২৬ জুন ২০২৩, সোমবার, ১২:২২

জিডিপি, বাজেট এবং মুদ্রানীতি

ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ

দেশের জিডিপির আকার বা পরিমাণ ক্রমে বাড়ছে। একই সাথে বছর থেকে বছরে এর প্রবৃদ্ধির হারও ছিল মোটামুটি স্থিতিশীল বা ঊর্ধ্বগামী। চলতি অর্থবছরে জিডিপির প্রকৃত প্রবৃদ্ধি ৬-এর সামান্য উপরে, অর্থাৎ ১১ বছরের মধ্যে প্রথম নিম্নগামী। এর বিপরীতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭.৫ ধরা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৯-১০ এর মধ্যে থাকলেও যা বিগত ১০ বছরে সর্বোচ্চ। আসন্ন ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা ৬.২-এ ঘাড় ধরে নামানোর ইচ্ছা প্রকাশ পেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর সদ্য ঘোষিত মুদ্রানীতিতে তেমন প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। এসব প্রাক্কলন, পরিকল্পনা ও প্রত্যয় অর্থনীতির জন্য নিঃসন্দেহে স্বস্তি বা প্রশান্তির বিষয়। কিন্তু বাস্তবে এর প্রভাব দৃশ্যমান না হলে জিডিপির প্রাক্কলন বা হিসাবায়ন নিয়ে এবং খাতওয়ারি অংশায়ন ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন উঠাটাও অস্বাভাবিক নয়। একটি উদাহরণ দিই। যেমন- জিডিপিতে কৃষির উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। কৃষি খাতে গত ১০-১২ বছর ধরে তেমন বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়নি, যা আগে হয়েছে। গত সাত-আট বছর দেশের অর্থনীতির জন্য প্রকৃতি ছিল অনেকটা অনুকূল। এমনকি করোনার সময় কৃষক খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, ফলে জিডিপিতে কৃষির অবদান অব্যাহত রয়েছে বা বেড়েছে। নিজস্ব সক্ষমতায় কৃষি জিডিপিতে অবদান রেখে চললেও গুরুত্ব বিবেচনায় কৃষির সমস্যা মোকাবেলা বা সুরক্ষার ব্যাপারে বাজেটে সেভাবে মনোযোগ বা বরাদ্দ বাড়ছে না। জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় অঞ্চলে বেড়িবাঁধ ভেঙে, হাওরাঞ্চলে ভঙ্গুর বাঁধ ভেঙে, সীমান্ত নদী বা পাহাড়ি ঢলে হঠাৎ বন্যায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলে উঠতি ফসল অসম্ভব ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে নিরাপদ থাকার ব্যাপারে বাজেটে বরাদ্দ এবং সে বরাদ্দ কার্যকর বাস্তবায়নের সুফল মিলছে না, হাওর কিংবা উপকূলীয় বেড়িবাঁধ ভেঙে লাখ লাখ একর জমি তলিয়ে যাওয়া এবং ফল-ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে কৃষিমন্ত্রী বলেছেন, কৃষিতে ভর্তুকি বাড়বে। এটি নতুন কোনো কথা নয়। এ ভর্তুকি পরিশোধ, প্রদান ও আসল প্রাপকের কাছে পৌঁছানোটা নি-িদ্র নিশ্চিত করা যায়নি। মাঠ থেকে কথা উঠে আসছে, ভর্তুকি, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী এমনকি প্রণোদনার অর্থ ক্ষুদ্র মাঝারি কৃষিখামারিদের কাছে তেমন পৌঁছেনি। কৃষক নিজস্ব বিদ্যাবুদ্ধি দিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। অর্থাভাবে তারা মৎস্যচাষ, পশুপালন, শস্য-সবজি সংরক্ষণ- অনেক কিছুতে করোনার কারণে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারছেন না, ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না, বন্যা প্লাবনে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ বা জমি উদ্ধারে অগ্রগতি নেই। জিডিপিতে কৃষির অবদান টেকসই করতে কার্যকর বিনিয়োগ প্রয়োজন।

