২৪ মে ২০২৩, বুধবার, ১১:৫৪

দ্রব্যমূল্যে ঘুম হারাম, নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ নেই

রোদ, বৃষ্টির ঋতু। ধানকাটা প্রায় শেষ। কাজে কর্মে ঢিলগতি। উত্তর জনপদের মানুষ কিছুটা হাফ ছেড়ে বসে অলস সময় পার করছেন। জমিতে তেমন আবাদ নেই। সবজি আছে অল্প জমিতে। সেসব আবাদ তদারকি ছাড়া তেমন কাজ নেই হাতে। বাড়ির উঠানে কিংবা পুকুর পাড়ে আম গাছের ছায়ায় বসে অবসর কাটছে। বিকাল থেকে জমে ওঠে গ্রামের চায়ের দোকান। দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ভাবনার সুযোগ নেই সাধারণ মানুষের।

কিছুদিন আগেও সাধারণ মানুষ দেশ নিয়ে, সরকার নিয়ে, জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নিজের মধ্যে আলোচনা করতো। সম্প্রতি দেশের বেশকিছু আসনে বিএনপি’র ছেড়ে দেয়া সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন হয়েছে। নতুন কমিশনের অধীনে এসব নির্বাচন নিয়ে মানুষের মধ্যে কিছু আগ্রহ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু শেষমেশ অতীত বছরগুলোর নির্বাচনের চিত্র এই নির্বাচনগুলোতে দেখে পুরো আস্থাই হারিয়ে ফেলেছে মানুষ।

বিশেষ করে গাইবান্ধা-৫ সাঘাটা-ফুলছড়ি আসনের উপনির্বাচনের দৃশ্য সিসি ক্যামেরায় দেখে স্বয়ং নির্বাচন কমিশন হতাশাব্যঞ্জক বক্তব্য দিয়ে তাৎক্ষণিক বাতিল করে দেয়। এরপর দেশে আরও বেশকিছু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ নির্বাচনগুলোর চিত্র দেখে মানুষ এখন নির্বাচনকে অন্যভাবে দেখছেন। এরমধ্যে দিনে দিনে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি মানুষকে ভাবিয়ে তুলছে। সংসার চালানোর টেনশনে তারা। চালের দাম উপরে উঠে আর নামেনি। ডালের দাম, চিনির দাম, মাছ-গোশত কোনো কিছুই সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নেই। এখন সবজিটাও কিনতে পারছেন না সাধারণ মানুষ। ৫০ থেকে ৮০ টাকা কেজি সবজি। ভাবা যায়? ডিমের হালিও ৪৪ থেকে ৪৮ টাকায় ওঠানামা করছে। পরিবারের চাহিদার চার ভাগের এক ভাগও পূরণ করতে পারছে না অনেকে। সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ যোগ হয়েছে পাহাড় হয়ে। দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়ছে। কোথাও কথা বলার সুযোগ নেই। মানববন্ধন নেই, বিক্ষোভ নেই। অনেকটা নিষ্পেষিত হয়ে গুমরে কাঁদছে মানুষ। কোনো রকমে দিন যাচ্ছে। আগামীকাল কীভাবে কাটবে, পরিবারের চাহিদাগুলো কীভাবে মিটবে, এসবই এখন নিত্যদিনের ভাবনা।

কথা হয় গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার সোহাগ খন্দকারে সঙ্গে। বেকার যুবক। চাকরির বাজারে নিজেকে অসহায় মনে করেন তিনি। বিয়ে করেছেন। ঘরে একটি শিশুসন্তান রয়েছে। দিনের পর দিন ক্রমান্বয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়ছে। আয় নেই। পকেটে টাকা নেই। বাজারে যাওয়ার সাহস হারিয়ে ফেলেছেন। কোলের শিশুর জন্য খাদ্য সেখানেও আকাশ ছোঁয়া দাম। কেন এত দাম বাড়ছে তার উত্তর কারও কাছেই নেই। বাজারে গরুর দাম তুলনামূলক স্বাভাবিক। কিন্তু গোশতের দাম ৮০০ টাকা। কেন ৮০০ টাকায় বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা সেই জিজ্ঞাসাটুকুও কেউ করে না। জীবন-জীবিকার চিন্তায় এখন আর ভোট নিয়ে ভাবার সময়, আগ্রহ কিছুই নেই তার হাতে। এদেশের মানুষ তার নিজের ভোট নিজে দিতে পারবেন বলে বিশ্বাস হয় না সোহাগের।

বগুড়া জেলা শহর থেকে বেশ দূরে গাবতলী উপজেলার দুর্গাহাটা, কদমতলী বাজার। শাজাহানপুর থানা টেংগামাগুর বাজার, কাহালুর কলমাবাজার, শিবগঞ্জের মোকামতলাসহ আরও বেশকিছু বাজারে ঘুরে মানুষের মধ্যে হতাশার চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। আব্দুস সাত্তার, সোহেল মিয়া, আল আমিন, জুয়েল মিয়া। দেশ নিয়ে, নির্বাচন নিয়ে তাদের এই মুহূর্তে¡র ভাবনাগুলো হতাশাজনক। নির্বাচন এদেশে সঠিকভাবে হবে কিনা সেই বিশ্বাস নেই কারোরই মধ্যে। গ্রামের এই মানুষগুলো আশা করেছিল দেশের চলমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি, জ্বালানি তেল এসব নিয়ে বড় ইস্যু দাঁড় করিয়ে সাধারণ মানুষের কথা বলবে বিএনপি। কিন্তু বিএনপিকে সেভাবে মাঠে পায়নি সাধারণ মানুষ। ফলে চলমান বাংলাদেশে উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে মুক্তির পথ দেখছে না কেউই।

https://mzamin.com/news.php?news=56944