২২ মে ২০২৩, সোমবার, ৩:২৪

যথেষ্ট মজুতেও পেঁয়াজের দাম কমছে না

দাম কমার প্রভাব নেই দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ ভোগ্যপণ্যের বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা বাড়াচ্ছে পেঁয়াজের দাম। এক মাসে কেজিপ্রতি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৩৫-৪০ টাকা। খুচরায় যা ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এ বাজারে অন্য গুরুত্বপূর্ণ মসলা রসুনের মজুত পর্যাপ্ত থাকলেও আদার পরিমাণ কম। যে কারণে আদার দামও বেশি। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মার্চ মাসে যে পেঁয়াজ ৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, দুই মাসের ব্যবধানে এখন খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ টাকা কেজি। তবে খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাইয়ের আড়তগুলোতে মান ও সাইজভেদে ৬৮-৭২ টাকা কেজিতেও বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ।

এদিকে পেঁয়াজের দাম ৮০ টাকা কেজি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। একইসঙ্গে, দাম কিছুটা কমতির দিকে থাকায় আরও দুই-তিন দিন বাজার পরিস্থিতি দেখে পেঁয়াজ আমদানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান তিনি। গতকাল রোববার সচিবালয়ে নিজ অফিস কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে কৃষিমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, গত বছর দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন ও মজুত ভালো ছিল। পেঁয়াজের দাম কম ছিল, কৃষকেরা কম দাম পেয়েছিল। দাম বাড়বে এই আশায় মজুত করে রাখা পেঁয়াজ পচে গিয়েছিল। কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সেজন্য, এবছর পেঁয়াজের কী অবস্থা আমরা দেখতে চাচ্ছি। তিনি জানান, কৃষকের কাছে, গুদামে ও আড়তদারের কাছে কী পরিমাণ পেঁয়াজ আছে, তা দেখতে গত দুই-তিন দিন মাঠ পর্যায়ের বিপুল সংখ্যক কর্মকর্তা খোঁজখবর নিয়েছেন। মাঠ থেকে তথ্য পেয়েছি যে, যথেষ্ট পেঁয়াজ মজুত আছে। তবে দাম আরও বাড়বে- এই আশায় বাজারে বিক্রি করছে না। এছাড়া কেবলই পেঁয়াজের মৌসুম শেষ হয়েছে। এই মুহূর্তে দাম বাড়ার কথা না।

সিন্ডিকেটের হাত আছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, পেঁয়াজের দাম বেশি হওয়ায় মধ্যম আয়ের, সীমিত আয়ের মানুষের কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু আমরা শেষ পর্যন্ত চাষির স্বার্থটা দেখতে চাচ্ছি। কারণ, গতবছর কৃষকেরা দাম কম পাওয়ায় এবছর পেঁয়াজের উৎপাদন কমেছে প্রায় দুই লাখ টনের মতো। আমরা উচ্চপর্যায়ে, নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনা করছি। গভীরভাবে বাজার পর্যবেক্ষেণ করছি। দুই-তিন দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে পেঁয়াজ আমদানি করা হবে কিনা।

মন্ত্রী বলেন, পেঁয়াজ খুবই পচনশীল ফসল। এটি রাখা কঠিন। পেঁয়াজ রাখা যায় না, শুকিয়ে যায়, পচে যায়। তবে আমরা কিছু প্রযুক্তি নিয়ে এসেছি, কীভাবে গুদামে রাখা যায়। যদি শেলফ লাইফ বাড়ানো যেত, তাহলে আমাদের যে উৎপাদন হচ্ছে, তাতে পেঁয়াজ দিয়ে বাজার ভাসিয়ে দেওয়া যেত। তিনি বলেন, ৪৫ টাকার বেশি পেঁয়াজের দাম হওয়া উচিত নয়। পেঁয়াজ আমদানি করা হলে ৪৫ টাকার নিচে চলে আসবে। কৃষিমন্ত্রী বলেন, সবকিছুর একটা ধারাবাহিকতা থাকে, কিন্তু গত এক সপ্তাহে পেঁয়াজের দামে সে ধারাবাহিকতা রাখা যায়নি।
খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা বলছেন, সিন্ডিকেট করে পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হয়েছে। কারণ এখন দাম বেশি থাকার সময়ে সরকার পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিলে ওই সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরাই শুরুতেই বেশি পরিমাণে পেঁয়াজ ঢুকিয়ে (আমদানি করে) প্রথম চালানেই মোটা অংকের টাকা তুলে নেবে। সরকার আমদানি বন্ধ করে দেওয়ার আগে থেকেই বড় বড় ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ কিনে নিয়েছেন। অনেকে জমিতে থাকার সময় দাদন খাটিয়ে আগাম পেঁয়াজ কিনে নিয়েছেন। এতে দাম বাড়ার কারণে কৃষকরা তেমন লাভবান হননি। তবে যারা ব্যবসায়ীদের কাছে পেঁয়াজ বিক্রি করেননি, তারা কিছুটা দাম পেয়েছেন। এখন কৃষকদের হাতে পেঁয়াজ নেই। তাই দামও বেড়ে গেছে।

এদিকে গত কয়েকদিন ধরে সারা দেশে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি চেয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম নিয়ন্ত্রক শামীমা আক্তার স্বাক্ষরিত একটি চিঠি কৃষি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, খুচরা বাজারে পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। টিসিবির তথ্যানুযায়ী প্রতি কেজি পেঁয়াজের মূল্য ১ মাস আগে ৩০ টাকা ছিল, যা গত সপ্তাহে ৫০ টাকা করে বিক্রি হয়েছে এবং বর্তমানে ৭০-৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজের সরবরাহ বৃদ্ধি করে বাজার পরিস্থিতি স্থিতিশীল করার উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। এ অবস্থায় পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল করার স্বার্থে জরুরি ভিত্তিতে সীমিত পরিসরে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানানো হলো।

এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম নিয়ন্ত্রক শামীমা আক্তার জানান, খুব অল্প সময়ের মধ্যে খোলা বাজারে পেঁয়াজের দাম অনেক বেশি বেড়েছে। যেহেতু বাজারদর নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মনিটরিং করে সেহেতু আমরা বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে কৃষি মন্ত্রণালয়কে পেঁয়াজ আমদানির অনুরোধ জানিয়েছি। তারা মজুদ এবং চাহিদা বিশ্লেষণ করে পেঁয়াজ আমদানি করতে পারে। তবে প্রাথমিকভাবে কী পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি হবে এবং কবে নাগাদ আমদানি করা হবে- এসব বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।

https://dailysangram.info/post/525215