মোট জিডিপির অর্থ হিসাব কষে লোকসংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে মোদ্দাকথায় মাথাপিছু আয়ের হিসাব হয়। সেটি এখন দুই হাজার ৪৭০ ডলার। প্রান্তিক চাষি, সাধারণ মানুষ, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত যারা করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত তাদের ভাগের ওই পরিমাণ অর্থ দেখানো হচ্ছে। অথচ জিডিপি বা উন্নয়নের সুফল সব জায়গায় সমানভাবে দৃশ্যগত হচ্ছে না, দলমত নির্বিশেষে সবার কাছে পৌঁছাচ্ছে না। এর ফলে কারো কারো অর্থ-বিত্ত, ধন-সম্পদ বেড়েছে ঠিকই, সবার হয়নি। কারো কারো মধ্যে অস্বাভাবিক আয়-ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়া অর্থকে ভাগ করে দেখানো হচ্ছে- সবার মাথাপিছু আয় বেড়েছে। আসলে সবার বাড়েনি। জিডিপির হিসাবায়নের মধ্যে, জিডিপিকে বড় করে দেখানোর মধ্যে এই প্রশ্নগুলো আসছে যে- জিডিপি, আয় – উন্নয়ন পরিসংখ্যানে আছে, বাস্তবে এর তেমন প্রতিফলন নেই। জিডিপির আকার দেখিয়ে রাষ্ট্রীয় ব্যয় বা বাজেটের আকারও ক্রমান্বয়ে বেড়েই যাচ্ছে। জিডিপি বৃদ্ধিকে কেউ অযৌক্তিক মনে করবেন না, যদি এটি সবার মধ্যে পরিব্যাপ্ত হয়, যদি প্রশ্ন না উঠে কোন খরচ কিভাবে বাড়িয়ে সম্পদ ও সেবা সৃষ্টির মাধ্যমে বা ব্যতিরেকে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ঘটছে।
গত কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে, বাজেট ঘাটতি বেশ বাড়ছে। করোনা এবং পূর্ব ইউরোপীয় যুদ্ধের অজুহাতে অর্থনীতির অসুস্থতার কারণে রেভিনিউ আয় কমে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবে এটি ঘটছে। আয় কমে গেলেও ব্যয়ের বাজেটের আকার বহাল তবিয়তে বড় থাকায় ঘাটতি বাড়ছে। তা মেটাতে কঠিন শর্তের ঋণ বাড়ছে। মেগা প্রকল্পে বড় ব্যয় ঠিকই করে যেতে হচ্ছে, উপায় নেই। অর্থনীতিতে এ ব্যয়ের উপযোগিতা বা রিটার্ন আসাটা বারবার বিলম্বিত হচ্ছে। সম্পদ ও সেবা সৃষ্টি না হয়েও এর বিপরীতে কৃচ্ছ্রতা, ব্যয় সঙ্কোচন, বড় ব্যয়ে ব্যয়সাশ্রয়ী না হওয়ায় ঋণের অর্থটাও জিডিপিতে হিসাবায়িত হচ্ছে কি না এ সংশয় তৈরি হচ্ছে। জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে ব্যাপক ভর্তুকি, ইতোমধ্যে ঘোষিত হয়েছে ২০৩৬ সাল পর্যন্ত বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করমুক্ত সুবিধা পাবে! বিনিয়োগে আকাশচুম্বী প্রণোদনা দিয়ে উৎপাদিত বিদ্যুৎ আজ সারপ্লাস এবং আমদানি করা জ্বালানির বিতরণ ব্যবহারে সমন্বয় সাধনে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কঠিন শর্তের আমদানি এবং উচ্চ সুবিধা ছাড় ও প্রণোদনায় উৎপাদিত অতিরিক্ত বিদ্যুতের হিসাব জিডিপি মোটাতাজাকরণে আদৌ কোনো ভূমিকা রাখছে কি না সেটির গণজ্ঞাপন সংশয় সন্দেহ নিরসনে সহায়ক হবে।

জিডিপির সঠিক হিসাবায়ন বা প্রক্ষেপণ ছাড়া বাজেট তৈরি করলে সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় বিপত্তি ঘটে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়- সম্পদ কমিটির সভায় ২০২১-২২ অর্থবছরে জিডিপির অংশ হিসেবে মোট ব্যয় দেখানো হয়েছিল ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ। সেখানে ভিত্তি বছর ধরা হয়েছিল ২০০৫-০৬। অথচ ২০২২-২৩-এর বাজেট জিডিপির অংশ হিসেবে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয় ১৫ দশমিক ৪ শতাংশ। সেখানে ভিত্তি বছর ধরা হয়েছিল ২০১৫-১৬ অর্থবছর। পাশাপাশি সদ্য দু’টি অর্থবছরের বাজেটে দুই ধরনের ভিত্তি বছরের মধ্যে জিডিপি প্রক্ষেপণের শুভঙ্করের ভূত আছে কি না সেটি স্পষ্ট করলে সংশয় কাটবে সবার।

জিডিপি হিসাবায়ন ও প্রক্ষেপণ প্রক্রিয়ায় হঠাৎ হঠাৎ পরিবর্তন করে অর্থনীতি তথা জিডিপিকে অনেকটা গরু মোটাতাজাকরণের মতো অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে বলে চিন্তা চৌবাচ্চা (থিঙ্ক ট্যাঙ্ক) থেকে শুরু করে অভিজ্ঞ-অনভিজ্ঞ সব মহলে। ধারণা জমছে, ভিত্তি বছরের হিসাবায়ন পদ্ধতি ভিন্নভাবে প্রক্ষেপণের মাধ্যমে বোঝানো হচ্ছে জিডিপির তুলনায় সরকারের পরিচালনা ব্যয় কমানো হচ্ছে, প্রকৃতপক্ষে কি তাই?

