১০ জুন ২০২৩, শনিবার, ৭:১২

মুদ্রাস্ফীতি, ডলার, জ্বালানি সংকট

ঝুঁকিতে বাংলাদেশের সাফল্যের গল্প টক হয়ে গেছে

হেনরি কিসিঞ্জারের ভাষায় বৈশ্বিকভাবে তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে বাংলাদেশ এশিয়ার উদীয়মান বাঘ হিসেবে প্রশংসিত হয়েছে। কিন্তু এখন ‘বাফারে’ আঘাত করেছে দক্ষিণ এশিয়ার অসামান্য অর্থনৈতিক সাফল্যের সেই গল্প। বহু বছরের মধ্যে মুদ্রাস্ফীতি উচ্চ, প্রবৃদ্ধি মন্থর হচ্ছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দ্রুত সঙ্কুচিত হয়েছে এবং দেখা দিয়েছে ব্যাপক দুর্নীতি।

তাহলে উন্নয়নের সুপারস্টার হিসেবে খ্যাত দেশটি কীভাবে অস্থির হলো? বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেছেন, মুদ্রাস্ফীতি এবং মুদ্রা সংকট আমাদের অর্থনীতিতে দু’টি ফোস্কা, অবিলম্বে যার অস্ত্রোপচার প্রয়োজন। যদিও বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি ২৬০০ ডলার এবং এখনও তা ভারতের চেয়ে বেশি, তবুও ঢাকাকে একটি কঠিন মুদ্রা ঘাটতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে। অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে ৪৭০ কোটি ডলারের বেইলআউটের জন্য আইএমএফ’র কাছে ঋণ চাইতে বাধ্য হয়েছে ঢাকা।

এমনকি জানুয়ারিতে আইএমএফ’র সঙ্গে চুক্তিতে বাংলাদেশ স্বাক্ষর করার পরও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। এইতো গত সপ্তাহে, মুডি’স ইনভেস্টর সার্ভিসেস বাংলাদেশের ক্রেডিট রেটিংকে নামিয়ে এনেছে বি১-এ। বিনিয়োগ গ্রেডের চার ধাপ নিচে নেমে গেছে বাংলাদেশ। ফলে বাংলাদেশ ‘জাঙ্ক’ বা অনুমানমূলক অবস্থানের আরও গভীরে চলে গেছে। যদিও অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত শ্রীলঙ্কা বা পাকিস্তানের মতো একই অবস্থা নয় বাংলাদেশের, তবুও মুডিস বলেছে- এ দেশটি ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক ঝুঁকির মুখে।
ফোরেক্স পরিস্থিতি ভয়াবহ

কয়েক বছরে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। ২০২১ সালের মাঝামাঝি থেকে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের রিজার্ভ ৪০ শতাংশ কমে ২৯ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।

এখন অপরিশোধিত তেলের ঘাটতি তীব্র হয়েছে। এর কারণ বাংলাদেশ এই তেলের দাম পরিশোধ করেনি।
বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় কয়লাও ফুরিয়ে যাচ্ছে। এরও কারণ কয়লার বিল বা পাওনা পরিশোধ করা হয়নি। কয়লা ঘাটতির কারণে পায়রায় মেগা-পাওয়ারের বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এর ফলে যে দেশটি গর্বের সঙ্গে ঘোষণা করেছিল সারা দেশকে শতভাগ বিদ্যুতায়ন করেছে তারা, এখন কয়েক ঘণ্টার বিদ্যুৎবিভ্রাট, এমনকি রাজধানী ঢাকা শহরও, সেই বিদ্যুৎবিভ্রাট সহ্য করছে।

২০২৪ সালের জানুয়ারির শুরুর দিকে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা। এসব কারণে পরিস্থিতি সত্যিই জটিল হয়ে উঠছে। খাদ্য ও জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধিতে ভোটারদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। আওয়ামী লীগের নেত্রী ৭৫ বছর বয়সী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগের যেকোনো নির্বাচনের চেয়ে কঠিন লড়াইয়ের মুখোমুখি হতে পারেন সামনের নির্বাচনে। রাজপথের সহিংসতা এতে ইস্যু হতে পারে। যদিও শেখ হাসিনা বিজয়ের আশা করতে পারেন। কিন্তু তিনি দেশকে কার্যত একটি একদলীয় রাষ্ট্রে পরিণত করেছেন। গত নির্বাচনে তিনি এবং তার মিত্ররা জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ২৮৮ আসনে বিজয়ী হয়েছেন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপিকে নেতৃত্ব দেন তারই প্রতিদ্বন্দ্বী খালেদা জিয়া। তাকে তিনি অব্যাহতভাবে গৃহবন্দি করে রেখেছেন। বাকি বিরোধীদের অবহেলা করছেন এবং বশ্যতা স্বীকার করতে ভয় দেখাচ্ছেন মিডিয়াকে।

