২৮ জুন ২০২৩, বুধবার, ৭:৫০

কুরবানির পশু কিনতে হিমশিম খাচ্ছে ক্রেতা

পুরোদমে জমে ওঠেছে কুরবানির পশুর হাট। তবে একেক হাটে পশুর দাম একেক রকম। বৃষ্টিতে হাটের এলাকার কাদায় ভড়ে গেলেও ক্রেতারা আসছেন ভোগান্তি মাথায় নিয়ে। ক্রেতারা বলছেন, এবার পশুর দাম তাদের বাজেটের নাগালের বাইরে। চোখতোলা পশু পাচ্ছেন না লাখ টাকার কমে। আর বৃষ্টির কারণে লোকসানের কথা বলছেন ব্যবসায়ীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার পুরোদমে জমে উঠেছে গাবতলীর কোরবানির পশুর হাট। কাদা-বৃষ্টি উপেক্ষা করে হাটে আসছেন ক্রেতারা। হাটে ছোট গরুর সঙ্গে টান পড়েছে মাঝারি সাইজের গরুর। ব্যাপারিদের প্রত্যাশা, আজ বুধবার থেকে বড় গরুর বিক্রি বাড়বে। গতকাল সকাল থেকেই গাবতলী পশুর হাট ট্রাক ও পিকআপে করে গরু আনা হয়। ক্রেতা বিক্রেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা যায় মাঝারি আকারের গরুর চাহিদাই বেশি। তবে এবছর গরুর দাম বেশি হাকনো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মধ্যবিত্তরা।

টাঙ্গাইলের ভুয়াপুরে নিজের খামার থেকে শতাধিক ইন্ডিয়ান হরিয়ানা জাতের গরু এনেছিলেন ব্যাপারী ফারুক মিয়া। তিনি বলেন, আর মাত্র ২৮টি গরু আছে। সাড়ে ৩ থেকে ৬ লাখ পর্যন্ত দামে নানা সাইজের গরু বিক্রি করছি। এখন যা আছে সব সাড়ে ৩ থেকে সাড়ে ৪ লাখের মধ্যে। মিরপুর থেকে আসা ক্রেতা রিয়াদ বলেন, ভেবেছিলাম বড় গরু কিনব। কিন্তু দামে মিলছে না। তাই মাঝারি গরুতে নজর দিয়েছি।

অন্যদিকে ক্রেতাদের অভিযোগ, অনেক বেশি দাম হাঁকাচ্ছেন বিক্রেতারা৷ বড় গরুর ক্রেতা থাকলেও দামের কারণে কেনা যাচ্ছে না। সবুর মিয়া নামে আদাবরের এক ক্রেতা বলেন, ছোট গরুর দামও যেন নাগালের বাইরে। সোয়া লাখের গরু কিনতে হলো দেড় লাখে। গাবতলী অস্থায়ী পশুর হাটের ম্যানেজার, হাসিল ঘরের সামনে ভিড় বাড়ছে। মাঝারি গরুর হাসিল বেশি আসছে। বড় গরুর ক্রেতা এখনো কম।

বরাবরের মতো এবারও রাজধানীর কমলাপুরে বাংলাদেশ ব্যাংকের পেছনে বক্স কালভার্ট সড়কে কোরবানির পশুর হাট বসেছে। ছোট-বড় সব ধরনের পশু রয়েছে এ হাটে। হাট ঘুরে ক্রেতারা বলছেন, ব্যবসায়ীরা গরুর দাম দ্বিগুণ হাঁকাচ্ছেন। ক্রেতারা বলছেন, যে গরুর দাম ৮০ হাজার টাকাও নয়, সেটি তারা দেড় লাখ টাকা দাম চাইছেন। গরুর সঙ্গে দামের যেন আকাশ-পাতাল পার্থক্য। অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, গো খাদ্যের দাম বাড়তি থাকায় এ বছর গরুর দাম বেশি। বিষয়টি ক্রেতারা বুঝতে চাইছেন না।
এদিকে সকাল থেকে বৃষ্টি হওয়ায় পুরো এলাকা কাদায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। গরুর গোবর আর বৃষ্টির পানি মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। কিছু কিছু গরুর উপরে ছাউনি থাকলেও অনেক গরুর উপরই ছাউনি নেই। ভিজে গরুগুলো একেবারে শীতল হয়ে গেছে। এ অবস্থায় ক্রেতা-বিক্রেতা অনেকেই বাধ্য হয়ে কাদায় পা ফেলছেন। কখনো কখনো সেই কাদা এসে লাগছে তাদের জামায়ও।
ক্রেতা রুম্মান আহমেদ বলেন, অন্য বাজার থেকে এই বাজারে গরুর দাম অনেক বেশি। তারা ডাবল দাম হাঁকাচ্ছেন। যে গরুর দাম ৬০ থেকে ৮০ হাজার টাকার মধ্যে। সেগুলো তারা দেড় থেকে এক লাখ ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম চাইছে। হাট থেকে ৯০ হাজার টাকা দামের একটি গরু নিয়ে ফিরছিলেন ক্রেতা আমজাদ হোসেন। তিনি বলেন, ঠকেছি না জিতেছি সেটা বড় বিষয় না। আমার সামর্থ্যের মধ্যে এই গরুটা পেয়েছি। বিক্রেতা এক লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম চেয়েছিল। সেখান থেকে ৯০ হাজার টাকায় কিনলাম।

