১০ জুন ২০২৩, শনিবার, ৬:২৯

মার্কিন ভিসানীতি ও স্বপ্নের অপমৃত্যু

-ইবনে নূরুল হুদা

অবাধ গণতন্ত্র, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও বৈষম্যহীন আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্যই আমরা ১৯৭১ সালে এক রক্তক্ষয়ী মুক্তি সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম। কিন্তু স্বাধীনতার পাঁচ দশক অতিক্রান্ত হলেও স্বাধীনতার স্বপ্নকে অনেক ক্ষেত্রেই অধরাই রয়ে গেছে। দেশে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এখানো প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়নি। অথচ এটিই ছিলো আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম চেতনা। অভিযোগ রয়েছে, দেশে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ চর্চার বিপরীতে অবাধে ভোট চুরির মহড়া, সাম্যের পরিবর্তে অসাম্য, মানবিক মর্যাদার পরিবর্তে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন এবং আইনের শাসনের পরিবর্তে অপশাসন-দুঃশাসন চলছে। সঙ্গত কারণেই দেশের সাংবিধানিক শাসন নিয়ে জোরালো প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।

আমাদের চরম দুর্ভাগ্য যে, স্বাধীনতার পাঁচ দশক পরও আমরা এখনো দেশের নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে জাতীয় ঐকমত্যে পৌঁছতে পারিনি। মূলত, এটি আমাদের সবচেয়ে বড় জাতীয় ব্যর্থতা। সঙ্গত কারণেই সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমাদের দেশের নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে মারাত্মক প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। ক্ষমতসীনরা নির্বাচনগুলোকে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দাবি করলেও বিরোধী দলগুলো তামাশা ও ভাঁওতাবাজীর নির্বাচন হিসাবে আখ্যা দিয়ে এসেছে বরাবরই। বিষয়টি এখন দেশের গ-ি পেড়িয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্থান করে নিয়েছে। দেশে অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয় না বিরোধী দলের দীর্ঘদিনের এমন অভিযোগের প্রেক্ষাপটে পশ্চিমাবিশ^সহ বিশে^র প্রভাবশালী দেশগুলো বাংলাদেশ সরকারের ওপর একটি অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য দীর্ঘদিন থেকেই চাপ দিয়ে আসছে। কিন্তু সরকার তাদের কথায় কোনভাবেই কর্তপাত করেনি বরং তারা বিষয়টিকে নিজেদের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে পাশ কাটানোর চেষ্টা করেছে। সরকারের এই অনমনীয় মনোভাবের কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য বাংলাদেশীদের জন্য একটি স্বতন্ত্র ভিসানীতি প্রণয়ন করেছে। অবশ্য এই ভিসানীতি আরোপের পর সরকার ও বিরোধীপক্ষ নিজ নিজ অবস্থান থেকে নিজেদের বিজয় বলে দাবি করে আসলেও এ বিষয়ে সরকার প্রধানের বক্তব্য বিষয়টিকে স্পষ্টতা দিয়েছে।

ফলে একথা এখন দিবালোকের মত স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ করতে জোবাইডেন প্রশাসন বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেছে। এ নীতিতে বলা হয়েছে, প্রশাসনের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিচারক, রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী যারাই নিরপেক্ষ নির্বাচনে বাধার সৃষ্টি করবে তাদের জন্য নতুন ভিসানীতি কার্যকর হবে। সরকার ও বিরোধী দল বিষয়টি নিয়ে বেশ নড়েচড়ে বসেছে। তবে নির্বাচনে যারা দায়িত্ব পালন করেন সেসব সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে এক অজানা উৎকন্ঠা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যেই পুলিশ প্রশাসনের আচরণেও বেশ পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কিছুদিন আগে যে পুলিশ কর্মকর্তা জামায়াতে ইসলামীকে অবৈধ রাজনৈতিক সংগঠন হিসাবে আখ্যা দিতেন তিনিও এ বিষয়ে এখন চমৎকার ও ভারসাম্যপূর্ণ বক্তব্য দেয়া শুরু করেছেন। বস্তুত মার্কিন ভিসানীতি এখন টক অব দ্য সচিবালয় হয়ে গেছে। কারণ, স্যাংশন দেয়া হয় ব্যক্তির ওপর। আর ভিসানীতি ঘোষণা করা হয়েছে সবার ওপর। মার্কিন প্রশাসনের বিবেচনায় যারাই অভিযুক্ত হবেন তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞার খড়গ নেমে আসবে। তাই বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টরা এখন বেশ উদ্বেগ-উৎকন্ঠার মধ্যেই রয়েছেন।

