১৪ জুন ২০২৩, বুধবার, ১০:৪৮

তালাক, শিশুমৃত্যু বেড়েছে : গড় আয়ুতে জোয়ার-ভাটা

দেশে বর্তমানে তালাক ও শিশু মৃত্যুর হার গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। আর বছরের ব্যবধানে তালাকের হার বেড়েছে দ্বিগুণ। বর্তমানে গড় আয়ু ৭২.৪ বছর হলেও এই গড় আয়ুতে জোয়ার-ভাটা চলছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক্স ২০২২ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। বিবিএসের তথ্য বলছে, তালাকের হার ২০১৮ সালে দশমিক ৯ শতাংশ থেকে ২০২২ সালে ১.৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। আর শিশু মৃত্যুহার ২০১৮ সালে ১.৭ শতাংশ থেকে ২০২২ সালে ১.৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। গড় আয়ু ২০২০ সালে ৭২.৮ বছর থেকে ২০২২ সালে ৭২.৪ বছরে এসেছে। তবে ২০২১ সালে করোনাকালীন সময়ে ছিল ৭২.৩ বছর। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, অর্থনীতিতে সঙ্কট নেই। তবে অর্থনীতি চাপের মধ্যে আছে। পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, দেশের মেধা পাচার ব্যাপক হচ্ছে। পুঁজি পাচার থেকেও মেধা পাচার বেশি ভয়ঙ্কর হবে। মেধা চলে গেলে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ ও স্মার্ট বাংলাদেশ কীভাবে করবো?

রাজধানীর আগারগাঁওস্থ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ভবনের অডিটোরিয়ামে গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ড. শামসুল আলম এবং পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (রুটিন দায়িত্ব) মহাপরিচালক পরিমল চন্দ্র বসু। আর প্রতিবেদন তুলে ধরেন প্রকল্প পরিচালক ও বিবিএস উপ-পরিচালক মো: আলমগীর হোসেন।

তালাকের হার বৃদ্ধি : প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে দেশে প্রতি হাজারে তালাকের হার দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৪ শতাংশ, যা আগের বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে ছিল শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ। আর ২০২০ সালে ছিল শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ, ২০১৯ সালে ১ শতাংশ এবং ২০১৮ সালে শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ। শহরের তুলনায় গ্রামে তালাকের হার বেশি। শহরে ২০২২ সালে দেশে প্রতি হাজারে তালাকের হার ১টি। এ সময়ে গ্রামে তালাকের হার ১ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০২১ সালে এই হার ছিল গ্রামে শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ এবং শহরে ছিল শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ।

শিশুর মৃত্যুর হার বৃদ্ধি : অন্য দিকে, ৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ শিশুর মৃত্যু হয়েছে ২০২২ সালে। এ সময়ে প্রতি হাজারে ১ থেকে ৪ বছর বয়সের শিশু মৃত্যু হার ১.৮ শতাংশ। যেখানে ২০২১ সালে ছিল ১.৬ শতাংশ। এর আগের তিন বছরে ২০১৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রতি বছরই এই মৃত্যু হার ছিল ১.৭ শতাংশ।

একই ভাবে, ২০২২ সালে প্রতি হাজার জীবিত জন্ম নেয়া শিশুর বিপরীতে ৩১ শিশু মারা গেছে। এর আগের তিন বছরে মারা গেয়েছিল ২৮ জন করে শিশু। তবে ২০১৮ সালে ২৯ জন শিশু মারা যায়। প্রতি হাজার জীবিত জন্ম নেয়া শিশুর বিপরীতে মৃত্যুর দিক থেকে এগিয়ে আছে পুরুষ শিশু। ২০২২ সালে প্রতি হাজারে ৩৩ জন পুরুষ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে নারী শিশুর মৃত্যু হয়েছে ২৯ জন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৫ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুর হার শহরের তুলনা গ্রামে বেশি। ২০২২ সালে শহরে যেখানে প্রতি হাজারে ২৯ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে, সেখানে গ্রামে মৃত্যু হয়েছে ৩২ জন শিশুর। তবে কমেছে মাতৃ মৃত্যুর হার কমেছে। ২০২২ সালে জীবিত জন্ম নেয়া শিশুর বিপরীতে প্রতি লাখে মাতৃ মৃত্যু হয়েছে ১৫৬ জনের, যা ২০২১ সালে ছিল ১৬৮ জন।

