২৬ জুন ২০২৩, সোমবার, ১২:২৬

চামড়ার বাজারে ফের বিপর্যয়ের আশঙ্কা

রাজধানীতে কুরবানির গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুটে মাত্র ৩ টাকা বাড়ানো হয়েছে। আর ঢাকার বাইরে বেড়েছে ৪-৫ টাকা। তবে খাসি ও ছাগলের চামড়ার দাম বাড়ানো হয়নি। রোববার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে কুরবানির পশুর চামড়ার এই মূল্য ঘোষণা করা হয়। খুব বেশি মূল্যবৃদ্ধি না পাওয়ায় ফের চামড়ার বাজারে বিপর্যয়ের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। গত বছরও উপযুক্ত মূল্য না পেয়ে অনেক কুরবানিদাতা ও মৌসুমি ব্যবসায়ী পশুর চামড়া নদী ও ড্রেনে ফেলে দিয়েছেন। কেউ কেউ মাটিতে পুঁতে ফেলেন। একই আশঙ্কা এবারও থাকছে। এদিকে নগদ অর্থ সংকটের কারণেও চামড়ার বাণিজ্যে বিপর্যয়ের আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন চামড়ার আড়তদার মালিক সমিতি বাংলাদেশ হাই অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব টিপু সুলতান। তিনি যুগান্তরকে বলেন, গত বছরের বকেয়া ১২০ কোটি টাকা ঈদের আগে ট্যানারির মালিকরা পরিশোধে ব্যর্থ হলে এমনটি ঘটবে। কারণ বাজারে সংকট থাকবে নগদ অর্থের।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, এবার কুরবানি ঈদে ১ কোটি ২৫ লাখ পিস পশুর চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি মোট চাহিদার ৫০ শতাংশ। ফলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বেঁধে দেওয়া দামেই এ বছর বেচাকেনা হবে।

কুরবানির পশুর চামড়ার মূল্য নির্ধারণের জন্য রোববার ট্যানারি মালিকদের সঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বৈঠক করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। পরে ব্রিফিংয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, চামড়ার রফতানি এক বিলিয়ন ডলারের বেশি হচ্ছে। এটি ধরে রাখতে হলে সঠিকভাবে চামড়া ছাড়ানো, লবণ মেশানো ও সংরক্ষণ সম্পর্কে ধারণা থাকা দরকার। এজন্য ব্যাপক প্রচারণার কাজ চলছে। চামড়ার হাটগুলোর কাছে যেন লবণ পাওয়া যায় সেটি নিশ্চিত করা হবে।

কারসাজি হলেই রফতানির ঘোষণা : ব্রিফিংয়ে উঠে আসে ট্যানারি মালিকরা প্রতিবছর ঈদের দিন না কেনার একটি পরিকল্পিত বার্তা ছড়িয়ে চামড়ার মূল্য ফেলে দেন। এটি এক ধরনের কারসাজি। এ বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, কারসাজি বা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ট্যানারির মালিকরা কুরবানির পশুর চামড়ার মূল্য ফেলে দিলে ওয়েট ব্ল– চামড়া রফতানির ঘোষণা দেওয়া হবে। এবার চামড়ার বাজার নিয়ে ট্যানারি মালিকদের কোনো ধরনের কারসাজি মেনে নেওয়া হবে না। যদি প্রমাণ হয়, ট্যানারি মালিকরা পরিকল্পিতভাবে মূল্য ফেলানোর মতো কর্মকাণ্ডে জড়িত হলে আমি কাঁচা চামড়া রফতানির দুয়ার খুলে দেব।

মূল্য নির্ধারণ : গত বছরের তুলনায় এবার কুরবানির পশুর চামড়ার মূল্য বাড়ানো হয়েছে ৬ শতাংশ। ঢাকায় গরুর চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০-৫৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪৫-৪৮ টাকা। গত বছর ঢাকার গরুর চামড়ার দাম ৪৭-৫২ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪০-৪৪ টাকা ছিল। এছাড়া এ বছর খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুটের মূল্য ১৮-২০ টাকা এবং বকরির মূল্য ১২-১৪ টাকা রাখা হয়েছে। এ মূল্য গত বছরও ছিল। নির্ধারিত মূল্যে চামড়া বিক্রি নিশ্চিত করা প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা মনিটরিং সেল গঠন করেছি। বিষয়টি তারা নজর রাখবেন।

সূত্রমতে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষকে প্রধান সমন্বয়ক করে কেন্দ্রীয় যৌথ সমন্বয়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, বরিশাল, রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের জন্য পৃথক মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। এসব কমিটি চামড়ার সংরক্ষণ ও ক্রয়-বিক্রয়সহ সার্বিক ব্যবস্থাপনার বিষয়ে বিভাগীয় কমিশনারদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবে।

অবৈধ লবণ মজুতকারীদের বিরুদ্ধে শিগগিরই অভিযান : কুরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষণের অন্যতম উপাদান হচ্ছে লবণ। কিন্তু প্রতিবছরই কুরবানি ঈদের কয়েকদিন আগে লবণের মূল্য একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী বাড়িয়ে দেন। এ বছরও একই ঘটনা ঘটছে। বর্তমানে এক বস্তা (৭৪ কেজি) লবণের মূল্য ১৩০০ টাকা। কয়েকদিন আগেও ছিল ১১০০ টাকা। লবণের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, লবণের মূল্য অযৌক্তিকভাবে বাড়ানো হয়েছে। এ বিষয়ে আমি শিল্প মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলব। বর্তমানে অনেক লবণ আছে। অহেতুক মূল্য কেন বাড়বে সেটি খতিয়ে দেখা হবে। ধর্মীয় সুযোগ নিয়ে অসাধু ব্যবসা করতে দেওয়া হবে না। শিগগিরই অবৈধ লবণ মজুতকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হবে।

লবণের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ হাই অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব টিপু সুলতান যুগান্তরকে বলেন, লবণের মূল্য প্রতি বস্তায় অস্বাভাবিক বেড়েছে। এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অবশ্যই হস্তক্ষেপ করতে হবে।

সূত্রমতে, লবণের বাজার তদারকি করতে একটি কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল সেল খোলা হয়েছে। জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে এ সেলের কার্যক্রম থাকবে। কন্ট্রোল সেলের প্রধান হলেন-বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শেখ রফিকুল ইসলাম। এই সেল থেকে সার্বক্ষণিক কুরবানির পশুর চামড়া কেনাবেচা ও লবণ মেশানো, লবণের বাজারসহ সবকিছু পর্যবেক্ষণ করা হবে। ঈদের তিন থেকে চার দিন পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলবে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/690104