জানা গেছে, প্রশাসনের বর্তমান ও সাবেক বড় বড় কর্মকর্তারা মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা নীতি নিয়ে অনেকটা অস্বস্তিতে পড়েছেন। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে কর্মরত প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে নি¤œপর্যন্ত কর্মচারীদের মধ্যে আলোচনা, সমালোচনা, ভীতি ও গুঞ্জন শুরু হয়েছে। অবস্থা বুঝে ইতোমধ্যে প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তা নিরেপক্ষ হওয়ার চেষ্টা শুরু করে দিয়েছেন। যারা এতোদিন আওয়ামী লীগের হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তাদের অনেকেই আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। এর আগে র‌্যাবের ৭ সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এখন মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে প্রশাসনে তোলপাড় চলছে। তবে এ বিষয়ে প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তা মুখ খুলতে চাচ্ছেন না বরং তারা বেশ সন্তর্পণেই অগ্রসর হচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে যারা সচিব পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করছেন তাদের মধ্যে অন্তত ২০ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে যাদের যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরতা রয়েছে। হয় তাদের সন্তানরা সেখানে লেখাপড়া করেন অথবা তাদের সেখানে ঠিকানা রয়েছে। ঘুষ, দুর্নীতি মাধ্যমে আয়-রোজগার করে স্ত্রী-সন্তানের নিরাপদ জীবনের কথা ভেবে সে দেশে পাচার করেছেন। এমন বাস্তবতায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি প্রশাসনকে নিরপেক্ষ রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রশাসনে কর্মরত প্রভাবশালী আমলাদের একটি বড় অংশের যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ি রয়েছে। অন্তত ৩২ জন আমলা যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং যুক্তরাজ্যে বাড়ি করেছেন এমন গুঞ্জন রয়েছে। এদের মধ্যে কয়েকজন যুক্তরাষ্ট্র থেকে গ্রিন কার্ডও নিয়েছেন এমন কথাও বাতাসে ভাসছে। বাংলাদেশে যারা প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদে আছেন এদের বেশিরভাগেরই সন্তান-সন্ততিরা বিদেশে পড়াশোনা করেন। তাদের মধ্যে একটি বড় অংশ যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা করছেন। যাদের সন্তানরা যুক্তরাষ্ট্রে নেই বা যাদের ঘরবাড়ি যুক্তরাজ্য বা কানাডায় তারাও কিছুটা আতঙ্কে রয়েছেন। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের এই ভিসানীতির ফলে যুক্তরাজ্য ও কানাডা সরকার প্রভাবিত হতে পারে বলে তারা শঙ্কা প্রকাশ করছে। ফলে আগামী নির্বাচন নিয়ে তাদের মধ্যে এক ধরনের নিরপেক্ষ অবস্থান তৈরি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যা ক্ষমতাসীনদের মধ্যে কিছুটা হলেও আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।

বাংলাদেশের বর্তমান ও সাবেক বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমলার যুক্তরাষ্ট্র কানাডা এবং যুক্তরাজ্যে যেমন বাড়িঘর রয়েছে এমন খবর প্রচারের পর কিছুদিন আগে কানাডায় কাদের বাড়িঘর রয়েছে এরকম একটি বিষয় নিয়ে তথ্যানুসন্ধান করেছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তথ্যানুসন্ধানে দেখা গেছে যে, কানাডায় বেগম পাড়ায় বাড়ি রয়েছে এমন ব্যক্তিদের মধ্যে আমলাদের সংখ্যা বেশি। কাজেই নতুন ভিসানীতি আমলাদের ওপর বেশি পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। ফলে আগামী নির্বাচনে প্রশাসনের ভূমিকায় একটি নাটকীয় পরিবর্তন আসতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই। যা বর্তমান দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সরকারের স্বপ্নভঙ্গের আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে। ফলে আতঙ্কের মধ্যে পড়েছেন সরকার সংশ্লিষ্টরাও।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের জন্য মার্কিন ভিসানীতি দেশের জন্য বড় ধরনের সঙ্কট সৃষ্টি করবে। তবে যেসব কর্মকর্তা ও তার পরিবারের ছেলে-মেয়েরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশে^ লেখাপড়া করছেন এবং ব্যবসা করছেন তারা বেশি বিপদে পড়বেন। যেসব সচিবসহ প্রশাসনের বড় বড় অফিসারদের যুক্তরাষ্ট্রে ছেলে ও মেয়ে লেখাপড়ার জন্য রয়েছে এবং যাদের বাড়িঘর রয়েছে তারা এখন রীতিমত আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। যে সব কর্মকর্তা দলবাজি করেন গত কয়েক বছর থেকে কোটি কোটি টাকা পাচার করেছেন তাদের টাকা নিয়ে আসতে পারবে না। খোদ আমলাদের মধ্যেও বলাবলি করতে শোনা যাচ্ছে, মার্কিন ভিসানীতিতে বেশি ক্ষতি হবে সরকারি কর্মকর্তাদের। কারণ, তাদের অনেকের স্ত্রী-সন্তান ও ব্যবসা রয়েছে। কিন্তু তারা বিষয়টি নিয়ে স্পষ্ট কোন অবস্থান গ্রহণ করতে পারছেন না।

সচিবালয়ের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রশাসনে রদবদল রুটিন কাজ হলেও এ বছরের শেষে যেহেতু জাতীয় নির্বাচন, তাই প্রশাসনের শীর্ষ পদে কারা থাকছেন, তা নিয়ে এবার আলোচনা কিছুটা বেশি। সরকারের মধ্যেও চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিন্তু নতুন মার্কিন ভিসানীতি জারি হওয়ার পর অতিউৎসাহী আমলাদের মধ্যে গা বাঁচানোর চেষ্টা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যা আগামী নির্বাচনে সরকারের স্বপ্নভঙ্গের কারণ হতে পারে।