গড় আয়ু ৭২.৪ বছর : বিবিএস বলছে, ২০২২ সালে দেশে মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু ৭২.৪ বছর। এর আগের জরিপ, অর্থাৎ ২০২১ সালের জরিপ অনুযায়ী, দেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল ৭২.৩ বছর। এর আগের বছর, অর্থাৎ ২০২০ সালে ছিল ৭২.৮ বছর, ২০১৯ সালে ৭২.৬ বছর এবং ২০১৮ সালে ছিল ৭২.৩ বছর। সেই হিসাবে ২০২২ সালে দেশের মানুষের গড় প্রত্যাশিত আয়ু ২০১৯ ও ২০২০ সালের চেয়ে কম।

আর এখানে পুরুষের গড় আয়ু এখন ৭০.৮ বছর এবং নারীর গড় আয়ু ৭৪.২ বছর। পুরুষের গড় আয়ু ২০২০ সালে ছিল ৭১.২ বছর এবং ২০১৯ সালে ৭১.১ বছর। নারীর গড় আয়ু ২০২১ সালে ৭৪.১ বছর, ২০২০ সালে ৭৪.৫ বছর এবং ২০২৯ সালে ৭৪.২ বছর ছিল। পুরুষের তুলনায় নারীর গড় আয়ু বেশি।

প্রতিবন্ধীর হারও বেড়েছে : ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে দেশে প্রতিবন্ধীর হারও বেড়েছে। প্রতি এক হাজার জনে বর্তমানে প্রতিবন্ধীর হার ২৫.৫ জন। যেখানে ২০২১ সালে ছিল ২৪.১। এখানে নারীর চেয়ে পুরুষ প্রতিবন্ধীই বেশি। ২০২২ সালে পুরুষ প্রতিবন্ধীর হার হলো ২৫.৬ শতাংশ এবং নারী প্রতিবন্ধীর হার ২৫.৪ শতাংশ।

জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার কমছে : দেশে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের হার কমছে। ২০২২ সালে এই হার ৬৩.৮ শতাংশ, যা ২০২১ সালে ছিল ৬৫.৬ শতাংশ এবং ২০২০ সালে ছিল ৬৩.৯ শতাংশ। আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহারের হারও ২০২১ সালের ৬৪.৬ শতাংশের তুলনায় ২০২২ সালে কমে ৬২.৮ শতাংশে এসেছে। তবে সনাতন পদ্ধতি ব্যবহারের হার গত দুই বছর ধরে ১ শতাংশেই রয়েছে।

কোনো ধর্মের লোক বাড়েনি : বিবিএসের তথ্যানুযায়ী, গত দুই বছরে দেশে মুসলিম, হিন্দু, খ্রিষ্টান ও বৌদ্ধ ধর্মের লোক বাড়েনি। ২০২২ সালে দেশে মুসলমানের হার ৮৯ শতাংশ, যা ২০২১ সালেও ছিল ৮৯ শতাংশ। ২০২০, ২০১৯, ২০১৮ সালেও মুসলমানদের হার ছিল ৮৮.৪ শতাংশ। এ ছাড়া ২০২২ এবং ২০২১ সালে অন্যান্য ধর্মের লোকের হার ১১ শতাংশ। যা ২০২০, ২০১৯, ২০১৮ সালে এ হার ছিল ১১.৬ শতাংশ।

প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, শিশু মৃত্যু হার বৃদ্ধি পাওয়া কাম্য নয়। বর্তমানে আধুনিক পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। যে কারণে আরও সঠিকভাবে তথ্য উঠে আসছে। তাই অতীতের হারের চেয়ে বেশি আসতে পারে। তবে যাই হোক না কেন শিশুর মৃত্যুর হার বৃদ্ধি কাম্য নয়।

কারণ আমরা এ হার শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি। সেই লক্ষ্য অর্জন করতে হলে মৃত্যুর হার কমিয়ে আনতে হবে। তিনি বলেন, মেধাপাচার আলোচনায় কম আসে। কিন্তু এটি আমাদের ভাবার বিষয়। এই মেধাপাচার ঠেকাতে আমাদের এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি বলেন, এই এসভিআরএস জরিপ থেকে আমরা ১৩৮টি তথ্য এবং এসডিজির ২৭ ইন্ডিকেটরের তথ্য পাবো। যার ফলে এই জরিপটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিশু মৃত্যুর হার বেড়েছে। বিষয়টি নেতিবাচক হলেও আমাদের অনেক ইতিবাচক বিষয় হবে। এখনো দেশে বাল্যবিয়ে প্রায় ৪১ শতাংশ। এটা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে আমার শিশু মৃত্যুর হার কমিয়ে এসডিজির লক্ষ্য অর্জনে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/755321