২৩ জুন ২০২৩, শুক্রবার, ৯:১৫

ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক-মহাসড়কে ঈদযাত্রা

দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলো এত বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে যে, পবিত্র ঈদুল আযহার প্রাক্কালে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সংবাদপত্রসহ সকল গণমাধ্যমও মানুষের বাড়ি ফেরা নিয়ে ভীতি ও আশংকা প্রকাশ না করে পারছে না। ‘বেহাল সড়ক, বাড়ছে দুর্ঘটনা’, ‘ক্ষতবিক্ষত সড়ক-মহাসড়ক’ এবং ‘ঈদযাত্রা ভয় জাগাচ্ছে’ ধরনের শিরোনাম দেখা যাচ্ছে প্রায় সকল দৈনিকে। বেসরকারি টেলিভিশনগুলোর সচিত্র রিপোর্টেও সড়ক-মহাসড়কের বিপদজনক অবস্থাই উঠে আসছে। এক কথায় বলা যায়, ঈদের মাত্র কয়েকদিন বাকি থাকলেও দেশের কোনো অঞ্চলের সড়ক-মহাসড়কই এখনো নিরাপদ, ঝুঁকিমুক্ত এবং চলাচলের উপযোগী হতে পারেনি।

বাস্তবে স্বল্প হলেও বিগত কিছুদিনের বৃষ্টি এবং যানবাহনের চাপের পাশাপাশি দায়সারাভাবে তৈরি করা সড়কের ইট-বালু-সিমেন্ট সরে গিয়ে এবড়ো-থেবড়ো হয়ে পড়ায় প্রায় সকল এলাকার সড়ক-মহাসড়কই বহুস্থানে ভেঙে পড়েছে। সৃষ্টি হয়েছে শত শত ছোট-বড় গর্ত ও খানা-খন্দকের। ফলে কোনো গন্তব্যেই নির্ধারিত সময়ে পৌঁছানো যাচ্ছে না। কোনো কোনো এলাকায় কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত বেশি সময় লাগছে। রংপুর-বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলমুখী ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের আবদুল্লাহপুর থেকে চন্দ্রা পর্যন্ত এলাকায় ভোগান্তি চলছে বহুদিন ধরে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভুলতা ও ওসমানিনগরে হচ্ছে প্রচন্ড ভোগান্তি।

অর্থাৎ দেশের কোনো এলাকার সড়ক-মহসড়কই স্বাভাবিক এবং নিরাপদে চলাচলের উপযোগী হতে পারেনি। এমন অবস্থার কারণ সম্পর্কে গণমাধ্যমের খবরে জানানো হয়েছে, সারা বছর নীরবে কাটিয়ে দেয়ার পর ঠিক ঈদের প্রাক্কালে এসেই সড়ক ও জনপথ অধিদফতরসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো তোড়জোড় শুরু করে। শুরু হয় কোনোভাবে জোড়াতালি দিয়ে সংস্কারের নামে মেরামতের কর্মকান্ড। অথচ প্রতি বছরের বার্ষিক বাজেটেই সড়ক-মহাসড়কের সংস্কার এবং নতুন নতুন সড়ক নির্মাণের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থের বরাদ্দ দেয়া হয়। অন্যদিকে কোনো কোনো এলাকায় ঠিকাদার নিয়োগের কাজেই মাসের পর মাস নষ্ট করেন কর্তা ব্যক্তিরা। বলা হচ্ছে, যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও আর্থিক সঙ্গতির মতো জরুরি বিষয়গুলোর চাইতে ঠিকাদারদের রাজনৈতিক পরিচিতিকেই অনেক বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। সে কারণে কাজও পেয়ে যায় ক্ষমতাসীন দলের ঠিকাদাররা। ক্ষমতাসীনদের নেকনজরে থাকায় কাজের নামে চুরি করা ও ফাঁকি দেয়া ছাড়া অন্য কিছু সাধারণত করে না তারা। এজন্যই অর্থবছরের একেবারে শেষ মুহূর্তে এসে তাদের দৌড়-ঝাঁপ শুরু হয়ে যায়।