নজিরবিহীন মার্কিন সতর্কবার্তা
মার্কিনিরা নজিরবিহীন এক সতর্কতা ইস্যু করে নির্বাচনী লড়াইকে জটিল করে তুলেছে। তারা সতর্কতায় বলেছে, যাকেই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করতে দেখা যাবে, তাকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। উপরন্তু তাদের পরিবারের সদস্যরাও ভিসা নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়বেন। যুক্তরাষ্ট্রের এই সতর্কতা তার পররাষ্ট্রনীতির মূল্যবোধভিত্তিক। নির্বাচনী কর্মকর্তা, পুলিশ কর্মকর্তা এবং বিরোধী দলসহ সবাইকে ব্যাপক বিস্তৃত অর্থে এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এতে বাংলাদেশে বিবেচ্য আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।

১লা জুন, বৃহস্পতিবার বার্ষিক বাজেট ঘোষণা করেছে সরকার। এতে উচ্চ হারে কর বা ট্যাক্স ঘোষণা করা হয়েছে। আইএমএফ’র শর্ত মোতাবেক ভর্তুকি প্রত্যাহারের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু করোনা মহামারিতে যে দরিদ্রতম ভোটাররা আরও দরিদ্র হয়েছেন, তাদেরকে জয় করার জন্য এতে কিছুই নেই। বস্তুত অনেক পর্যবেক্ষক দরিদ্রদের বিপরীতে ধনীদের সুবিধা দেয়ার অভিযোগ করেছেন সরকারের বিরুদ্ধে। বর্তমানের ট্যাক্সসীমার কম আয় করলেও জনগণকে সর্বনিম্ন্ন ২০০০ টাকা ট্যাক্স দিতে বলা হয়েছে। দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকায় মন্তব্য করা হয়েছে যে- সরকার বিনিয়োগে ট্যাক্স ক্রেডিট নিয়ম পরিবর্তন করেছে। এতে উচ্চ আয়ের ব্যক্তিরা উপকৃত হবেন। আর নিম্ন্ন আয়ের আয়কর দাতাদের ওপর আরও বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে।

যে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির মডেল ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছিল, তার অর্থনীতির চিত্র এত দ্রুত এত নেতিবাচক হয়ে গেল কীভাবে? অতিসম্প্রতি বাংলাদেশের স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি ভুলের পর আরেকটি ভুলে হোঁচট খাচ্ছেন- তিনি সুদের হার, সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি এবং অপ্রচলিত বিনিময় হার প্রবর্তন করে এমনটা করছেন।

সুদের হার ১২ মাসের জন্য নির্ধারিত
ঢাকাভিত্তিক পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের প্রধান আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি সত্ত্বেও ১২ মাসের জন্য সুদের হার স্থির রাখা এককভাবে একটি সবচেয়ে বড় ভুল। এটাই সব না। শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার বিনিময় হার ব্যবস্থা স্থির করে দিয়েছিল। কিন্তু আকস্মিকভাবে গত সেপ্টেম্বরে সিদ্ধান্ত নেয় যে, এই নীতি আর টাকাকে সমর্থন করছে না। তারা মুদ্রাকে সচল (ফ্লোট) করার অনুমতি দেয়। ফলে মুদ্রায় চরম অস্থিরতা দেখা দেয়। আর বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় করেন এমন ডিলারদের বিনিময় হার স্থির করার জন্য নির্দেশনা দেয় সরকার। কালোবাজারে এর ফলে ব্যাপকভাবে অর্থের ছড়াছড়ি দেখা দেয়। তারপর আমদানি এবং রপ্তানিতে আলাদা বিনিময় হার প্রচলন করে পরিস্থিতিতে আরও খারাপ করে তোলে সরকার।

দ্রুতই সরকারি মাধ্যমে ডলারের প্রবাহ বলতে গেলে শুকিয়ে যায়, এমনকি বিদেশে যেসব বাংলাদেশি কাজ করেন তাদের পক্ষ থেকেও এই প্রবাহ কমে যায়। ২০২২ সালে প্রায় ১১ লাখ বাংলাদেশি বিদেশে গিয়েছেন কাজের জন্য। যার তুলনায় ২০২১ সালে তাদের সংখ্যা ছিল প্রায় ৬ লাখ এবং তার আগের বছরগুলোতে এই সংখ্যা ছিল আরও কম। তা সত্ত্বেও রেমিট্যান্স প্রবাহ দ্রুততার সঙ্গে কমে গেছে। এতে প্রমাণ হয় যে, আগের চেয়ে অধিকসংখ্যক শ্রমিক দেশে টাকা পাঠানোর জন্য অনানুষ্ঠানিক চ্যানেল ব্যবহার করছেন।

