২৯ মে ২০২৩, সোমবার, ১১:২৯

বন্ধ হচ্ছে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র

নানা জল্পনা-কল্পনার পর শেষ পর্যন্ত বন্ধই হতে চলেছে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র। কয়লার যোগান না থাকায় ২৫ মে একটি ইউনিট বন্ধ করতে হয়েছে। দ্বিতীয় ইউনিট চলবে ২ জুন পর্যন্ত। কয়লার চালান আসার কথা জুনের শেষে। তখন আবার উৎপাদনে যাবে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র। এমনটিই জানানো হয়েছে সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে। জানা গেছে, ডলার-সঙ্কটে বিল বকেয়া থাকায় কয়লা সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে দেশের সবচেয়ে বড় এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে। তিন বছর আগে উৎপাদনে আসার পর এবারই প্রথম পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হতে যাচ্ছে। এতে বাড়বে লোডশেডিং।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, পটুয়াখালীর পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটির দু’টি ইউনিট মিলে উৎপাদনের সক্ষমতা ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট। সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, এই কেন্দ্র দিনে গড়ে ১ হাজার ২শ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছিল। কয়লা না থাকায় ২৫ মে একটি ইউনিট বন্ধ করা হয়েছে। এখন ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বাকি ইউনিট থেকে দিনে ৪৫০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। এভাবে ২ জুন পর্যন্ত চলতে পারে। এরপর আগামী ৩ জুন থেকে প্রায় এক মাসের জন্য পুরো উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতে পাওে বলে মনে করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে বিসিপিসির পক্ষে গণমাধ্যমকে জানানো হয়েছে, বৈশ্বিক সঙ্কটের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও ডলার সরবরাহের চেষ্টা করছে। এ মাসের মধ্যেই ১০ কোটি ডলার ব্যবস্থা করার আশ্বাস পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার পাওয়া গেছে। এটি দিয়ে কয়লা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে রাজি করানো হচ্ছে। এতে তারা নতুন করে কয়লা সরবরাহ শুরু করতে পারে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কর্মকর্তারা বলছেন, তিন বছর ধরে পায়রা থেকে বিদ্যুৎ আসছে। এটি এক দিনের জন্যও বন্ধ হয়নি। দেশের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য এ বিদ্যুৎকেন্দ্র কয়লার অভাবে বন্ধ হয়ে গেলে উৎপাদন অনেক কমে যাবে। এটি বন্ধ হলে বিদ্যুতের চাহিদা ও উৎপাদনের মধ্যে বড় পার্থক্য তৈরি হবে। এতে লোডশেডিং বাড়তে পারে। এমনিতেই গ্যাসের অভাবে অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো যাচ্ছে না।

অবশ্য, জ্বালানিসঙ্কটে ২৩ দিন বন্ধ থাকার পর আবার উৎপাদনে গেছে কয়লাভিত্তিক রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। ১৬ মে রাত ৯টা ১০ মিনিটে রামপালে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। এর আগে গত ১৫ এপ্রিল রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ হয়ে যায়। এর চার দিন পর এটি আবার চালু হয়। কিন্তু কয়লার অভাবে ২৪ এপ্রিল থেকে আবার বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছে বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফপিসিএল)। এর আগে কয়লার অভাবে ১৪ জানুয়ারি থেকে এ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। মূলত, ডলার-সঙ্কটে ঋণপত্র খুলতে না পারায় কয়লা আমদানি নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। একপর্যায়ে কয়লার সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। তখন এক মাস পর উৎপাদনে ফিরেছিল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কর্মকর্তারা বলছেন, এটি বন্ধ হলে বিদ্যুতের চাহিদা ও উৎপাদনের মধ্যে বড় পার্থক্য তৈরি হবে। এতে লোডশেডিং বাড়তে পারে। এমনিতেই গ্যাসের অভাবে অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো যাচ্ছে না। ভারত-বাংলাদেশ যৌথ মালিকানায় নির্মিত রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রিিট গত ডিসেম্বরে একটি ইউনিট উৎপাদনে আসার পর এ পর্যন্ত কয়েক দফায় বন্ধ হয়েছে। চুক্তির প্রায় ১০ বছর পর গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করে।

দেশে লোডশিডিং এখন অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। এমতাবস্থায় চলমান বিদুৎকেন্দ্রগুলো যদি একের পর এক বন্ধ হয়ে যায় তাহলে আগামী দিনে সার্বিক পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। এমতাবস্থায় পায়রা বিদুৎকেন্দ্র যাতে কোন ভাবেই বন্ধ না হয় সে জন্য জরুরিভিত্তেতে কয়লার যোগান নিশ্চিত করা দরকার। অন্যথায় আগামী দিনে লোডশেডিং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।

https://dailysangram.info/post/525842