২ জুলাই ২০২৩, রবিবার, ১১:১৬

বৃষ্টি ও বাড়তি ভাড়ার যন্ত্রণা ঢাকায় ফিরছেন মানুষ

ঈদ ও সাপ্তাহিক বন্ধসহ টানা পাঁচ দিনের ছুটি শেষে আজ রোববার খুলছে সরকারি অফিস-আদালত, ব্যাংক-বিমা-আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন বেসরকারি অফিস। প্রথম কর্মদিবসে যোগ দিতে এসব প্রতিষ্ঠানের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী শনিবার ঢাকায় ফিরেছেন। আজ সকালেও অনেকে ফিরবেন। একইভাবে এখনো ঢাকা থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষ গ্রামে যাচ্ছেন। তবে ঢাকায় আসা ও গ্রামে যাওয়া উভয় দিকের যাত্রীদের ভোগান্তির নাম ছিল বৃষ্টি ও বাড়তি ভাড়া। শনিবার দিনভর বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক পানিতে ঢুবে গেছে। ঢাকায় ফিরেই জলাবদ্ধতার ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে নগরবাসীকে। রাজধানীতে বাস, সিএনজি অটোরিকশা ও রিকশার সংকট ছিল। দীর্ঘ সময় পরপর এসব যান পাওয়া গেলেও নেওয়া হয় বাড়তি ভাড়া।

ঢাকায় এসেই জলাবদ্ধতায় ভোগান্তিতে পড়েন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র কর্মকর্তা রিয়াজুল হাসান। তিনি বলেন, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ থেকে বেলা ১১টায় নিজের গাড়ি নিয়ে রওয়ানা হয়েছি। বেলা ৩টার দিকে ঢাকায় প্রবেশ করতেই হাঁটুপানিতে বারবার গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়।

ঈদযাত্রায় ভোগান্তির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ঈদের আগে মঙ্গলবার রাত ৮টায় রওয়ানা দিয়ে পরদিন ১২টায় পৌঁছেছি। আড়াই থেকে তিন ঘণ্টার পথ যেতে ১৬ ঘণ্টা লেগেছে। সড়কে শৃঙ্খলা বলতে কিছুই ছিল না।

ময়মনসিংহ থেকে সৌখিন পরিবহণের বাসে শনিবার ঢাকায় আসেন বেসরকারি একটি ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার সিরাজুল ইসলাম। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ৩২০ টাকার ভাড়া ৫০০ টাকা নিয়েছে। সব গাড়িতে একই হারে ভাড়া আদায় করছে। তিনি বলেন, বাসের শ্রমিকরা ফিরতি পথে যাত্রী না পাওয়ার কারণ দেখিয়ে বাড়তি ভাড়া নিয়েছে। অথচ ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ যাওয়া প্রতিটি বাসেই যাত্রী ছিল ভরপুর। তিনি বলেন, অল্প বৃষ্টিতে ঢাকায় পনি জমে গেছে। এ কারণে মহাখালী টার্মিনাল থেকে মোহাম্মদপুরে বাসায় যাওয়ার সিএনজি অটোরিকশা পাওয়া যাচ্ছে না। দু-একটি পেলেও দ্বিগুণ ভাড়া হাঁকছে।

এদিকে ঈদ শেষ হলেও বিপুলসংখ্যক মানুষ এখনো ঢাকা ছাড়ছেন। তাদের বড় অংশই নিম্ন আয়ের মানুষ। শনিবার রাজধানীর বাস, লঞ্চ ও ট্রেন স্টেশনে ঢাকা ছেড়ে যাওয়া মানুষের ভিড় দেখা গেছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ঈদ উপলক্ষ্যে ঢাকায় আসা ও ছেড়ে যাওয়া সিম ব্যবহারকারীদের একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করেন। গতকাল বিকালে প্রকাশ করা ওই পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ঈদের পরদিন শুক্রবার ১৪ লাখ ৩১ হাজার ৫৯০ জন সিম ব্যবহারকারী ঢাকা ছেড়েছেন। ওইদিন ঢাকায় এসেছেন ৫ লাখ ৫২ হাজার ৯৭৩ জন। ঈদের দিন বৃহস্পতিবারও ঢাকা ছেড়েছেন ২৩ লাখ ৯৮ হাজার ৫০০ সিম ব্যবহারকারী। ঈদের দিন ও এর আগের দুই দিনসহ (মঙ্গলবার ও বুধবার) তিনদিনে ঢাকা ছেড়েছেন ৭৪ লাখ ৪৫ হাজার ৫২৩ জন। এর মধ্যে তিনদিনে ঢাকায় ঢুকেছেন ২ লাখ ৬৭ হাজার ৩৬ সিম ব্যবহারকারী।
ত্যাগের মহিমায় গত বৃহস্পতিবার দেশে পালিত হয় মুসলমানদের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদের ছুটি একদিন বাড়িয়ে চারদিন করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। নির্বাহী আদেশে ২৭ জুন সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়। ফলে ঈদ উপলক্ষ্যে ২৭ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত (মঙ্গলবার, বুধবার, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার) চারদিন ছুটি ছিল। ১ জুলাই শনিবার ছিল সাপ্তাহিক ছুটি। ফলে এবারের ঈদের ছুটি হয় পাঁচ দিন।