এ জন্য প্রয়োজন জিডিপিকে উল্লেখ করে যখন বাজেট প্রক্ষেপণ বা দেখানো হয় তখন যেন শাস্ত্রীয় অনুশাসন বা নিয়মের মাধ্যমে দেখানো হয়। এটি নিশ্চিত করতে হবে। নইলে প্রকৃত চিত্র পাওয়া যাবে না। এখানে আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা দরকার। এডিবি বা বিশ্বব্যাংক প্রায়ই সদস্য দেশের জিডিপির একটি প্রাক্কলন করে। এটিকে সদস্য দেশগুলো নিজেদের উন্নয়নের সার্টিফিকেশন তথা তৃপ্তি কিংবা হতাশার কারণ হিসেবে নেয়। ভালো করে যদি পরীক্ষা করে দেখা যায়, তাহলে দেখা যাবে-এডিবি বা বিশ্বব্যাংকের মতো বহুজাতিক সংস্থা সদস্য দেশের ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টকে সূত্র হিসেবে ব্যবহার করে। নিজে নিজে মনগড়াভাবে কিছু বলে না বলেই সদস্য দেশের ন্যাশনাল অ্যাকাউন্ট ইনফ্লেটেড হলে তাদের প্রাক্কলনও সঠিক হয় না। তাদের পূর্বাভাসে ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টের প্রতিফলন ঘটে। অনেক সময় সে কারণে তারা সেটি রিভাইজও করে থাকে। সুতরাং আমাদের তাকাতে হবে আমাদের দিকে। আমাদের হিসাবায়নটা ঠিক হচ্ছে কি না, সেটি দেখতে হবে।

এবার আসি প্রাক্কলিত বাজেট সম্পর্কে। গত দুই বছরে সবাই অভিমত প্রকাশ করেছিলেন, এবারও করছেন করোনাকালের বা করোনাবিধ্বস্ত অর্থনীতে থেকে উত্তরণের বাজেট বানানো হবে। করোনাকে কিভাবে মোকাবেলা করা হবে এবং সেটি করতে কী কী করা হবে সেই নীতিগত ব্যবস্থাপত্র বাজেটে রাখা দরকার। যেমন- করোনার জন্য স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ একটু বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে কিন্তু তার সঠিক বাস্তবায়ন হয়েছে কি না, সেদিকে নজর রাখতে হবে। বলা হচ্ছে, ব্যয় না বাড়ালে চলমান প্রকল্পগুলো সময়মতো শেষ করা যাবে না। এ যুক্তি ঠিক আছে। কিন্তু বাড়াতে তথ্যের বা অর্থের জোগান কিভাবে হবে, সে বিষয়টিও জনগণের কাছে পরিষ্কার করতে হবে। ঋণ করে ঘি খাওয়া বাস্তব অবস্থার পরিচায়ক নয়। মোটাদাগে ধার কর্জ করার অর্থ বিনিয়োগ করে সেই বিনিয়োগের আয় বা উপকার যত তাড়াতাড়ি সবার আয় উপার্জনের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে; জিডিপির সংখ্যাগত অবয়ব ততটা পুষ্টিকর অর্জন বলে বিবেচিত হবে। ধার কর্জের টাকা কিংবা নিজস্ব অভ্যন্তরীণ আহরিত রাজস্ব যদি উন্নয়নের নামে ব্যয়কালে বেহাত হয়ে যায় বা ক্ষরণ ঘটে তাহলে তো জিডিপির সংখ্যাগত স্ফীতি বা স্বাস্থ্যকে সুস্থ বলা যাবে না।

