৯ জুন ২০২৩, শুক্রবার, ৮:০৬

অবাধ ও সুষ্ঠু ভোটের জন্যই ভিসানীতি ঘোষণা করা হয়েছে

বাংলাদেশে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র তার আগের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছে। নিজেদের এ অবস্থানের সমর্থনেই কয়েক সপ্তাহ পূর্বে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রধান ডেপুটি মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল। গত বুধবার স্টেট ডিপার্টমেন্টের নিয়মিত ব্রিফ্রিংয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি নিয়ে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া এক বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় এভাবেই নিজ দেশের অবস্থান তুলে ধরেন প্যাটেল। নিরাপত্তা ও বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রধান উপমুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল গত বুধবার এক ব্রিফিংয়ে এ আগ্রহের কথা তুলে ধরেন।

চলতি বছরের শেষ দিকে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা। আসন্ন এই নির্বাচনকে সামনে রেখে গত ২৪ মে ভিসা নীতিতে পরিবর্তন আনার ঘোষণা দেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন। ঘোষণায় তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচন দেখতে আগ্রহী। যেসব ব্যক্তি বা গোষ্ঠী এই নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করবে বা গণতান্ত্রিক ধারাকে ব্যাহত করার চেষ্টা করবে, তাদের ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারবে মার্কিন সরকার। এই ঘোষণার পর থেকে নতুন করে ফের আলোচনায় এসেছে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক। গণতন্ত্র এবং ভোট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান প্রসঙ্গে স্টেট ডিপার্টমেন্টের এই কর্মকর্তা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সারা বিশ্বে গণতন্ত্র এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশের সরকার, রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ এবং গণমাধ্যম সকলেই আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হওয়ার আকাঙ্খা প্রকাশ করেছেন এবং এই আকাঙ্খা বাস্তবায়নে আমাদের এই ভিসা নীতির ঘোষণা।

ব্রিফ্রিংয়ে অংশ নিয়ে বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন ইস্যুতে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলের চাপ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিসা নীতির কড়া সমালোচনার প্রসঙ্গে উল্লেখ করে স্টেট ডিপার্টমেন্ট সংবাদদাতা মুশফিকুল ফজল আনসারী জানতে চান, বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন ভিসা নীতির প্রতিক্রিয়া বলেছেন যে ভিসা না দেয়া কিংবা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে মাথাব্যথার কোনো কারণ নেই। আটলান্টিক শুধুমাত্র মহাসাগর নয়, আরও মহাসাগর আছে। সেদিকে তিনি যাবেন। যদিও তার দলের লোকেরা প্রথমে বর্ণনা করেছিলেন যে নতুন ভিসা নীতি বিরোধীদের জন্য করা হয়েছে যাতে তার সরকারের অধীনে নির্বাচনে আসেন। কিন্তু রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজের দলগুলো বিশ্বাস করে না যে শেখ হাসিনা একটি অবাধ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনে যাবেন কারণ তিনি ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি।তাহলে আপনি কীভাবে বিশ্বাস করবেন যে শেখ হাসিনা একটি ‘বিশ্বাসযোগ্য , অবাধ এবং নিরপেক্ষ’ নির্বাচন অনুষ্ঠান করবেন?

জবাবে ভেদান্ত প্যাটেল বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সারা বিশ্বে গণতন্ত্রের ব্যাপ্তি এবং অবাধ ও সুষ্ঠুং নির্বাচনের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞা নীতি ঘোষণা করেছে। কয়েক সপ্তাহ আগে একটি নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করা হয়েছে যার আওতায় বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশি কর্মকর্তাসহ, সরকার কিংবা বিরোধিদল অথবা গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে দুর্বল করার জন্য যারা দায়ী বা জড়িত বলে মনে করা করা হবে তাদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের সরকার, রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ এবং গণমাধ্যমসহ সকলেই আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হওয়ার আকাঙ্খা প্রকাশ করেছেন এবং এই আকাঙ্খা বাস্তবায়নেই আমাদের এই ঘোষণা।

গত ৩ জুন দলীয় এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কে আমাদের ভিসা দেবে না, কে স্যাংশন দেবে, ও নিয়ে মাথাব্যথা করে লাভ নেই। ২০ ঘণ্টা জার্নি করে, আটলান্টিক পার হয়ে আমেরিকা না গেলে কিচ্ছু যায় আসে না। পৃথিবীতে আরও অনেক মহাসাগর আছে, অনেক মহাদেশ আছে। আমরা সেসব মহাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব করব। গত ৭ জুন ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তা বেদান্ত প্যাটেল বলেন, গত বছর আমরা আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করেছি এবং চলতি ২০২৩ সালে আমরা যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্ককে আরও গভীর ও উচ্চপর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই। নিরাপত্তা ও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতামূলক সম্পর্ক রয়েছে। আমরা এই সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই এবং এই ব্যাপারটিকে যুক্তরাষ্ট্র বেশ গুরুত্ব দিচ্ছে। এর আগেও এ ব্যাপারে আপনাদের কয়েকজন সহকর্মী সাংবাদিকদের সঙ্গে এই ইস্যুতে আমি আলোচনা করেছি। জলবায়ুসহ বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্র আগ্রহী। তবে বর্তমানে আমরা নিরাপত্তা সহযোগিতাকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছি, ব্রিফিংয়ে বলেন বেদান্ত প্যাটেল।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের ৪ মাস পর, ১৯৭২ সালের ৪ এপ্রিল বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় যুক্তরাষ্ট্র। স্বীকৃতির পাশাপাশি সে সময় ৩০০ কোটি ডলার সহায়তাও দিয়েছিল ওয়াশিংটন। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের উন্নয়নের অন্যতম প্রধান অংশীদার যুক্তরাষ্ট্র। ১৯৭২ সাল থেকে এ পর্যন্ত দেশটির সরকারি দাতাসংস্থা ইউএসএইড শত শত মার্কিন ডলার সহায়তা দিয়েছে বাংলাদেশকে। বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নেও সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। সূত্র: জাস্টনিউজ ও ইউএনবি।

https://dailysangram.info/post/526918