২৬ জুন ২০২৩, সোমবার, ১২:৩০

২০ জেলার শতাধিক স্থান ঈদযাত্রায় যানজটপ্রবণ

এবারের ঈদযাত্রায় দেশের ২০টি জেলার সড়ক-মহাসড়কের শতাধিক স্থান যানজটপ্রবণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর বেশির ভাগই ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলোয় অবস্থিত। এসব স্পটে যানজট হলে তা বড় আকার ধারণ করতে পারে। আর ওই আশঙ্কা সত্য হলে ঢাকা থেকে বের হতেই লেগে যাবে অনেক বেশি সময়। দূরপাল্লার রুট বিবেচনায় উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোয়ও একই পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। যানজটের ওই আশঙ্কা থেকেই ২০ জেলায় যানজটপ্রবণ স্পটগুলোয় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য সম্প্রতি চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। ওই চিঠিতে সকাল ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত দুই শিফটে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য বলা হয়েছে। যদিও বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ আশা করছে, রোজার ঈদের মতো এই ঈদেও সড়কে যানজট হবে না। যানজট যাতে না হয়, সেজন্য আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এদিকে সড়কের যানজটের চেয়ে কাঙ্ক্ষিত যাত্রী না পাওয়ার আতঙ্কে আছেন পরিবহণ মালিক ও শ্রমিকরা। তারা জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি হয়েছে। আবহাওয়াও সহনীয় আছে। ঈদের তিন দিন বাকি আছে। তবুও সড়কপথে যাত্রীচাপ শুরু হয়নি। অন্যান্য বছরে এই সময়ে প্রচণ্ড যাত্রীচাপ থাকে। তারা বলেন, ঈদের আগে আজ শেষ কর্মদিবস। এরপর যাত্রীচাপ কিছুটা বাড়বে বলে তাদের ধারণা।
ঢাকা সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির কার্যকরী সভাপতি হাজী আবুল কালাম যুগান্তরকে বলেন, ঈদের তিন দিন আগেও যাত্রী না থাকায় মালিক ও শ্রমিকরা হতাশ। অন্যান্য বছর ঈদের কয়েকদিন আগেই পরিবারের সদস্যদের গ্রামে পাঠিয়ে দেওয়া হতো। চাকরিজীবীরা শেষ সময়ে বাড়ি যেতেন। এবার সেই দৃশ্যপট নেই। আমার পরিবহণ ব্যবসার ৪০-৪১ বছরে এমন দৃশ্য দেখিনি।

এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, সম্ভবত মানুষের হাতে টাকার প্রবাহ নেই। আর্থিক মন্দার কারণে মানুষ যাতায়াত কমিয়ে দিয়েছেন। সরকারি অফিস ও গার্মেন্ট ছুটির পর যাত্রী কিছুটা বাড়তে পারে বলে মনে করেন তিনি।

জানা যায়, গত রোজার ঈদে যেসব স্থানে ছোটখাটো যানজট হয়েছে, এবার সেগুলোকেও যানজটপ্রবণ হিসাবে চিহ্নিত করেছে বিআরটিএ। যে ২০টি জেলার শতাধিক স্থানে যানজট হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে, সেই জেলাগুলো হলো ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রংপুর, গাইবান্ধা, ময়মনসিংহ, হবিগঞ্জ, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জ।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ঈদুল আজহায় সড়কের পাশে পশুর হাট বসানো হয়। পশুবাহী গাড়ি চলাচলের কারণে সড়কে গাড়ির চাপও বেশি থাকে। এসব বিবেচনায়ও এ জেলাগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে।

ঢাকা জেলার যেসব স্থানে যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের ঢাকার অংশ। ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চলে যাওয়ার রুটে বাইপাইল, নতুন ও পুরাতন ইপিজেড, শ্রীপুর, চন্দ্রা ও নবীনগর। গাজীপুরের মধ্যে রয়েছে স্টেশন রোড, জয়দেবপুর চৌরাস্তা, চান্দিনা, বাঘেরবাজার, ভবানীপুর বাজার, হোতাপাড়া, ভোগড়া বাইপাস ও জয়দেবপুর চৌরাস্তা।

