২ জুলাই ২০২৩, রবিবার, ১১:১৪

সিন্ডিকেটের থাবা কাঁচামরিচের বাজারেও

এবার কাঁচামরিচ নিয়ে সিন্ডিকেটের কারসাজি চলছে। কুরবানির ঈদের আগ থেকেই বাড়ানো হচ্ছে দাম। পরিস্থিতি এমন, রাজধানীতে প্রতিকেজি ৫০০-৬০০ টাকা বিক্রি হলে ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে খুচরা পর্যায়ে ৭০০-৮০০ টাকা এমনকি কোথাও কেজিপ্রতি সর্বোচ্চ ১০০০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে। ফলে অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে কাঁচা মরিচ কিনতেও ক্রেতারা নাজেহাল হচ্ছেন। শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এবং বিভিন্ন অঞ্চলের প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন থেকে এমন তথ্য জানা গেছে।

বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি এমপি বলেছেন, কাঁচামরিচ কৃষিজাত পণ্য। এর দাম কেন বাড়ল তা কৃষি মন্ত্রণালয় বলতে পারবে। এটা আমাদের ব্যাপার নয়। শনিবার রোটারি নতুন বর্ষ উপলক্ষ্যে বগুড়ায় রোটারিয়ানদের র‌্যালি উদ্বোধনের আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ সব কথা বলেন। এ সময় তিনি জানান, সরকার সিদ্ধান্ত নিয়ে কাঁচামরিচ আমদানির অনুমতি দিয়েছে।

এরপরও দাম কমছে না। আকাশ ছোঁয়া দাম বৃদ্ধির রহস্য খুঁজে পাচ্ছে না সরকারের সংশ্লিষ্টরা। সাধারণ ক্রেতারা বলছেন, ঈদ ঘিরে এটি সিন্ডিকেটের কারসাজি। চিনিসহ অন্যান্য পণ্যের পর এবার কাঁচামরিচের বাজারেও সিন্ডিকেট থাবা বাসিয়েছে।
রাজধানীর খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শনিবার প্রতিকেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৬০০ টাকা। তবে পাইকারি বাজারে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নয়াবাজারের সবজি বিক্রেতা মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, পাইকারিতে কাঁচা মরিচ ৪০০ টাকায় বিক্রি হলেও খুচরা বাজারে আনতে পরিবহণ ভাড়া ও বাজারের গেট ম্যানকে টাকা দিতে হয়। সব মিলে লাভ রেখে বিক্রি করতে হয়। এছাড়া দেশে কয়েক দিনের বৃষ্টিতে মরিচের খেতে অনেক ক্ষতি হয়েছে। যে কারণে সরবরাহ কম। পাশাপাশি ভারত থেকেও এতদিন আমদানি বন্ধ ছিল। যে কারণে পণ্যটির চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমে গেছে। কুরবানির ঈদ ঘিরে চাহিদা বেশির সুযোগে দাম বাড়িয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীরা।

নয়াবাজারে কথা হয় নাসরিন বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজির কাঁচা মরিচ ১০০ টাকায় বিক্রি হলেই নাজেহাল হতে হয়। কিন্তু এখন ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এটা কোনো কথা হতে পারে না।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কৃষি তথ্য সার্ভিসের পরিচালক ড. সুরজিত সাহা রায় বলেন, বর্ষায় মরিচের জমি ডুবে গেছে। চরাঞ্চলের জমিও ডুবে গেছে। ঈদের মধ্যে চাহিদা বেড়েছে। তবে এত দাম বৃদ্ধির রহস্য খুঁজে পাচ্ছি না। তবে সরকারের সিদ্ধান্তে ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানি হচ্ছে। আশা করি দ্রুত কাঁচা মরিচের দাম কমবে।