২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে শুরু করে এখনো পর্যন্ত সম্পূর্ণ দলীয় বিবেচনায় পদোন্নতি ও নিযুক্তি দিয়ে চলেছে সরকার। বিপরীতভাবে সরকার সমর্থক না হওয়ার কারণে অনেককে চাকরিচ্যুত হতে হয়েছে এবং এখনো চাকরি হারাচ্ছেন অনেকে। জনস্বার্থের অজুহাতে অনেক নিরপেক্ষ কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। তাদের সংখ্যা দু’হাজারের ওপরে পৌঁছে গেছে। লজ্জা, দুঃখ ও অপমানে অনেকে চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। অন্যদিকে মেধা, যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও সিনিয়রিটি থাকুক না থাকুক ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক অফিসাররা পদোন্নতি ও আকর্ষণীয় বিভিন্ন পদে নিযুক্তি পেয়েছেন এবং এখনো পাচ্ছেন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দফতর, অধিদফতর ও বিভাগের শীর্ষ পদে বসানো হয়েছে তাদের। জনপ্রশাসনের উচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও পুলিশ ও প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে বেছে বেছে দলীয় লোকজনকেই বসানো হয়েছে। এর ফলে আওয়ামী লীগ সমর্থক অফিসারদের মধ্যেও বিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়ছে।

মূলত, মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সেটি এখনো কার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে সেটি বলা হয়নি। এতে বলা হয়েছে বাংলাদেশে গণতন্ত্র, অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি নতুন ভিসানীতি ঘোষিত হয়েছে। যারা গণতন্ত্র বাধাগ্রস্ত করবে এবং দায়ী বা জড়িত ব্যক্তিদের মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসনের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হবে। যারা অন্যায় কাজ করবেন এবং যারা দুর্নীতি করে যুক্তরাষ্ট্রে বাড়িঘর করেছেন তারা তো আতঙ্কে থাকবেন। যারা দুর্নীতি করেনি তারা পড়বে না। যুক্তরাষ্ট্র কোনো কিছু করার আগে দীর্ঘ ৫ থেকে ৭ বছর বিষয়টি নিয়ে কাজ করে। দফায় দফায় সরকারের সাথে বৈঠকও করেছে। যখন তারা দেখছে বাংলাদেশে গণতন্ত্র, অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত নয় তখন তা মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। যা বিরোধী দলের আন্দোলনের পালেই হাওয়া দিয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে।

মূলত, ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতিই আমাদের স্বাধীনতার চেতনা ও স্বপ্নগুলোকে রীতিমত ভূ-লুন্ঠিত করছে। বিশে^র অপরাপর জাতি যখন গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ চর্চার মাধ্যমে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন আমাদের দেশে নির্বাচনের নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন রীতিমত দুর্ভাগ্যের। কারণ, আমাদের স্বাধীনতার চেতনাই হচ্ছে অবাধ গণতন্ত্র চর্চা। কিন্তু নেতিবাচক রাজনীতি আমাদের সে স্বপ্নপূরণে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এক্ষেত্রে আমলাতন্ত্রের বিচ্যুতি ও দলবাজি কম দায়ী নয়। সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো আমরা কোন জাতীয় সমস্যা জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে সমাধান করতে পারিনি। ফলে আমাদের দেশে চলমান সঙ্কট সমাধানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিতে হয়েছে। যা জাতি হিসাবে আমাদের জন্য মোটেই সম্মানের নয় বরং বেশ লজ্জার। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কোন উপলব্ধি আছে বলে মনে হয় না।

একথা অস্বীকার করার সুযোগ নেই যে, বাংলাদেশের জন্য মার্কিন ভিসানীতি বাংলাদেশের চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নতুন মাত্রা দিয়েছে। যেসব অসৎ রাজনীতিক ও দুর্নীতিবাজ আমলা ক্ষমতার প্রভাববলয়ে থেকে দেশ থেকে অবাধে অর্থপাচার করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশে^র বিভিন্ন উন্নত দেশে বিপুল বিত্তবৈভব সৃষ্টি করেছেন তাদের স্বপ্নভঙ্গের অনুষঙ্গ হয়ে দেখা দিয়েছে এই ভিসানীতি। তবে এ বিষয়ে আমাদের আত্মসমালোচনা করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, আমাদের দেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য কেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে স্বতন্ত্র ভিসানীতি প্রণয়ন করতে হয়, আবার নির্বাচনকালীন কেয়ারটেকার সরকারের দাবি ওঠে তা খতিয়ে দেখার সময় এসেছে। কারণ, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সম্পূর্ণ স্বাধীন ও সার্বভৌম। কিন্তু রাজনৈতিক ব্যর্থতা আমাদের জাতিসত্তাকে ক্রমেই হীনবল করছে; ঘটছে সোনালী স্বপ্নের অপমৃত্যু!

https://dailysangram.info/post/526979