২৯ জুন ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ৮:৫০

বড় দুই বাজারে পোশাক রপ্তানি কমেছে

চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই থেকে মে) বাংলাদেশের তৈরি পোশাক পণ্যের বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি আয় কমেছে ৫.৭ শতাংশ। অন্যদিকে চলতি পঞ্জিকা বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ৪ মাসে আরেক বড় বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়নেও (ইইউ) দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি কমে গেছে। সম্প্রতি দেশভিত্তিক রপ্তানির তথ্য প্রকাশ করেছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। ইপিবি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

ইইউ এবং যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির প্রধান দুই গন্তব্য। মোট রপ্তানি আয়ের ৭২ থেকে ৭৫ শতাংশ আসে এ দুই বাজার থেকে। গুরুত্বপূর্ণ এ দুই বাজারে একসঙ্গে রপ্তানি কমে যাওয়ার কারণে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে উদ্যোক্তাদের মধ্যে।
জানা গেছে, অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে মোট পোশাক রপ্তানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০.৬৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধিসহ ৪২.৬৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এর মধ্যে ২১.২২ বিলিয়ন ডলারের পোশাক ইইউ বাজারে গেছে। আর গত বছরের তুলনায় এ বছর যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি কমেছে ০.৪১ বিলিয়ন ডলার। চলতি বছর ৭.৭৩ বিলিয়ন ডলারের পোশাক দেশটিতে রপ্তানি করে বাংলাদেশ, যা গত অর্থবছরে ছিল ৮.১৪ বিলিয়ন ডলার।
কানাডায় রপ্তানি করা হয় ১.৩৯ বিলিয়ান। অপ্রচলিত বাজারে রপ্তানি করা হয়েছে ৭.৬৮ বিলিয়ন ডলারের পোশাক।

ইউরোপীয় ইউনিয়নে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির সবচেয়ে বড় গন্তব্য, যেখানে জুলাই-মে ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় জুলাই-মে ২০২২-২৩ সময়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯.৯৪ শতাংশ এবং পোশাক রপ্তানি ১৯.৩০ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ২১.২২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

জার্মানিতে উল্লেখিত সময়ে পূর্ববর্তী অর্থবছরের একই সময়ের (জুলাই-মে ২০২১-২২) তুলনায় রপ্তানি ৭.২২ শতাংশ কমেছে, রপ্তানি ৬.৫০ বিলিয়ন ডলার থেকে কমে ৬.০৩ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। ফ্রান্স এবং ইতালিতে রপ্তানি যথাক্রমে ২.৬ বিলিয়ন ডলার ও ২.০৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে যথাক্রমে ২৩.৪ শতাংশ এবং ৪৪.৮১ শতাংশ।

উল্লেখিত অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ৫.৭ শতাংশ কমেছে, রপ্তানি ৮.১৪ বিলিয়ন ডলার থেকে কমে ৭.৭৩ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। একই সময়ে যুক্তরাজ্য ও কানাডায় রপ্তানি যথাক্রমে ১২.১৭ শতাংশ এবং ১৭.৬২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সময়ে অপ্রচলিত বাজারে রপ্তানি ১৮.৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রধান অপ্রচলিত বাজারের মধ্যে জাপানে ৪৫.৫০শতাংশ ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে, যেখানে রাশিয়া এবং চিলিতে যথাক্রমে ২৮.৮২ শতাংশ এবং ১১.৭৯ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

তৈরি পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, আগামী মাসগুলোতে রপ্তানি আরও কমে যাবে। কারণ এ মুহূর্তে রপ্তানি আদেশ গত বছরের একই সময়ের চেয়ে অন্তত ৩০ শতাংশ কম। ফারুক হাসান বলেন, ইইউতে রেকর্ড হারে মূল্যস্ফীতি এবং যুক্তরাষ্ট্রে নীতি সুদহার বাড়ানোর কারণেই স্থানীয়ভাবে চাহিদা সীমিত হয়ে এসেছে। তবে বড় এই দুই বাজারে অন্য দেশের রপ্তানি যে হারে কমেছে, বাংলাদেশের রপ্তানি সে হারে কমেনি।

এদিকে জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চার মাসে ইইউ’র ২৭ দেশে রপ্তানি কমেছে ২ শতাংশের মতো। ইইউ জোটের সবচেয়ে বড় বাজার জার্মানিতে রপ্তানি কমেছে ২২ শতাংশ। অন্যদিকে একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি কমেছে ১৮ শতাংশ। এ ছাড়া অন্যতম বড় বাজার কানাডায়ও এ সময় রপ্তানি কমেছে ১ শতাংশের মতো। তবে অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই থেকে মে) ইউরোপের বাজারে রপ্তানি বেড়েছে ৯.৯৪ শতাংশ।

ইইউর সরকারি পরিসংখ্যান সংস্থা ইউরোস্ট্যাটের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, গত জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চার মাসে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ইইউতে আমদানি কম হয়েছে ৭.৬২ শতাংশ। চীনের রপ্তানি কমেছে ১৭ শতাংশেরও বেশি। তুরস্কের ১৪ এবং ভিয়েতনামের ৪ শতাংশের মতো। ইন্দোনেশিয়াসহ অন্য দেশের রপ্তানিও কমেছে বিভিন্ন হারে।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থা অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (ওটেক্সা) তথ্য থেকে জানা যায়, দেশটিতে গত ৪ মাসে বস্ত্র ও পোশাক আমদানি কমেছে ২২ শতাংশ। এ সময় বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি কমেছে ১৮ শতাংশ। চীনের কমেছে ৩২ এবং ভিয়েতনামের কমেছে ২৭ শতাশ। তবে পরিমাণের দিক থেকে চীনের অবস্থান এখনও প্রথম।

ভিয়েতনাম দ্বিতীয় এবং বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, গত জানুয়ারি-এপ্রিল সময়ে ইইউতে ৭৭০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়, যা আগের একই সময়ে ছিল ৭৮২ কোটি ডলার। রপ্তানি কমে যাওয়ার কারণে বাংলাদেশের পোশাক আমদানিতে ইইউর পরিমাণও কমছে। ৫১ শতাংশ থেকে কমে এখন তা ৪৯ শতাংশে নেমে এসেছে।

https://mzamin.com/news.php?news=62470