যুগান্তরের নেত্রকোনা প্রতিনিধি জানান, শনিবার শহরের মেছুয়া বাজার, আখড়ার মোড়, জয়ের বাজার, সাতপাই লেভেল ক্রসিং বাজার ও আনন্দ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাইকারি বাজারে কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা দরে। আর খুচরা দোকান থেকে কিনতে গেলে প্রতিকেজির দাম পড়ছে ৯০০-১০০০ টাকা। খুচরায় ২৫০ গ্রাম কিনলে ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা ও আধা কেজি কিনলে বিক্রেতারা নিচ্ছেন ৪৫০ থেকে ৪৮০ টাকা। ১০০ গ্রাম নিলে দাম রাখছেন ১০০ টাকা। এতে খুচরা বাজারে প্রতিকেজি কাঁচা মরিচের দাম পড়ছে ১০০০ টাকা।

কাউখালী (পিরোজপুর) প্রতিনিধি জানান, বাজারে কাঁচা মরিচ নেই। শনিবার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কাঁচা মরিচ দুই-একটি দোকানে দু-এক কেজি করে ডালায় বিক্রি হচ্ছে। কেজি ৮০০ টাকা। কাঁচামাল ব্যবসায়ী মাহাফুজুর রহমান জানান, পাইকারি বাজারের সরবরাহ কম থাকায় কাঁচা মরিচের অস্বাভাবিকভাবে দাম বেড়েছে।

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, হবিগঞ্জে মরিচের ঝালে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। ঈদের আগের দিন ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও শনিবার ৬০০-৭০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অতিরিক্ত দামের কারণে অনেকেই এখন রান্নায় এটির ব্যবহার বাদ দিয়ে দিয়েছেন। কেউবা আবার দুটি, ৫টি করে কিনছেন। পুরানমুন্সেফী এলাকার বাসিন্দা সৈয়দ মোহাম্মদ দিলাল বলেন, কাঁচা মরিচ এখন আর কেনার মতো নয়। তাই রান্নায় কাঁচা মরিচের ব্যবহার বাদ দিয়েছেন। ৩০-৪০ টাকা কেজির কাঁচা মরিচের দাম এমন হতে পারে তা কখনো কল্পনাও করিনি।

চিলমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, কুড়িগ্রামের চিলমারীতে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকায়। এ ছাড়া আদার কেজি ৬০০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। শনিবার পাইকারি সবজি ব্যবসায়ী ছকমল হোসেন বলেন, বাজারে কাঁচা মরিচ ও আদার সরবরাহ কমে যাওয়ায় দামের এ অবস্থা।

আগৈলঝাড়া (বরিশাল) প্রতিনিধি জানান, বরিশালের আগৈলঝাড়ায় হুহু করে বাড়ছে কাঁচা মরিচের দাম। প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৭শ টাকায়। হঠাৎ করে দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ ক্রেতারা।

সিলেট ব্যুরো জানায়, সিলেটের খুচরা বাজারে কাঁচা মরিচের কেজি ১০০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। তবে পাইকারি বাজারে ৬০০-৭০০ টাকা কেজিতে পাওয়া যাচ্ছে। সিলেটের বিভিন্ন বাজার, নগরীর অলিগলির দোকানের ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, সপ্তাহখানেক ধরে কাঁচা মরিচের দাম বাড়ছে। এর মধ্যে ঈদের আগের দিন খুচরা বাজারে কাঁচা মরিচের কেজি ছিল ৭শ থেকে ৮শ টাকা। ঈদের দিন থেকে ১ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যায়। অথচ ৮-১০ দিন আগেও ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় কাঁচা মরিচের কেজি ছিল। দাম বাড়ার কারণ হিসাবে বিক্রেতারা বলছেন বাজারে কাঁচা মরিচ পাওয়া যাচ্ছে না।

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি জানান, লক্ষ্মীপুরে বাজারে প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ সাড়ে ৬০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু একদিন আগেও ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা ছিল। শনিবার লক্ষ্মীপুর জেলা শহরের গোডাউন রোড এলাকার পৌর কাঁচা বাজার ঘুরে এমন তথ্য জানা গেছে। বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি ক্রয়মূল্য বেশি পড়ায় খুচরা বাজারে দাম বেড়ে গেছে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/691296