বাংলাদেশে এক বছরের বড় একটি বাজেট করে ব্যয় বাস্তবায়ন শুরু করা হয়, ওইদিকে রেভিনিউ আয় ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলোর থেকে পাওনা টাকা আদায়ের ব্যবস্থা না থাকায় ঘাটতি পূরণে প্রচুর ঋণ করতে হয়, এটি প্রমিতকরণে কী করণীয় সেটি নিয়মিত পর্যালোচনা না করে বিনা জিজ্ঞাসাবাদে জবাবদিহিহীনভাবে সম্পূরক বাজেটে তা অনুমোদিত হয়। আগের আয় ব্যয় দেখে বা তার ভিত্তিতে পরবর্তী বাজেট বানানোর সনাতন পথ-পদ্ধতি এড়িয়ে মাড়িয়ে যাওয়া হয়। সংশোধিত বাজেটে আয়-ব্যয়ের পরিমাণ কী দাঁড়িয়েছে তার ভিত্তিতে বাজেট বৃদ্ধি হওয়ার পরিবর্তে গত বছর মূল বাজেটের একটি জুতসই বৃদ্ধি ধরে পরবর্তী বাজেট হচ্ছে। অর্থাৎ বাস্তবায়নের বিষয়টি ভালো করে না নিয়ে, কেন হয়নি, কেন আসেনি, কেন ব্যবস্থা নেয়নি সেটি না দেখে ক্রমান্বয়ে বাজেট বাড়ালে তা কার্যকর হয় না। এ কারণে একটি ত্রিবার্ষিক পরিকল্পনা নেয়া দরকার।

করোনা-পরবর্তী বিধ্বস্ত অর্থনীতি এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে এক বছরের মেয়াদে বাজেট ঘোষণা ও বাস্তবায়ন তদারকযোগ্য ও খুব একটা সুফলপ্রদায়ী হবে না। এমনকি নির্বাচনমুখী ভোটার তোষণ বাজেটও অর্থবহ বা পুষ্টিকর প্রতিভাতকরণ কঠিন হবে।

বিগত দুই-তিন বছরে বিশেষ করে করোনা-উত্তরকালে এমনভাবে বাজেট প্রাক্কলন, প্রস্তাব ও পাস করা হয়েছে যে, মনে করা হয়েছে- করোনায় এ অর্থনীতিতে যেন কিছুই হয়নি। যেন এ অর্থনীতি খুব ভালো অবয়বে আছে। সব ঠিক আছে। চমৎকার চলছে অর্থনীতি। এ ধারণা প্রমাণ করতে করোনা-পূর্বকালের স্টাইলে ব্যয়ের বাজেট প্রক্ষেপণ অব্যাহত রয়েছে। আয় অনুযায়ী কৃচ্ছ্রতা সাধন, অপব্যয় অপচয় ও দুর্নীতি রোধের দৃষ্টিতে বাস্তবায়নের বিষয়টি বিবেচনায় না আনায় অসামঞ্জস্যতা, সমন্বয়হীনতা, সামগ্রিক বিশৃঙ্খলা কিংবা নানা ধরনের কথাবার্তা সৃষ্টি হওয়া, মানুষের মধ্যে আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। আশঙ্কা তৈরি হলে, আস্থা না বাড়লে উন্নয়ন টেকসই হতে আরো সময় লাগবে। সে সুবাদে অর্থনীতিতে সৃজিত রেজিলিয়েন্ট পাওয়ার হবে দুর্বল বা ক্ষতিগ্রন্ত। বিপুল ঋণ নেয়া হয়েছে, সেগুলো শোধ না করতে পারলে ধস নামতে পারে, এ ধারণাগুলো পরিষ্কার করা দরকার।

প্রকৃত প্রস্তাবে জিডিপি বাড়িয়ে দেখালে সবাই খরচের ব্যাপারে অনেক বেশি উদার হয়ে যায়। বিশ্ব পরিসরে দেখানো যায় এ অর্থনীতি খুব ভালো অবস্থায়। তখন দাতারা আরো বেশি ঋণ দিতে আগ্রহী হয়, যদি প্রকৃত অবস্থাকে না দেখানো হয় তাহলে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা দাতারা বিভ্রান্ত হন। সবচেয়ে বড় কথা হলো জনগণ। জনগণ দেখবে যে আমাদের অর্থনীতি বড় হচ্ছে। কাজেই সেখানে বেশি খরচ করলে অসুবিধা কী আছে, আমরা তো পাবই। কিন্তু যদি দেখা যায়, এ উন্নয়নের দ্বারা সক্ষমতা প্রসারিত হয়নি, রোগ প্রতিরোধের অবকাঠামোগত সুবিধা বাড়েনি, প্রতিষেধক প্রাপ্তির নিশ্চয়তা হয়নি, স্বাস্থ্যসেবা ও গুণগত শিক্ষালাভের সুযোগলাভ হয়নি, আমজনতা অকাল মৃত্যুকে জয় করতে পারেনি, তার যথেষ্ট পুষ্টির ব্যবস্থা হয়নি, তারা পরস্পর চিন্তার আদান-প্রদান করতে বা মানসম্মত শিক্ষায় শিক্ষিত না হতে পারার পরিবেশে হতাশা বাড়তে পারে।
লেখক : উন্নয়ন অর্থনীতির বিশ্লেষক