ঈদের ছুটি কাটিয়ে কর্মব্যস্ত রাজধানীতে ফিরতে শুরু করেছেন কর্মজীবীরা। শনিবার দুপুরের পর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে প্রবেশ করা প্রত্যেকটি ট্রেনেই যাত্রী ছিল অনেক বেশি। রাজধানীতে ফেরা কর্মজীবীরা গণমাধ্যমকে বলেন, ঈদের ছুটি শেষে আবারও জীবিকার তাগিদে রাজধানীতে ফিরতে হচ্ছে। চাইলে রোববার সকালেও ফিরতে পারতাম। কিন্তু অনাকাঙ্ক্ষিত জ্যামে পড়ার সম্ভাবনা থাকায় আগেভাগে ফিরছি। রেলওয়ে কর্মকর্তারা বলেন, যাত্রীদের মূল স্রোত আসবে আগামীকাল।

ঢাকায় আসা গাড়িতে যাত্রীচাপ ছিল। লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা আল-আরাফাহ পরিবহণের এক যাত্রী গণমাধ্যমকে বলেন, তাদের স্বাভাবিক সময়ে ভাড়া ৪০০ টাকা। ঈদে ৫০০ করে রাখা হয়েছে। তবে, যাত্রী সংকট নেই, আবার অতিরিক্তও না। ঈদ উপলক্ষ্যে ভালোই যাত্রীর চাপ আছে।

তবে পর্যাপ্ত গাড়িও আছে।
চাঁদপুর থেকে ছেড়ে আসা পদ্মা এক্সক্লুসিভের এক যাত্রী বলেন, আমরা সপরিবারে চাঁদপুর থেকে ঢাকা এসেছি। সকাল সকাল রওয়ানা হওয়ায় গাড়ি পেতে বেগ পেতে হয়নি। তবে যাত্রী ভরপুর। গাড়ির সিট খালি আসেনি। ভাড়া স্বাভাবিক সময়ে ৩৫০ টাকা, ঈদে ৪৫০ টাকা রেখেছে। চাঁদপুরের কচুয়া থেকে ছেড়ে আসা সুরমা পরিবহণের এক যাত্রী বলেন, তাদের কাছ থেকে স্বাভাবিক সময়ের মতোই ভাড়া রাখা হয়েছে। তবে সড়কে যাত্রী ও গাড়ির চাপ দেখেছেন। এছাড়া সিলেট-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন বিভাগ ও জেলা থেকে ঢাকার সায়েদাবাদমুখী গাড়িগুলো যাত্রীবোঝাই করেই আসতে দেখা গেছে।

রাজশাহী থেকে ঢাকায় ফিরেছেন একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা আসাদুল হক। তিনি বলেন, আগামীকাল (রোববার) ব্যাংক খোলা। তাই আজ ঢাকায় ফিরতে হয়েছে। ৬ জুলাই পর্যন্ত ছেলেমেয়েদের স্কুল বন্ধ থাকায় পরিবারের কেউ আসেনি। তারা আগামী সপ্তাহে আসবে।

চট্টগ্রাম ফেরত সরকারি একটি অফিসের তৃতীয় শ্রেণির চাকরিজীবী ইয়াকুব আলী বলেন, রাস্তাঘাটে হয়রানি এড়াতে আগেই ঢাকায় ফিরলাম। আগামীকাল যেহেতু সবাই আসবে তাই ট্রেনে ভিড় হবে। তবে ঢাকার বাইরে ঈদ করতে যাওয়া সরকারি-বেসরকারি বেশিরভাগ কর্মজীবী এক-দুদিন ঐচ্ছিক ছুটি নিয়েছেন। ফলে অফিস-আদালতে কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হতে আরও দু-তিনদিন লেগে যাবে। তখনই রাজধানী ফিরবে আগের রূপে।

লঞ্চ-বাসে ফিরতি যাত্রীদের ভিড় : বরিশাল ব্যুরো জানায়, ঈদ শেষে ঢাকায় ফিরতে বরিশাল নৌবন্দর ও কেন্দ্রীয় নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে যাত্রী চাপ বেড়েছে। স্বাভাবিক সময়ে ২টি লঞ্চ ছাড়লেও শনিবার বরিশাল নৌবন্দর ছেড়ে গেছে ৭টি লঞ্চ। পাশাপাশি বাস টার্মিনাল থেকে ১৫ থেকে ২০ মিনিট পরপর বাস ছেড়েছে। এই দিন কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল নথুল্লাবাদ থেকে দু’শ বাস ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। প্রতিষ্ঠিত বাস কোম্পানি ছাড়া অধিকাংশ বাসে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ পর্যন্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/691298