চিনির পর এবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন তেল আমদানি করা হচ্ছে। মোট এক কোটি ১০ লাখ লিটার তেল আমদানি করা হবে। এর দাম পরবে ১২৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। প্রতি লিটার তেলের মূল্য হবে ১৪০ টাকা ১৬ পয়সা। যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার ‘অ্যাকসেনচ্যুয়েট টেকনোলজি ইনকরপোরেশন’ এই তেল সরবরাহের করার সুযোগ পাচ্ছে বলে জানা গেছে। আজ বুধবার অনুষ্ঠেয় সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে। উল্লেখ্য, গত বুধবারই যুক্তরাষ্ট্রের এই কোম্পানির কাছ থেকে চিনি কেনার একটি প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে।
জানা গেছে, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ‘ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ’ (টিসিবি)। সংস্থার ফ্যামিলি কার্ডধারী নিম্ন আয়ের এক কোটি পরিবারের মধ্যে প্রতি মাসে ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ চাহিদা, সরবরাহ ও মূল্য স্থিতিশীল রাখতে ১ কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল আমদানি করা হবে। ভোজ্যতেল আমদানির জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হলে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার ‘অ্যাকসেনচ্যুয়েট টেকনোলজি ইনকরপোরেশন’ (স্থানীয় এজেন্ট : ওএমসি লিমিটেড, ঢাকা) নামের একটি মাত্র প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশ নেয় এবং দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি কর্তৃক রেসপনসিভ হিসেবে বিবেচিত হয়।
তবে মূল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক হলেও ভোজ্যতেলের উৎস হচ্ছে মালয়েশিয়া। অর্থাৎ মালয়েশিয়া থেকে এই সয়াবিন তেল সরবরাহ করা হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ধরা হয়েছে ১ দশমিক ১০১ ডলার। আর প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাফতরিক প্রাক্কলিত দর হচ্ছে ১ দশমিক ২৭ ডলার। সে হিসাবে মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ক্রয়মূল্য দাফতরিক প্রাক্কলিত দরের চেয়ে দশমিক ১৬৯ ডলার কম। এ অবস্থায় ১ কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল আমদানিতে মোট ব্যয় হবে ১ কোটি ২১ লাখ ১১ হাজার ডলার। বাংলাদেশী মুদ্রায় ১২৯ কোটি ৫৮ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম পড়বে ১৪০ টাকা ১৬ পয়সা।
সূত্র জানায়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থা ‘ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ’ (টিসিবি)-এর ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনায় ২,৬১,৬০০ মে.টন পরিশোধিত সয়াবিন তেল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। মোট চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ১ কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল ক্রয়ের একটি প্রস্তাব গত ৩ মে টিসিবি থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। সমগ্র বাংলাদেশে (সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাসহ) টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারী নিম্ন আয়ের প্রায় ১ কোটি পরিবারের মাঝে প্রতি মাসে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য বিক্রির জন্য টিসিবি কর্তৃক আন্তর্জাতিকভাবে ১ কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল আমদানি করার সিদ্ধান্ত নেয়।
সূত্র জানায়, টিসিবি কর্তৃক ১ কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল আন্তর্জাতিকভাবে ক্রয়ের জন্য পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা ২০০৮ অনুসরণ করে গত ১৯ মার্চ আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্রের বিজ্ঞাপনটি দেশের দু’টি দৈনিক পত্রিকা এবং সিপিটিইউর ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। দরপত্র দাখিলের সর্বশেষ তারিখ ৩০ এপ্রিল ছিল। দরপত্রের কার্যকারিতার মেয়াদ ৮ জুন পর্যন্ত। দরপত্রে নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে একটি দরপত্র পাওয়া যায়। গত ৩০ এপ্রিল দরপত্র উন্মুক্তকরণ কমিটি দরপত্রটি উন্মুক্ত করে। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সভা গত ২ মে তারিখে অনুষ্ঠিত হয়। মূল্যায়ন কমিটি কর্তৃক প্রাপ্ত দরপত্রটি রেসপনসিভ বিবেচিত হয়।
দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি রেসপনসিভ দরদাতা ‘অ্যাকসেনচ্যুয়েট টেকনোলজি ইনকরপোরেশন’-এর মালয়েশিয়া উৎসের ১ কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল ২ লিটার পেট বোতলে প্রতি লিটারের প্রস্তাবিত দর সিএফআর(সি)/সিপিটি পর্যন্ত ১ দশমিক ১০১ ডলার মূল্যে ক্রয়ের সুপারিশ করা হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশে গত ২ মে তারিখে টিসিবি থেকে অনুমোদন দেয়া হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এই তেল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।