নারায়ণগঞ্জ দিয়ে সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের গাড়ি যাতায়াত করে থাকে। এ জেলার সাইনবোর্ড, শিমরাইল মোড়, কাঁচপুর মোড়, মদনপুর, মেঘনা টোল প্লাজা, কাচপুর মোড় থেকে যাত্রামুড়া ব্রিজ, কাঞ্চন ব্রিজ ও ভুলতা গাউছিয়া মোড়েও যানজট তৈরি হতে পারে। এছাড়াও টাঙ্গাইলের গোড়াই ফ্লাইওভার ব্রিজের পূর্ব ও পশ্চিম পার্শ্ব, পাকুলা, এলেঙ্গা ও বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব পার্শ্ব এলাকাও যানজটপ্রবণ।
দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের ঢাকা থেকে বের হওয়ার পথ এবং এক্সপ্রেসওয়ে ও পদ্মা সেতুর টোলপ্লাজায় গাড়ির দীর্ঘ সারিতে পড়তে হতে পারে।

সড়কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের তৎপরতার ফলে এবার ঈদেও সড়কে যানজট হবে না বলে আশা করছেন বিআরটিএ-এর চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার। তিনি যুগান্তরকে বলেন, যেসব স্থানে যানজট হতে পারে, তা চিহ্নিত করে আগেই ব্যবস্থা নিয়েছি। ঢাকায় প্রবেশ ও বের হওয়ার পথগুলোয় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। দেশের ১৩২ স্থানে সিসি ক্যামেরায় গাড়ির গতিবিধি ও যানজট পরিস্থিতি মনিটরিং করা হবে। এজন্য একটি কন্ট্রোল রুমও খোলা হয়েছে। এসব কারণে এবারও যাত্রীরা স্বাচ্ছন্দ্যে যেতে পারবেন বলে মনে করেন তিনি।

টঙ্গীতে এখনই যান চলাচলে ধীরগতি : ঢাকা থেকে বের হতেই টঙ্গীতে এখনই ধীরগতিতে যান চলাচল করছে। বিআরটি প্রকল্পের কাজ চলায় এবং সড়ক দখল করে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করায় সড়কের প্রশস্ততা কমে গেছে। এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে সড়কের অবস্থা ভালো নয়।

ঢাকা থেকে কুড়িগ্রামগামী একতা পরিবহণের যাত্রী নজরুল ইসলাম ভোগান্তির কথা জানিয়ে বলেন, মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ব্যারিকেড দিয়ে বিআরটি প্রকল্পের কাজ চলছে। টঙ্গী ব্রিজ থেকে চেরাগআলী পর্যন্ত মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে জরাজীর্ণ ও খানাখন্দে ভরা। এ মহাসড়ক দিয়ে ঈদযাত্রায় প্রতিবছরের মতো এবারও দীর্ঘ যানজটে নাকাল হতে হবে যাত্রীসাধারণকে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের পরিচালক মহিরুল ইসলাম খান বলেন, ঈদে ঘরমুখী মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে আমাদের চারটি টিম কাজ করছে। মহাসড়কের যেসব স্থানে ভাঙাচোরা ও খানাখন্দ রয়েছে, সেগুলো ভরাটের কাজ চলছে। তবে ঈদের পর মহাসড়কের নির্মাণকাজ স্থায়ীভাবে শুরু হবে। আপাতত মহাসড়কে গাড়ি চলাচলের জন্য সংস্কার করে দেওয়া হচ্ছে। মহাসড়কে গাড়ির চাপ খুব বেশি। তাই আমরা আমাদের রোলার, মালামালবাহী গাড়ি ও ভারী যন্ত্রাংশ মহাসড়কে রাখতে পারছি না। বাধ্য হয়েই আমাদের কাজ ধীরে ধীরে করতে হচ্ছে। এছাড়াও টঙ্গীর কলেজগেট থেকে উত্তরা পর্যন্ত সাড়ে ৪ কিলোমিটার উড়াল সড়ক ইতোমধ্যে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। ঈদের আগে আরও একটি লেন খুলে দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ট্রাফিক ইনস্পেকটর (টঙ্গী জোন) মো. মমিন আলী বলেন, বিআরটি প্রকল্পের সংস্কার কাজ চলমান থাকায় মহাসড়কে যানজট না থাকলেও যান চলাচলে ধীরগতি লক্ষ করা গেছে। তবে পোশাক কারখানাগুলো ছুটি হলে রাস্তায় গাড়ির চাপ বাড়বে। তারপরও আমরা চেষ্টা করব যাতে ঈদে ঘরমুখী মানুষের কোনো ভোগান্তি না হয়।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/690111