককে আটক করেছে দেশটির প্রশাসন। শনিবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে আরব নিউজ। জননিরাপত্তা বিভাগের পরিচালক ও হজ নিরাপত্তা কমিটির প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোহাম্মদ আল-বাসামি বলেছেন, মোট ১৭ হাজার ৬১৫ জন আটক হয়েছে। যার মধ্যে আবাসননীতি লঙ্ঘন, কর্ম, সীমান্ত নিরাপত্তা আইন লঙ্ঘনকারী রয়েছেন ৯ হাজার ৫০৯ জন। ১০৫টি ভুয়া হজ ক্যাম্পেইনের সংগঠকও রয়েছে সৌদির বিভিন্ন জায়গায়। আটককৃতদের বিচারের আওতায় আনতে পাবলিক প্রসিকিউশনে পাঠানো হয়েছে। এই কর্মকর্তা আরো জানান, অনুমোদন ছাড়া পবিত্র হজ করতে আসার চেষ্টাকালে মক্কার প্রবেশদ্বার থেকে দুই লাখ দুই হাজার ৬০৯ জনকে ফেরত পাঠানো হয়। অনুমতি না থাকায় এক লাখ ২৮ হাজার ৯৯৯টি যান মক্কায় প্রবেশের আগে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া মক্কায় প্রবেশে পরিবহনে আনার কাজে সহযোগিতায় জড়িত থাকার অভিযোগে আরো ৩৩ জন আটক হন।

এবার হজ করেছেন ১৮ লাখ মানুষ : বিশ্বব্যাপী ২০২০ সালে করোনা ভাইরাস মহামারী ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করে সৌদি আরব। দেশটিতে প্রবেশে কড়াকড়ি নিয়ম জারি করা হয়। কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে ওই বছর মাত্র ১০ হাজার মানুষকে হজ করার সুযোগ দেয় দেশটি। তবে মহামারীর প্রকোপ কমে আসায় ২০২১ সালে ৫৯ হাজার আর ২০২২ সালে প্রায় ১০ লাখ মানুষ হজ পালনের সুযোগ পান। আর এ বছর করোনার সব বিধিনিষেধ তুলে নেয়া হয় ফলে ধারণা করা হয়েছিল, এবার আগের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ সংখ্যক হাজী হজ করবেন। এমনকি সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, তাদের প্রত্যাশা এ বছর ২৫ লাখেরও বেশি মানুষ পবিত্র হজব্রত পালন করবেন, যা হবে নতুন ইতিহাস। তবে যে প্রত্যাশা করা হয়েছিল সেটি পূরণ হয়নি। সৌদি আরবের পরিসংখ্যান ব্যুরো জানিয়েছে, এ বছর ১৫০টিরও বেশি দেশের ১৮ লাখের বেশি হাজীর পদচারণায় মুখরিত হয়েছিল আরাফাতের ময়দান। সংস্থাটি এ ব্যাপারে বলেছে, এ বছর ১৮ লাখ ৪৫ হাজার ৪৫ জন পুরুষ ও নারী হজ করেছেন। যার মধ্যে বিদেশী ছিলেন ১৬ লাখ ৬০ হাজার ৯১৫ জন। সৌদির হাজী ছিলেন এক লাখ ৮৪ হাজার ১৩০ জন। অপর দিকে হাজীদের মধ্যে পুরুষ ছিলেন ৯ লাখ ৬৯ হাজার ৬৯৪ জন। নারী ছিলেন ৮ লাখ ৭৫ হাজার ৩৫১ জন।
এ বছর আরব বিশ্ব থেকে হজ করতে গেছেন তিন লাখ ৪৬ হাজার ২১৪ জন। এশিয়ার দেশগুলো থেকে গেছেন ১০ লাখ ৫৬ হাজার ৩১৭ জন। আফ্রিকার দেশগুলো থেকে গেছেন ২ লাখ ২১ হাজার ৮৬৩ জন। অপর দিকে ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া এবং অন্যান্য অঞ্চলের ৩৬ হাজার ৫২১ জন হাজী আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত ছিলেন।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/759362