‘পুরো সিস্টেম আন্ডারগ্রাউন্ডে’
জাহিদ হোসেন বলেন, পুরো ব্যবস্থাই চলে গেছে আন্ডারগ্রাউন্ডে। এমনকি রপ্তানি থেকে ডলারও ফেরত আসছে না। রপ্তানির রশিদ সংখ্যা রপ্তানি শিপমেন্টের সঙ্গে মিলানো খুবই কঠিন। বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন জোর দিচ্ছে, কমপক্ষে ৩০ লাখ ডলারের ওপরে যেকোনো এলসিতে তারা ক্লিয়ারেন্স দেবে, যা বাণিজ্যের জন্য আরও একটি বোঝা।

করোনা মহামারির আগে ১০ বছর ধরে বাংলাদেশে বার্ষিক শতকরা ৭ ভাগ হারে প্রবৃদ্ধি দেখা দিয়েছে। ২০২২ সালে তা শতকরা ৭.১ ভাগ ছিল। কিন্তু এই বছরে প্রবৃদ্ধি শতকরা মাত্র ৫.৩ ভাগ প্রত্যাশা করা হচ্ছে, যেখানে মুদ্রাস্ফীতি শতকরা কমপক্ষে ৯ ভাগের ওপরে।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক দুর্দশার বীজ বেশ কিছুদিন আগেই রোপিত হয়েছে। একটি সমস্যা হলো, যেকোনো মূল্যে প্রবৃদ্ধিকে বেছে নিয়েছেন শেখ হাসিনা। বিদ্যুতায়নের সময়ে, তার উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য পূরণ হয়েছে এটা নিশ্চিত করতে নির্দয়ভাবে ‘লাল ফিতা’ কেটেছেন। এর ফলে যা হয়েছে তা হলো বিদ্যুতের মূল্য উচ্চ হয়েছে এবং কোম্পানিগুলোর মধ্যে কোনো প্রতিযোগিতা নেই। এখন জ্বালানি সংকটের কারণে, তার বহুমুখী বিদ্যুতায়ন উদ্যোগ ঝিম মেরে যাওয়ার মতো ঝুঁকিতে।

মেগা অবকাঠামোর উপর জোর
সব সময় জোর দেয়া হয়েছে পদ্মা সেতু, কক্সবাজার রেল সংযোগ, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্রের মতো প্রকল্পগুলোর মেগা-অবকাঠামো নির্মাণে। কিন্তু সমস্যা হলো এই ধরনের মেগা-প্রকল্পগুলো দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের পাশাপাশি দ্রুত অর্থনৈতিক আয় আনতে পারে না। রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার কারণে ১৩০০ কোটি ডলারের রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ অচল হয়ে আছে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণাধীন। আহসান এইচ মনসুর বলেছেন- আমরা রাজনৈতিক ‘হেডওয়াইন্ডে’র (ঝড়ের) সম্মুখীন হচ্ছি।

সরকার আরও কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছে, যা নিয়ে ভ্রূ উত্তোলন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবসময় জোর দিয়ে বলেন- তিনি ধর্মনিরপেক্ষ একটি সরকার পরিচালনা করছেন। কিন্তু তিনি দেশব্যাপী প্রায় ১০০০ কোটি ডলার ব্যয়ে মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছেন। কিন্তু ব্যক্তিখাতে অনেক মানুষ সব সময় নতুন মসজিদ নির্মাণে অধিক পরিমাণ আগ্রহী থাকায় তার এই উদ্যোগ অপ্রয়োজনীয়।

সমৃদ্ধির দিকে বাংলাদেশের উত্থান তার তৈরি পোশাক শিল্প দ্বারা চালিত হয়েছে। এক্ষেত্রে ভারতীয় খাত পিছিয়ে আছে। আর বাংলাদেশ এক্ষেত্রে লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধি ঘটেছে। কিন্তু তৈরি পোশাক খাতের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা একটি বিশাল দুর্বলতা। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো- কম্বোডিয়ার মতো কম খরচে উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে যে প্রতিযাগিতার মুখে পড়ছে বাংলাদেশ, তাতে উন্নয়নশীল মর্যাদার সঙ্গে সম্পর্কিত অগ্রাধিকার বাণিজ্যিক সুবিধা খুব শিগগিরই হারাতে পারে বাংলাদেশ। ২০২৬ সালের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বেরিয়ে আসার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ।