সর্বশেষ উপলক্ষেও ব্যতিক্রম ঘটেনি বলেই এবার পবিত্র ঈদুল আযহার প্রাক্কালে একদিকে সড়ক-মহাসড়ক নিয়ে লেজেগোবরে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, অন্যদিকে জীবনের প্রচন্ড ঝুঁকিতে পড়তে চলেছে সাধারণ মানুষÑ যারা ঈদ উপলক্ষে আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার এবং আনন্দ করার জন্য রাজধানীসহ নানাস্থানের কর্মস্থল ছেড়ে যার যার বাড়িতে ফিরে যায়। এবারও যাচ্ছে মানুষ। কিন্তু এবারও লাখ লাখ নারী-শিশু ও মানুষের ঈদ যাত্রা অত্যন্ত ভয়ংকরই হতে চলেছে।

বলার অপেক্ষা রাখে না, সব মিলিয়েই পরিস্থিতি বিপদজনক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও কর্তাব্যক্তিদের মধ্যে ইতিবাচক বা জনকল্যাণমুখী পরিবর্তনের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এবারও ঈদের ঠিক প্রাক্কালে এসে কেবলই দায়সারা মেরামতের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন তারা। সে মেরামতও এমনভাবেই করা হচ্ছে, যাতে অদূর ভবিষ্যতেই আবারও ‘মেরামত’ করার সুযোগ পাওয়া যায়! কথাটাকে হাল্কাভাবে নেয়ার সুযোগ নেই। কারণ, সকল ধরনের গবেষণা ও পর্যালোচনায় বারবার প্রমাণিত হয়েছে, সওজসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ঠিকাদারদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকে। পুরো প্রক্রিয়ায় সঙ্গে জড়িত থাকেন মন্ত্রী-এমপি এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতারাও। এখানে তাই ‘এক শ্রেণির’ ঠিকাদার বা ‘এক শ্রেণির’ কর্মকর্তা বলে কাউকে ছাড় দেয়া যায় না। এজন্যই কোনো কাজই ১০০ ভাগ দূরে থাকুক, ৫০/৬০ ভাগও নির্মাণকাজের নীতিমালা অনুযায়ী সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা হয় না। কিন্তু দোষ ও অপরাধগুলো ধরার এবং দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কেউ নেই। কারণ, এসব যাদের দায়িত্ব তারা নিজেরাও দুুর্নীতির পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন বলে অভিযোগে জানা গেছে।

আমরা মনে করি, দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোর ব্যাপারে সরকারের উচিত জরুরিভিত্তিতে তৎপর হয়ে ওঠা। পবিত্র ঈদুল আযহা পাড়ি দেয়ার জন্য এই মুহূর্তে মেরামত ছাড়া যেহেতু উপায় নেই সেহেতু মেরামত করা যেতে পারে কিন্তু সেটা করতে হবে দ্রুত গতিতে। সময় স্বল্পতার ও ব্যস্ততার আড়াল নিয়ে এমনভাবে ফাঁকি দেয়া চলবে না, যার ফলে দু’-চারদিনের বৃষ্টিতে কিংবা বেশি যানবাহনের চাপে পুরো মহাসড়ক আবারও অচল হয়ে পড়বে। সরকারকে একই সঙ্গে যানবাহন চলাচলের ওপর কঠোর নজরদারির ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে দুর্ঘটনা এবং প্রাণহানি কম ঘটে। আমরা আশা করতে চাই, এবারের ঈদুল আযহা উপলক্ষে মানুষের যাতায়াতকে নিরাপদ করার ব্যাপারে সবদিক থেকেই সুষ্ঠু পদক্ষেপ নেয়া হবে।

https://dailysangram.info/post/528171