এদিকে ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে এবার রাজধানীর দুই সিটিতে বসেছে ১৭টি অস্থায়ী পশুর হাট। এর বাইরে গাবতলী ও সারুলিয়ায় দুটি স্থায়ী হাটেও প্রচুর গরু নিয়ে এসেছেন ব্যবসায়ীরা। হাটগুলো জমে উঠলেও গত দুই দিনের বৃষ্টিতে এখন বেহাল অবস্থা। কর্দমাক্ত হাটে ক্রেতা-বিক্রেতারাও পড়েছেন বিপাকে। বৃষ্টির কারণে অনেক গরু অসুস্থ হয়ে পড়েছে। শুধু তাই নয়, এ অবস্থায় পশুর দামও কমে গেছে। ফলে লোকসানের আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।

বৃষ্টির পানি থেকে রক্ষা পেতে অনেক ব্যবসায়ী বালুর বস্তা বিছিয়ে তার ওপরে গরু রেখেছেন। অনেকে আবার ত্রিপল, ভারী পলিথিন দিয়ে গরু রক্ষা করার চেষ্টা করছেন। ব্যবসায়ীরা জানান, আবহাওয়া খারাপের কারণে ক্রেতাসমাগম কম। যারা হাটে আসছেন, তারা দাম জানতে চেয়ে চলে যাচ্ছেন, কিনছেন না। ব্যবসায়ীরা মনে করেন, আবহাওয়া ভালো হলে ফের জমে উঠবে পশুর বেচাকেনা।

কোথাও কোথাও হাঁটু পানির সঙ্গে পশুর মল-মূত্র মিশে যাওয়ায় হাটে থাকা কষ্টকর হয়ে পড়েছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের। একই সঙ্গে গত দুই দিনে বেড়েছে মশার উপদ্রবও। একদিকে বৃষ্টির বাগড়া, তার ওপরে মশার উপদ্রবে হাটে বিরাজ করছে নাকাল অবস্থা। সারুলিয়া হাটে মেহেরপুর থেকে আসা ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সোমবার ১২টি গরু নিয়ে হাটে এসেছি। প্রতিটি গরুর দাম গড়ে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা। আসার পর পরই দুটি গরু বিক্রি হলেও এরপর বৃষ্টির কারণে ক্রেতারা আর দাম-দরও করেননি।’
রহমতগঞ্জ হাটে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার খামারি বদিউল আলম বলেন, ‘আমার নিজের ঘরে পালিত তিনটি গরু নিয়ে এসেছি। বৃষ্টির কারণে একটি গরুর ঠান্ডা লেগে গেছে। আবহাওয়া এমন খারাপ থাকলে কম দামেই বিক্রি করে দেওয়া লাগতে পারে।’

আফতাবনগর হাটে দেখা গেছে, হাটের সীমানা ছাপিয়ে গরু চলে গেছে অনেক দূর। সেখানে হাঁটার রাস্তায়ও পানি জমে গেছে। বৃষ্টির মধ্যেই ভিজছে গরুগুলো। এ অবস্থায় আশপাশে দোকানপাট না থাকায় বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। গরু রেখে বেশিদূর যাওয়াও তাদের জন্য ঝুঁকি। মঙ্গলবার দুপুরে অঝোর বৃষ্টিতে অনেক ব্যবসায়ীকে ভিজতে দেখা গেছে। কবির হোসেন নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘আগের রাতে (সোমবার) গরুর সঙ্গে আমরাও বৃষ্টিতে ভিজেছি। এখন বৃষ্টিতে ভেজা মানেই জ্বর আসতে পারে, ঠান্ডা লাগতে পারে। সে কারণে চিন্তাই আছি।’

আরেক ব্যবসায়ী আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে ভোগান্তি অনেক বেড়েছে। আগামী কয়দিন কী হয় আল্লাহ জানেন। যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে, তাতে ওপরের শেড কিংবা ত্রিপল কোনও কাজে আসছে না। গরুও ভিজছে, মানুষও ভিজছে। এভাবে চলতে থাকলে গরুর দাম যে পড়ে যাবে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।’

https://dailysangram.info/post/528631