বৈচিত্র্য আনার ব্যর্থ প্রচেষ্টা
ফার্মাসিউটিক্যাল এবং ইলেকট্রনিক্সের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য আনার প্রচেষ্টা ব্যাপকভাবে ব্যর্থ হয়েছে। লাল ফিতার দৌরাত্ম্য, দুর্নীতি এবং চলমান ব্রেইন ড্রেইনের কারণে তা বিঘ্নিত হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের নতুন এক রিপোর্টে বলা হয়েছে- বর্তমান রপ্তানি ভীষণভাবে তৈরি পোশাকের ওপর নির্ভরশীল (২০২০ সালে মোট রপ্তানির মধ্যে শতকরা ৮৩ ভাগ ছিল এটা), যেমনটি ছিল গত দুই দশক ধরে।
বরাবরই ভারত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্য রক্ষার খেলা খেলেছেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশি বিভিন্ন রাজনীতিকের মধ্যে তিনিই ভারতের স্পষ্ট প্রিয় ব্যক্তি। কিন্তু চীন অনেক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশে বড়রকমভাবে প্রবেশ করেছে। এর জন্য হাসিনা গর্বিত। সম্প্রতি চীনের রাষ্ট্রদূত ঘোষণা দিয়েছেন চীনের বেশির ভাগ প্রকল্প প্রায় শেষের পথে এবং তারা নতুন নতুন প্রকল্পে কাজ করতে চাইছেন।

যুক্তরাষ্ট্র এবং শেখ হাসিনার মধ্যে আরও সমস্যাবহুল সম্পর্ক দেখা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানির ওপর ঢাকা অনেকটা নির্ভরশীল। এর প্রেক্ষিতে দেশকে চীনের হাতে তুলে দেয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের বোধগম্য উদ্বেগ আছে। তার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের প্রতি ওয়াশিংটনের সতর্কতাকে দেখা হচ্ছে।
ট্যাক্স সিস্টেম সংশোধন

বাংলাদেশ এখন যেখানে আছে সেই দুর্বল অবস্থা থেকে কি বেরিয়ে আসতে পারবে? আহসান এইচ মনসুর বলেন, অধিক অর্থ আকর্ষণ করতে ট্যাক্স সিস্টেমকে সংশাধন করতে হবে। এর আগে ট্যাক্স এবং জিডিপি’র অনুপাত ছিল শতকরা ১১ ভাগ। কিন্তু বর্তমানে তা মাত্র শতকরা ৭.৫ ভাগ। মনসুর বলেন, এত কম রাজস্ব দিয়ে কীভাবে আপনি দেশ চালাবেন? তিনি আরও বলেন, অদক্ষ ও দুর্নীতিগ্রস্ত ট্যাক্স সিস্টেম আধুনিকায়ন করার জন্য উল্লেখযোগ্য কিছুই তারা করেনি।

সুতরাং এতসব সমস্যার মধ্যে ১৬ কোটি ৭০ লাখ মানুষের এই দেশটি কি আগামী কয়েক দশকে উচ্চ-মধ্যম আয়ের মর্যাদা অর্জনের লক্ষ্য পূরণ করতে পারবে? বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জগুলো ভয়াবহ। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, যে দেশের বাণিজ্য ও শিল্পের গলা টিপে ধরা হয়েছে, বিদেশি বিনিয়োগ স্থবির হয়ে পড়েছে, সেখানে আওয়ামী লীগের দখল শিথিল করতে হবে।

যেকোনো কন্ট্রাক্ট, চাকরি বা লাইসেন্স সবই পান ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা। কখনো তা পান রাজনৈতিক মিত্ররা। দক্ষিণ এশিয়ায় ব্যবসায় সবচেয়ে খারাপ র‌্যাঙ্কিং বাংলাদেশের। দুর্নীতির বৈশ্বিক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষের দিকে।

তারপরও আরও চাপে থাকা চ্যালেঞ্জ হলো জলবায়ু পরিবর্তন। বিশ্বব্যাংক বলেছে, নিচু ভূমির এই দেশটির কৃষি উৎপাদন শতাব্দীর মাঝামাঝি এক তৃতীয়াংশ নিঃশেষ হয়ে যাবে এবং লাখ লাখ বাংলাদেশি জোরপূর্বক দেশান্তরী হতে বাধ্য হবেন। এর অর্থ হলো, বাংলাদেশকে তার আগে কঠিনভাবে অর্জিত অর্থনৈতিক অর্জনগুলো যাতে বিপরীতমুখী না হয়, তা নিশ্চিত করতে স্মার্টলি সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
(ভারতের অনলাইন টেলিগ্রাফে প্রকাশিত লেখার অনুবাদ)

https://mzamin.com/news.php?news=59699