২৬ মে ২০২৩, শুক্রবার, ৭:৪৪

ইভিএমের ভোটে ধীরগতি

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দিনভর ভোটের ধীরগতি লক্ষ্য করা গেছে। এ ছাড়া ইভিএম মেশিন নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে

সাধারণ ভোটারদের। ভোগড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানেও ভোটের উপস্থিতি অনেক কম। সেই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার আশেক মোহাম্মদ বলেন, আমার কেন্দ্রে মোট ভোটার ৩ হাজার ৩০ জন। সকাল সোয়া ১১টা পর্যন্ত ২৫৮ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।

চান্দনা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ কেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ভোটার উপস্থিতি একেবারেই কম। এ কেন্দ্রে ৩৫৮৭ ভোট। এ ছাড়াও পূর্ব চান্দনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়, এম এ রাজ্জাক মাস্টার আলিম মাদ্রাসা, গাজীপুর উছাইনিয়া দাখিল মাদ্রাসা, ছোট দেওড়া অগ্রণি উচ্চ বিদ্যালয়, উত্তর খাইলপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রগুলোতেই একই অবস্থা লক্ষ্য করা গেছে। বামনা ও টঙ্গী পশ্চিম থানা এলাকার অন্তত ৫০টি কেন্দ্রে টেবিল ঘড়ির কোনো এজেন্ট নেই। কেন্দ্রগুলোর দায়িত্বরত প্রিজাইডিং অফিসাররা বলেছেন, গতকাল রাতেই তালিকা ধরে এজেন্টদের ফোন করা হয়েছে। তারা কোনো সাড়া দেননি।

সকালে কেউই ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত হননি। কেন্দ্রের নির্ধারিত ফর্মেও স্বাক্ষর তারা করেননি। তবে কাউন্সিলর প্রার্থী সবার এজেন্ট আছেন।

সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের ১০ ধরনের নিয়ম মেনে চলতে বলেছে নির্বাচন কমিশন। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ভোটকক্ষ হতে নিরাপদ দূরত্বে থেকে সচিত্র সংবাদ প্রচার করতে পারবেন সাংবাদিকরা। কিন্তু এই নির্দেশনার কথা জানেন না গাজীপুর সিটি নির্বাচনে চান্দনা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাশিদাতুল ইসলাম। গতকাল গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন কাভার করতে গিয়ে এই ম্যাজিস্ট্রেটের অসহযোগিতায় পড়েন গণমাধ্যমকর্মীরা। তিনি কেন্দ্রের নিরাপদ দূরত্বেও সাংবাদিকদের ফোন নিয়ে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না। এমনকি ইসির অনুমোদিত কার্ড থাকা সত্ত্বেও কক্ষে সাংবাদিকদের ঢুকতে দিচ্ছেন না এই ম্যাজিস্ট্রেট। তিনি বলেন, কেন্দ্রের মধ্যে ফোন নিয়ে কাউকে ঢুকতে দেয়া হবে না। ছবি তোলা যাবে না। সবাই ফোন নিয়ে প্রবেশ করছে। কেউ নির্দেশনা মানছে না। এ সময় এই কর্মকর্তাকে ইসির নির্দেশনার কথা বলা হলে তিনি বলেন, নির্দেশনায় বলা হয়েছে ফোন নিয়ে কেন্দ্রে কেউ ঢুকতে পারবে না। এ বিষয়ে সংবাদকর্মী জিন্নাত আরা বলেন, নির্বাচন কমিশনের নীতিমালা অনুসরণ করে আমি দায়িত্ব পালন করছিলাম। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেট বলছেন আপনারা এখানে দাঁড়িয়ে থাকলে আমার চাকরি চলে যাবে। তিনি আমাদেরকে কেন্দ্রে ঢুকতে দেননি। পল্লব নামে আরেক গণমাধ্যমকর্মী বলেন, ইসির নির্দেশনায় বলা হয়েছে ভোটকক্ষ থেকে নিরাপদ দূরত্বে থেকে সচিত্র সংবাদ প্রচার করা যাবে, কিন্তু এই কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা ম্যাজিস্ট্রেট সেটি করতে দিচ্ছেন না। যদিও এখানে দলীয় নেতাকর্মীরা ফোন নিয়ে প্রবেশ করছে।

ওদিকে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাল ভোট দেয়ার চেষ্টা করায় আবু তাহের সিদ্দিকী নামে নৌকার এক সমর্থককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল নগরীর ভোগড়া ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের ১০৩নং উম্মুল কুরা হিফজ মাদ্রাসা কেন্দ্র থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
কেন্দ্রের দায়িত্বরত প্রিসাইডিং অফিসার আব্দুল লতিফ মানবজমিনকে বলেন, জাল ভোট দেয়ার চেষ্টা করায় এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। জানা গেছে, গ্রেপ্তার আবু তাহের মোবাইল ফোন নিয়ে অবৈধভাবে কেন্দ্রে প্রবেশ করে জাল ভোট দেয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় দায়িত্বরত পোলিং এজেন্টরা বাধা দেন। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত এসে তাকে আটক করে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে যান। ভ্রাম্যমাণ আদালত তাকে ৩ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়। এ বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রেহানা মজুমদার মানবজমিনকে বলেন, ভোটে অনিয়মের অভিযোগে ১০৩নং কেন্দ্র থেকে গ্রেপ্তার ব্যক্তির নাম আবু তাহের সিদ্দিকী। তাকে ৩ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে ভোগড়ার দুই কেন্দ্রে টেবিল ঘড়ির এজেন্টদের দেখা যায়নি। কেন্দ্র দুটি হলো ১০৩নং ভোগড়া উম্মুল হিফজ মাদ্রাসা কেন্দ্র ও ভোগড়া ৪০নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্র দুটির প্রিজাইডিং অফিসার জানান, জায়েদা খাতুনের এজেন্টরা স্বাক্ষর দিয়েছেন। কিন্তু তারা কেন্দ্রে উপস্থিত হননি। টেবিল ঘড়ির এজেন্টদের উপস্থিতি ছাড়াই ভোটগ্রহণ চলছে।


https://mzamin.com/news.php?news=57277