১৪ জুন ২০২৩, বুধবার, ১১:০১

কোরবানির গরুর দাম ১৫ শতাংশ বেড়েছে

গো-খাদ্যের দাম বাড়ায় লালন-পালন খরচ বেড়েছে। এ কারণে কোরবানির পশুর দাম ও বাজার পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কায় আছেন খামারিরা। কোনো কোনো খামারি খামার থেকেই এ বছর ৫৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন কোরবানির পশু, যা গত বছর ছিল ৪৮০ টাকা। সে হিসাবে দাম বেড়েছে গড়ে ১৫ শতাংশ।

জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্য মতে, ঈদকে সামনে রেখে নরসিংদীর ছয় উপজেলায় ছোট-বড় সাত হাজার ৮৮৭ জন খামারি ৮৭ হাজার ৮৮৮টি কোরবানির পশু মোটাতাজা করেছে। তবে নরসিংদীতে চাহিদা রয়েছে প্রায় ৭৫ হাজার পশুর। চাহিদার চেয়ে ১৩ হাজার বেশি পশু প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে ষাঁড় ২৯ হাজার ৪১৪টি, বলদ ছয় হাজার ৫০২টি, গাভি পাঁচ হাজার ২২৬টি, মহিষ এক হাজার ৮৭৫টি, ছাগল ৩৩ হাজার ৪০৫টি ও ভেড়া ১১ হাজার ৪০৬টি ও অন্যান্য প্রায় দুই হাজার।

এর বাইরেও পারিবারিকভাবে আনুমানিক কয়েক হাজার কৃষক এক থেকে দুটি করে গরু-ছাগল মোটাতাজা করেছেন।

সম্প্রতি সরেজমিনে বিভিন্ন খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আসন্ন কোরবানির ঈদকে ঘিরে প্রতিবছরের মতো এবারও গরু-মহিষ, ছাগল-ভেড়াসহ কোরবানির পশু মোটাতাজাকরণ করা হচ্ছে। ঈদ ঘনিয়ে আসায় পশুর যত্নে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক ও গরুর খামারিরা। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে অনেকে ছয় থেকে ১১ মাস আগে দেশের পশুর বিভিন্ন হাট ঘুরে গরু, মহিষ ও ছাগল কিনে লালন-পালন শুরু করেন।

খামারিদের পাশাপাশি লাভের আশায় পারিবারিকভাবেও অনেক কৃষক গরু, ছাগল ও মহিষ মোটাতাজা করছেন। বিশেষ করে গরু মোটাতাজা করা হয়েছে কাঁচা ঘাস, ভুট্টা, খৈল, খড়, চালের খুদ, ছোলা, সয়াবিন ও ভুসি খাইয়ে। মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক ও পশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কোনো ওষুধ তাঁরা গরুকে খাওয়ান না।

শিবপুর উপজেলার বাহেরদিয়া গ্রামের খামারি মোহাম্মদ আলী পাঠান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত বছর ৩০টি গরু মোটাতাজা করেছি। নিজে তিন বিঘা জমিতে ঘাস ও দুই বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি, গরুকে খাওয়ানোর জন্য।

তার পরও শ্রমিকের খরচ ও গো-খাদ্যের খরচ দিয়ে এখন আর লাভবান হওয়া যায় না। তাই আমার খামারে এ বছর ২৫টি গরু মোটাতাজা করা হয়েছে। গত বছর ভুসির বস্তা ছিল এক হাজার ৩০০ টাকা। এ বছর কিনেছি দুই হাজার ৬৯ টাকায়। যদিও এক সপ্তাহ ধরে দাম কমে এক হাজার ৭০০ টাকা হয়েছে। যেহেতু আমরা একসঙ্গে অনেক খাবার কিনে ফেলি, সেহেতু আমাদের খরচ বাড়বে। দিন দিন পশুখাদ্যের দাম বাড়ার কারণে গরু পালনে খরচ বেড়েছে।’

নরসিংদী সদরের ভিরিন্দা গ্রামের হাম্বা ফার্মের মালিক ইছাদ চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা এ বছর ৩০০টি গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করেছি। এখানকার গরুকে কাঁচা ঘাস ও দানাদার খাবার খাইয়ে লালন-পালন করেছি। আমাদের ফার্মের গরু অনলাইন ও হাটে নিয়ে বিক্রি করা হয়। এরই মধ্যে ১৫০টির বেশি গরু অনলাইনে বিক্রি করেছি। ক্রেতারা অনলাইনে গরু পছন্দ করে সরাসরি এসে অগ্রিম করে যাচ্ছে। ঈদের দু-এক দিন আগে ডেলিভারি করা হবে। এ বছর ৫৫০ টাকা কেজি দরে গরু ওজন দিয়ে বিক্রি করেছি, যা গত বছর ছিল ৪৮০ টাকা কেজি। এখানে ২০০ কেজি থেকে ৭০০ কেজি ওজনের গরু আছে।’

তিনি জানান, হাজারো মানুষের ভিড় ঠেলে হাটে গিয়ে কোরবানির জন্য গরু কেনা ঝামেলার। এই ঝামেলা এড়াতে অনেকে খামার থেকে সরাসরি গরু কিনতে আগ্রহী হচ্ছেন। তবে দেশের বাইরের গরু যাতে না আসতে পারে সেটি নিশ্চিত করা গেলে খামারিরা লাভবান হবেন।

নরসিংদী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নার্গিস খানম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পশু মোটাতাজাকরণে ক্ষতিকর ওষুধ ব্যবহার বন্ধে খামারগুলোতে নিয়মিত মনিটর করা হচ্ছে। তা ছাড়া খামারিদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ওষুধ ব্যবহার না করে দেশি খাবার খাইয়ে পশু মোটাতাজা করার জন্য কৃষক ও খামারিদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’

https://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2023/06/14/1289679