৩ জুলাই ২০২৩, সোমবার, ১১:৩৫

কৃচ্ছ্র সাধনের পথে সরকার

অর্থসঙ্কটে ভূমি অধিগ্রহণ ও গাড়ি কেনায় নিষেধাজ্ঞা

সরকারি প্রকল্পে এখন থেকে আর ভূমি অধিগ্রহণ করা যাবে না। সবধরনের ভূমি অধিগ্রহণে অর্থ বরাদ্দের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। একই সাথে সবধরনের যানবাহন ক্রয়, আবাসিক ভবন, অনাবাসিক ভবন এবং অন্যান্য ভবন ও স্থাপনা খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

গতকাল রোববার চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম কার্যদিবসে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে এ-সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করা হয়েছে। সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্র সাধনের লক্ষ্যে নতুন অর্থবছরের শুরুতেই বিদ্যুৎ, গ্যাস ও জ্বালানি খাতসহ কয়েকটি খাতে পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয় সঙ্কোচনের সিদ্ধান্ত নিলো সরকার। অর্থসঙ্কটের কারণে কয়েক বছর ধরেই এ ধরনের কৃচ্ছ্র সাধনের পথে হাঁটছে সরকার।

এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, সরকারের শীর্ষপর্যায়ের নির্দেশে এই কৃচ্ছ্র সাধনের নীতিমালা জারি করা হয়েছে। এর মূল কারণ সরকারের অর্থ ব্যয় হ্রাস। কারণ চলমান বৈশ্বিক মন্দা ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বিশ্ব-অর্থনীতি অচলাবস্থায়। এখানে কৃচ্ছ্র সাধনের কোনো বিকল্প নেই। কারণ সরকার কিছুটা হলেও এসব কারণে অর্থসঙ্কটে রয়েছে। অর্থসঙ্কট যাতে প্রকট আকার ধারণ না করে তার জন্য এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এতে সরকার বছর শেষে বেশ ভালো অঙ্কের অর্থ রক্ষা করতে পারবে।
এ দিকে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে গতকাল বিকেলে জারি করা ‘২০২৩-২৪ অর্থবছরে পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের কতিপয় ব্যয় স্থগিত/ হ্রাসকরণ ও বিদেশ ভ্রমণ সীমিতকরণ’ শীর্ষক পরিপত্রে বলা হয়েছে, বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্র সাধনের লক্ষ্যে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সব মন্ত্রণালয়/ বিভাগ/ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এবং আওতাধীন অধিদফতর/ পরিদফতর/ দফতর, স্বায়ত্তশাসিত/ আধা-স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, পাবলিক সেক্টর করপোরেশন, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটে কতিপয় খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয়ে সরকার এসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

পরিপত্রে বলা হয়েছে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় বিদ্যুৎ খাতে (অর্থনৈতিক কোড নং ৩২১১১১৩) বরাদ্দকৃত অর্থের সর্বোচ্চ ৭৫ শতাংশ এবং পেট্রল, অয়েল ও লুব্রিকেন্ট (অর্থনৈতিক কোড নং ৩২৪৩১০১) এবং গ্যাস ও জ্বালানি খাতে (অর্থনৈতিক কোড নং ৩২৪৩১০২) বরাদ্দকৃত অর্থের সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ ব্যয় করা যাবে। আবাসিক ভবন (অর্থনৈতিক কোড নং ৪১১১১০১), অনাবাসিক ভবন (অর্থনৈতিক কোড নং ৪১১১২০১) এবং অন্যান্য ভবন ও স্থাপনা খাতে (অর্থনৈতিক কোড নং ৪১১১৩১৭) বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় বন্ধ থাকবে।

পরিপত্রে বলা হয়, পরিচালন বাজেটের আওতায় ভূমি অধিগ্রহণ (অর্থনৈতিক কোড নং ৪১৪১১০১) বন্ধ থাকবে, তবে উন্নয়ন বাজেটের আওতায় ভূমি অধিগ্রহণ খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে সব আনুষ্ঠানিকতা পরিপালনপূর্বক অর্থ বিভাগের পূর্বানুমোদন নিতে হবে।

পরিপত্রে বলা হয়, পরিচালন বাজেটের আওতায় মোটরযান (অর্থনৈতিক কোড নং ৪১১২১০১), জলযান (অর্থনৈতিক কোড নং ৪১১২১০২) ও আকাশযান (অর্থনৈতিক কোড নং ৪১১২১০৩) খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় বন্ধ থাকবে। তবে ১০ বছরের অধিক পুরনো মোটরযান প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের অনুমোদনক্রমে ব্যয় নির্বাহ করা যাবে। অন্য দিকে উন্নয়ন বাজেটের আওতায় সব প্রকার যানবাহন (মোটরযান, জলযান ও আকাশযান) ক্রয় বন্ধ থাকবে।

পরিপত্রে বলা হয়, চলতি অর্থবছরের পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় সব প্রকার বৈদেশিক ভ্রমণ/ ওয়ার্কশপ/ সেমিনারে অংশগ্রহণ বন্ধ থাকবে। তবে অত্যাবশ্যকীয় বিবেচনায় যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় সরকারি অর্থায়নে এবং বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা/ বিশ্ববিদ্যালয়/ দেশ কর্তৃক প্রদত্ত স্কলারশিপ/ ফেলোশিপ-এর আওতায় বৈদেশিক অর্থায়নে মাস্টার্স ও পিএইচডি কোর্সে অধ্যয়ন; বিদেশী সরকার/ প্রতিষ্ঠান/ উন্নয়ন সহযোগীর আমন্ত্রণে ও সম্পূর্ণ অর্থায়নে আয়োজিত বৈদেশিক প্রশিক্ষণ এবং সরবরাহকারী/ ঠিকাদার/ পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাসহ কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন কর্মকর্তারা কর্তৃক সেবা/ পণ্যের গুণগত মান নিরীক্ষা/ পরিদর্শনে বিদেশ ভ্রমণ করা যাবে। পরিপত্রে বলা হয়েছে, পরিপত্রে যেসব খাতের উল্লেখ করা হয়েছে, সেসব খাতের বরাদ্দকৃত অর্থ অন্য কোনো খাতে এবং অন্য কোনো খাত থেকে এসব খাতে পুনঃউপযোজন করা যাবে না

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/759368