২০ মে ২০২৩, শনিবার, ১২:২৫

মাচায় প্লাস্টিকের ছাউনি দিয়ে বাঁচার লড়াই

ভবন নির্মাণ করে আড়াই বছরের মধ্যে ব্যবসায়ীদের দোকান হস্তান্তরের আশা

পুড়ে যাওয়া বঙ্গবাজারে বাঁশের মাচার ওপর প্লাস্টিকের ছাউনি দিয়ে পণ্য বেচাকেনা শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। ছবি : কালের কণ্ঠ
পুড়ে যাওয়া বঙ্গবাজারে কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ব্যবসায়ীরা রোজার ঈদের আগেই কাঠের চৌকি পেতে খোলা আকাশের নিচে শুরু করেছিলেন ব্যবসা। এখন একদিকে জ্যৈষ্ঠের খররোদ, অন্যদিকে বৃষ্টি। ফলে এ অবস্থায় ব্যবসা করা সম্ভব না। এই রোদ-বৃষ্টি থেকে বাঁচতে চৌকির ওপর বাঁশের মাচা পেতে তার ওপর প্লাস্টিক বিছিয়ে চেষ্টা করছেন ব্যবসা চালিয়ে যেতে।

গতকাল শুক্রবার ছিল বঙ্গবাজারে সাপ্তাহিক ছুটির দিন। তবে গতকাল বঙ্গবাজারের ১.৭৯ একর খোলা মাঠে ব্যবসায়ীদের সরব আনাগোনা ছিল। সবাই ব্যস্ত মাঠে পাতা সারি সারি চৌকির ওপর বাঁশের মাচা ও প্লাস্টিক দিয়ে অস্থায়ী ছাদ নির্মাণের কাজে। ঈদুল আজহার আগে এই অস্থায়ী মার্কেটে কিছুটা বেচাবিক্রি করে ঘুরে দাঁড়াবার চেষ্টা করছেন তাঁরা।

গত ৪ এপ্রিল অগ্নিকাণ্ডের আট দিন পর পোড়া ধ্বংসস্তূপের ওপর অস্থায়ী চৌকি পেতে জামাকাপড় বিক্রি শুরু করেন বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স মার্কেটের ব্যবসায়ীরা।

ফাতেমা গার্মেন্টের মালিক চান মিয়া (৪২) সেখানে অস্থায়ী দুটি চৌকি পেতে ব্যবসা শুরু করেছেন। ঝড়-বৃষ্টিতে ব্যবসা চালিয়ে নিতে চৌকির ওপর বাঁশের মাচায় প্রথমে ফোম, তার ওপর প্লাস্টিকের পলিথিন দিয়ে ছাদ তৈরি করেছেন।

কালের কণ্ঠকে চান মিয়া বলেন, ‘আগুনে সব হারাইছি, মানুষের কাছ থাইকা টাকা সহায়তা লইয়া এই ছাদ দিলাম। সবার ছাদ হইয়া গেলে ওপরে আমরা ত্রিপল দিমু। বৃষ্টি-বাদলের মৌসুমে কোরবানির ঈদ, যা কতটুকু পারি ব্যবসা করতে লাগবে।’

ঝড়-বৃষ্টি থেকে মালপত্র বাঁচাতে ব্যবসায়ীরা নিজ খরচে এসব ছাদ নির্মাণ করছেন বলে জানান ব্যবসায়ী কাদের খান। শান্ত প্যান্ট হাউস নামে তাঁর একটি ভাড়া দোকান ছিল। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘সিটি করপোরেশন আমাদের বসতে দেওয়ার পর চৌকি পেতেছিলাম। এখন ঝড়-বৃষ্টি থেকে মালপত্র বাঁচাতে চৌকির ওপর ছাদ বানালাম। অনেক অভাবে আছি। তার পরও কষ্ট কইরা নিজের পকেটের টাকায় এই ছাদ বানালাম।’

বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণের অর্থ নির্ধারিত অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে। আগামী সপ্তাহ নাগাদ অ্যাকাউন্টে প্রধানমন্ত্রীর অনুদান আসবে। এই অর্থ উত্তোলন করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে সব ব্যবসায়ীর মধ্যে বণ্টন করা হবে। এ ছাড়া বঙ্গবাজার মার্কেটের সব বিক্রয়কর্মীকেও আমরা ক্ষতিপূরণ দিয়েছি।’

জায়গা পাননি দোতলা-তিনতলার ব্যবসায়ীরা : বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের আওতাধীন চারটি ইউনিটের প্রতিটি মার্কেট তিনতলা। ব্যবসায়ীরা জানান, এসব মার্কেটে প্রায় দুই হাজার ৯৬১টি দোকান ছিল। ১২ এপ্রিল খোলা মাঠে অস্থায়ী দোকান শুরু হলেও সেখানে বসতে পারেননি এসব মার্কেটের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার ব্যবসায়ীরা।

তাঁদের একজন ব্যবসায়ী আলমগীর খানের দোকান ছিল গুলিস্তান মার্কেটের দ্বিতীয় তলায়। তাঁর রায়হান ফ্যাশন দোকানটির অস্তিত্ব এখন শুধু কাগজে-কলমে। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘আমি কোথাও দোকান বসাইতে পারি নাই। দোতলা-তিনতলার কোনো ব্যবসায়ী চৌকি পাতার জায়গা পায় নাই। মালিক সমিতির সঙ্গে কথা বলেছি, তাঁরা আশ্বাস দিয়েছেন, আমরা বসার জায়গা পাব।’

আড়াই বছরের মধ্যে ভবন নির্মাণ করে ব্যবসায়ীদের মধ্যে দোকান হস্তান্তর করা হবে : বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের জমিতে বহুতল ভবন নির্মাণ করে তালিকা অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের দোকান বরাদ্দ দেওয়া হবে। এ লক্ষ্যে গত মঙ্গলবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের উদ্যোগে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র বঙ্গবাজারে ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন। গত মঙ্গলবারের সভায় মেয়র মালিক সমিতির সঙ্গে আলোচনা করেছেন। আগামী সপ্তাহে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে আমাদের ভবনের নকশা দেখানো হবে। আড়াই বছরের মধ্যে ভবন নির্মাণ শেষ করে ব্যবসায়ীদের মধ্যে দোকান হস্তান্তর করা হবে।’

https://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2023/05/20/1281642