১১ জুন ২০২৩, রবিবার, ৭:১৫

বড় সংকটে শিল্প খাত

বড় ধরনের সংকটে দেশের শিল্প খাত। তীব্র লোডশেডিংয়ের সঙ্গে শিল্পকারখানাগুলোতে রয়েছে গ্যাস সংকট। ফলে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে মারাত্মকভাবে। এরই মধ্যে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ উৎপাদন কমেছে বলে জানিয়েছেন খাত সংশ্লিষ্টরা উৎপাদন কম হলেও ব্যয় হচ্ছে বেশি। এতে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে উৎপাদনমুখী শিল্প কারখানাগুলো। পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন মুখ থুবড়ে পড়েছে। মালিকরা বলছেন, উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় সময়মতো পণ্য ডেলিভারি দেয়া যাচ্ছে না। ঘন ঘন বিদ্যুৎ যাওয়ায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে মেশিন। অপচয় হচ্ছে শ্রমিকদের কর্মঘণ্টা। ডিজেল কিনে জেনারেটর দিয়েও কারখানা সচল রাখা সম্ভব হচ্ছে না।

ছোট কারখানাগুলো আরও হুমকিতে পড়েছে। ক্ষতির মুখে অনেক শিল্প উদ্যোক্তা ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছেন বা আকার কমিয়ে আনছেন।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সারা দেশের শিল্প-কারখানাগুলোতে এখন প্রতিদিন গড়ে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ থাকছে না। যতটুকু সময় থাকছে তা নিরবচ্ছিন্ন নয়। ফলে কারখানাগুলোতে উৎপাদন কমে গেছে। গার্মেন্ট মালিকদের দাবি, পোশাক কারখানায় উৎপাদন কমেছে ৩০ শতাংশ। এ ছাড়া কোনো কোনো শিল্প কারখানায় উৎপাদন কমেছে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ।

লোডশেডিংয়ের প্রভাব পড়েছে সিরামিক খাতেও। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগে থেকে গ্যাস সংকট ছিল, এখন বিদ্যুৎ সংকটে ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা। এ ছাড়া অন্য শিল্প কারখানাগুলোতেও উৎপাদন কমায় চিন্তিত মালিকরা। ওদিকে লোডশেডিংয়ের কারণে ভরা মৌসুমেও চাল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ধান সংগ্রহ করেও বিদ্যুতের অভাবে অধিকাংশ সময় মিল বন্ধ রাখতে হচ্ছে। ধান কিনেও চাল উৎপাদন করতে না পারায় ধান কেনা কমিয়ে দিয়েছেন মিল মালিক ও ব্যবসায়ীরা। এতে ধানের দামও কমে গেছে। এ নিয়ে হতাশ কৃষক। এ ছাড়া অন্য খাদ্য উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে।

শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ জানিয়েছেন, কারখানাগুলোতে উৎপাদন কমেছে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ। উৎপাদন কমলেও বেড়েছে খরচ। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন মালিকরা।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সহ-সভাপতি মো. শহিদুল্লাহ আজিম মানবজমিনকে বলেন, আমরা এখন মারাত্মক সংকটে আছি। উৎপাদন কমে গেছে ৩০ শতাংশ। দিনে ৬-৭ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। সঙ্গে রয়েছে গ্যাস সংকট। ডিজেল কিনেও কারখানা চালানো যাচ্ছে না। জেনারেটর নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। উৎপাদন কমে গেছে। এমনিতেই পোশাক শিল্পে এখন ক্রেতা নেই। সময়মতো পণ্য সরবরাহ করতে না পাড়া ক্রয়াদেশ বাতিল হচ্ছে। সহসাই এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে আরও বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে পোশাক খাত।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বিদ্যুৎ জ্বালানির কারণে কারখানায় উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এতে আমরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। তিনি বলেন, সারা দিনে অন্তত ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা বিদ্যুতের অভাবে উৎপাদন বন্ধ থাকছে। কারখানা মালিকদের প্রতিদিন এক লাখ টাকার বাড়তি তেল কিনতে হচ্ছে। বৈশ্বিক কারণে এমনিতেই বিদেশি ক্রেতার অর্ডার কমে গেছে। এরপরও ঠিকমতো গ্যাস-বিদ্যুৎ পাচ্ছি না। সবমিলে আগের চেয়ে কারখানার উৎপাদন প্রায় অর্ধেকে নেমেছে। সময়মতো পণ্য সরবরাহ করতে না পারায় অনেক কারখানার মালিককে জরিমানা দিতে হচ্ছে। অর্ডার বাতিল হচ্ছে অনেকের।

বাংলাদেশ সিরামিক প্রস্তুতকারক এবং রপ্তানিকারক সমিতির (বিসিএমইএ) সাধারণ সম্পাদক এরফান উদ্দিন জানান, আগে থেকেই গ্যাস সংকট ছিল। এখন বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের ফলে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় আরও বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা।

ওদিকে চলমান লোডশেডিং পরিস্থিতি ঠিক হতে আরও ২ সপ্তাহ সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। গত রোববার সচিবালয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, জ্বালানি সংকটের কারণে এখন ২ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হচ্ছে। দ্রুত সমাধানের চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, আমরা জানতাম যে এরকম একটা পরিস্থিতি হতে পারে। সেটার সমাধান নিয়ে গত ২ মাস ধরে চেষ্টা করছি। তবে আমাদের অনেক কিছু দেখতে হয়। অর্থনৈতিক বিষয়, সময়মতো এলসি খোলা ও জ্বালানি পাওয়ার বিষয় আছে। আমাদের কয়লার জোগান দিতে হচ্ছে, তেলের জোগান দিতে হচ্ছে, গ্যাসের জোগান দিতে হচ্ছে। আবার শিল্পে গ্যাস দিতে হচ্ছে। সেই বিষয়গুলোকে আমাদের একসঙ্গে সমন্বয় করতে হয়। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেয়ার জন্য প্রস্তুতি থাকলেও তাপপ্রবাহ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি জ্বালানির অভাবে অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু রাখা যাচ্ছে না।

https://mzamin.com/news.php?news=59847