২৩ জুন ২০২৩, শুক্রবার, ৯:৩২

পরিচালক পদে টানা ১২ বছর থাকার সুযোগ

ব্যাংকিং খাতে সুশাসন ও গতিশীলতা বাধাগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা

কোনো ব্যক্তি একই প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ দিন একই পদে থাকলে ওই প্রতিষ্ঠানের সুশাসন নিশ্চিত হয় না। আসে না কোনো গতিশীলতা। জনস্বার্থের বিপরীতে নিজেদের কায়েমী স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করে। এটা ব্যাংকের জন্যও ঘটবে। ব্যাংক পরিচালকদের দীর্ঘ ১২ বছর পরিচাপলনা পর্ষদে থাকার সুযোগ ব্যাংকের সুশাসনের ঘাটতি দেখা দেবে। একই সাথে ব্যাংকিং কাজে গতিশীলতা আসবে না। এটা ব্যাংকিং খাতের জন্য অসনি সঙ্কেত। বিদ্যমান সমস্যাগুলো জটিল করবে।

কথাগুলো বলেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ব্যাংকের পরিচালকদের দীর্ঘ ১২ বছর থাকার সুযোগ মোটেও যুক্তিসঙ্গত হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এ গভর্নর বলেন, ২০০৮ সাল পর্যন্ত ব্যাংক পরিচালকরা তিন বছর করে দুই মেয়াদে ছয় বছর থাকার সুযোগ দেয়া হয়েছিল। এতেই সামাল দেয়া অনেক সময় কষ্ট হতো। সেই ছয় বছর থেকে বাড়িয়ে প্রথমে ৯ বছর করা হয়। এখন আবার ৯ বছর থেকে আরো তিন বছর বাড়িয়ে ১২ বছর করা হলো। এটা ব্যাংকিং খাতের জন্য মোটেও সুখকর হবে না। ব্যাংকের যারা কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকবেন বিশেষ করে ডিএমডিরা তারা স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে পারবে না। আবার ব্যাংকের নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টিতেও বাধাগ্রস্ত হবে। ফলে একজন পরিচালক দীর্ঘ ১২ বছর থাকার পর যে শূন্যতা সৃষ্টি হবে তা পূরণ করা কষ্টকর হবে।

প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার ব্যাংকে পরিচালক পদে টানা ১২ বছর থাকার সুযোগ দিয়ে ব্যাংক কোম্পানি আইনের সংশোধনী জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। সংসদে উপস্থাপিত বিলে ৯ বছরের প্রস্তাব থাকলেও শেষ পর্যন্ত ১২ বছর নির্ধারণ করে আইনটি পাস হয়। কোনো ব্যক্তি বা গ্রুপের স্বার্থসংশ্লিষ্ট এক প্রতিষ্ঠান খেলাপি হলে অন্য প্রতিষ্ঠানকে খেলাপি দেখানো যাবে না। তাদের ঋণ পেতেও কোনো সমস্যা হবে না।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, এমনিতেই নানা ছলে বলে ব্যাংক পরিচালক ব্যাংকের অর্থ নিজেদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নিয়ে থাকে। বড় কয়েকটি ব্যবসায়ী গ্রুপ ঋণ নিয়ে আর ফেরত দিচ্ছেন না। এমনকি কয়েকটি ব্যাংকের সঙ্কটের সময় ওই সব ঋণের মুনাফা পরিশোধ করতে ব্যাংকের এমডিদের অনুরোধও রাখেননি ওইসব ব্যাংক পরিচালকরা। এখন টানা ১২ বছর সুযোগ দেয়ায় তারা ব্যাংকে আরো জটিলতা সৃষ্টি হবে। ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, ব্যাংকের পরিচালকরা বা কোনো ব্যবসায়ী গ্রুপ ঋণ নিয়ে যাতে ফেরত দেন তা আটকানোর জন্য বিভিন্ন আইন ছিল। এর মধ্যে একটি ছিল কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ঋণ নিলে আর ওই তাদের কোনো একটি প্রতিষ্ঠান ফেরত না দিলে অন্য প্রতিষ্ঠান নতুন করে ঋণ পেত না।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/757552