৮ জুন ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ৯:৩০

খেলাপি ঋণে ঝুঁকিতে আর্থিক খাত

বিশ্বব্যাংক বলেছে, মাত্রাতিরিক্ত খেলাপি ঋণ, মূলধন সংকট ও সুশাসনের অভাবে বাংলাদেশের আর্থিক খাতে ঝুঁকির মাত্রা বেড়েছে। একই সঙ্গে সরকারি ও বৈদেশিক ঋণ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ায় বাড়ছে আর্থিক সংকট। ডলার সংকটের কারণে গত কয়েক মাস ধরে আমদানি নিয়ন্ত্রণের কারণে শিল্পের কাঁচামাল আমদানি কমেছে। জ্বালানি সংকটও প্রকট আকার ধারণ করেছে। এতে শিল্প উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিভিন্ন সেবার ক্ষেত্রেও চাপ বেড়েছে।

মঙ্গলবার রাতে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ‘গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্ট’ জুন ২০২৩ ইস্যুতে সংস্থাটি এসব কথা বলেছে। একই সঙ্গে তারা দক্ষিণ এশিয়া ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কেও প্রতিবেদনে তথ্য উপস্থাপন করেছে। তবে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার তারা অপরিবর্তিত রেখেছে। তবে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির হার কমিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মাত্রাতিরিক্ত খেলাপি ঋণ, মূলধন ঘাটতি ও সুশাসনের অভাবে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশের আর্থিক খাত ঝুঁকির মুখে রয়েছে। এর মধ্যে শ্রীলংকা, পাকিস্তান রয়েছে উচ্চ ঝুঁকিতে। এসব দেশের আর্থিক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের তুলনায় অনেক বেশি। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ও শ্রীলংকায় খেলাপি ঋণের পরিমাণ অনেক বেড়েছে। বাংলাদেশে করপোরেট খাতে সুশাসনের ঘাটতি ও মূলধন ঘাটতিতে আর্থিক খাতে ঝুঁকির মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে।
সূত্র জানায়, আগে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের হার বাংলাদেশে ছিল সর্বোচ্চ। এখন শ্রীলংকাতে সর্বোচ্চ। নন ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে খেলাপি ঋণের শীর্ষে এখনও বাংলাদেশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈশ্বিক সংকটের কারণে বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলের অনেক দেশের মুদ্রার মান কমে গেছে। বৈশ্বিকভাবে পণ্যের দাম বৃদ্ধির ফলে আমদানি ব্যয় বেড়েছে। সরকারকে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা বাড়াতে হয়েছে। রাজস্ব আয় কমে গেছে। এতে সরকারকে বেশি পরিমাণে ঋণ নিতে হচ্ছে। এছাড়া বৈদেশিক ঋণও বেড়েছে। আমদানি ব্যয় ও বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের ফলে রিজার্ভ কমে যাচ্ছে, যা বৈদেশিক মুদ্রায় বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করেছে। এসব কারণে প্রবৃদ্ধির হার কমে যেতে পারে। বিশ্বব্যাংক মনে করে চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ২ শতাংশ হতে পারে। এদিকে সরকার বলছে, সাড়ে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈশ্বিক প্রভাবে মূল্যস্ফীতির হার এখন ঊর্ধ্বমুখী। ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলো সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতির হার কমাতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে এ হার বাড়ছে। মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণ করছে। এ কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি সুদের হারও বাড়িয়েছে। কিন্তু ঋণের সুদহারের ক্ষেত্রে সীমা আরোপিত থাকায় অর্থনীতিতে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতির সুফল মেলেনি।

এতে আরও বলা হয়, ডলার সংকটের কারণে বাংলাদেশ কয়েক মাস ধরে আমদানির ওপর বিভিন্ন ধরনের নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ আরোপ করেছে। এতে ডলারের কিছুটা সাশ্রয় হয়েছে। তবে আমদানি কমেছে। এর মধ্যে শিল্পের কাঁচামাল আমদানি কমেছে বেশি মাত্রায়। একই সঙ্গে দেশে জ্বালানি সংকটও রয়েছে। এসব কারণে দেশের শিল্প উৎপাদন কমে গেছে। সেবা খাতে বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি হয়েছে।

আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের ও ডলারের দাম বাড়ায় বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেত্রে ভারসাম্য ব্যাহত হচ্ছে। এতে ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রার বিনিময় হারে চাপ বেড়েছে। স্থানীয় মুদ্রার মান কমে যাচ্ছে। এতে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে বাংলাদেশসহ নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলংকা আমদানির ওপর বেশকিছু নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা নিয়েছিল। এতে দেশগুলোতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতি মন্থর হয়ে পড়ে, যার নেতিবাচক প্রভাব এখনও রয়েছে। তবে এখন ওইসব দেশের মধ্যে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক লেনদেন ভারসাম্য পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব দেশে কর্মসংস্থানের গতি কিছুটা বেড়েছে। তবে পরিবারের প্রকৃত উপার্জন এখনও করোনা মহামারির আগের পর্যায়ে যেতে পারেনি।

গত ফেব্রুয়ারি থেকে বাংলাদেশ আইএমএফের একটি ঋণ কর্মসূচিতে আছে। আন্তর্জাতিক লেনদেনে ভারসাম্য রক্ষা করা এবং আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা থেকে বের হয়ে আসার জন্য বাংলাদেশ এই ঋণ নিয়েছে।

প্রতিবেদনে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। আগে বিশ্বব্যাংক বলেছিল বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৭ শতাংশ হবে। এখন তা বাড়িয়ে বলেছে ২ দশমিক ১ শতাংশ হবে। তবে আগামী বছরে প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস সামান্য কমিয়ে ২ দশমিক ৪ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার প্রবৃদ্ধি সামান্য বাড়িয়ে ৫ দশমিক ১ শতাংশ ধরা হয়েছে। আগে ছিল ৪ দশমিক ৭ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে ভারতের প্রবৃদ্ধি সামান্য কমে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ হতে পারে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/683456