২০ মে ২০২৩, শনিবার, ১২:১০

কুরবানির ঈদকে টার্গেট করে মসলার বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি

নিত্যপণ্যের দামে অস্থিরতা চলছে গত কয়েক মাস ধরে। এবার কুরবানির ঈদকে টার্গেট করে সব ধরনের মসলার দাম বাড়াচ্ছে ব্যবসায়ীরা। আদার দাম বৃদ্ধি পেয়ে ৪০০ টাকা কেজিতে উঠেছে। জিরার দাম কেজিতে ৩০০টাকা বেড়ে ৯০০ টাকা, আর এলাচের দাম কেজি প্রতি ২০০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ২৬শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজের দাম হঠাৎ করে দ্বিগুণ হয়ে ৮০ টাকায় উঠেছে, রসুনের দাম ১৮০ টাকা কেজি। এছাড়াও তেল, চিনি, আটা, ময়দার দাম গত সপ্তাহে বৃদ্ধি পেয়েছে। বেশকিছু সবজির দামও বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। ডিমের হালি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে, প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। ৩০০ টাকা কেজির কমে মিলছে না আদা। চীন থেকে আমদানি করা ভালোমানের আদার দাম উঠেছে কেজিপ্রতি ৪০০ টাকায়। অথচ মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগেই এ পেঁয়াজ ও আদার দাম ছিল বর্তমান দামের অর্ধেক। সপ্তাহখানে আগেও প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩৫ টাকায় এবং আদা ১৮০ টাকায়। অন্যদিকে এসময়ের ব্যবধানে আমদানি করা রসুনের দাম কেজিপ্রতি ৪০ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। মসলার বাজারে কাঁচামরিচের দামও এখন আকাশছোঁয়া। বাজারে কাঁচামরিচের কেজি এখন ২০০ থেকে ২২০ টাকা। কয়েকদিনের ব্যবধানে জিরার দাম কেজিপ্রতি ৩০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায়। সরকারি সংস্থা টিসিবির দেয়া তথানুযায়ী, গত এক সপ্তাহে অন্তত ১৫টি পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তার মধ্যে সয়াবিন তেল, ময়দা, মশুর ডাল, পেঁয়াজ, হলুদ আদা, জিরা, দারুচিনি, লবঙ্গ, এলাচ, ধনে, তেজপাতা, মুরগী, চিনি ও ডিম।

রাজধানীর বিভিন্ন মসলার বাজারে দেখা গেছে, মানভেদে প্রতি কেজি জিরা বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৮৬০ টাকা, যা সপ্তাহখানেক আগে বিক্রি হয়েছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়। আর গত বছরের এ সময় জিরার কেজি ছিল ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে পণ্যটির দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। গত সপ্তাহে লবঙ্গের কেজি ছিল ১৪শ’ থেকে ১৫শ’ টাকা। কেজিতে ১০০ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ১৫শ’ থেকে ১৬শ’ টাকা। অন্যদিকে বছরের ব্যবধানে পণ্যটির দাম বেড়েছে ৪০০ টাকা। গত বছরের এই সময়টাতে বিক্রি হয় ১১শ’ থেকে ১২শ’ টাকা দরে। একইভাবে গত সপ্তাহে বিক্রি হওয়া ৪৫০ থেকে ৫২০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া দারুচিনির দাম বেড়ে এখন হয়েছে ৪৯০ থেকে ৫২০ টাকা। অর্থাৎ সাত দিনের ব্যবধানে দাম কেজিতে বেড়েছে ৪০ টাকা পর্যন্ত। এক বছর আগে দাম ছিল ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। কেজিতে ৪০ থেকে ৫০ টাকা বেড়ে ধনিয়া বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৪০ টাকায়। সাত-আট দিন আগেও দাম ছিল প্রতি কেজি ১৫০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে। এক বছর আগে পণ্যটি কেনা যেত ১২০ থেকে ১৭০ টাকায়। ডলারের দাম বাড়ার কারণে মসলার দাম বেড়েছে বলে দাবি করছেন আমদানিকারকরা।

জানা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে ঢাকার বাজারে প্রায় সব ধরনের চাল কেজিতে ২-৩ টাকা করে কমেছে। প্রতিকেজি সরু মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৭০-৭২ টাকায়। গত সপ্তাহের এর মূল্য ছিল ৭৫ টাকা। ভালো মানের নাজির শাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়; আগে ছিল ৮২-৮৫ টাকা।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে, ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪০-১৫০ টাকায় (ডজন)। ব্রয়লার মুরগী গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ২১০ টাকায়। সোনালি মুরগির কেজি ৩৬০। গরুর গোশত হাড়সহ ৭৮০ থেকে ৮০০; খাসির গোশত বিক্রি হচ্ছে ১১০০ থেকে ১১৫০ টাকায়।

বাজারে দেখা গেছে, মুদি দোকানগুলোতে প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১৯০ টাকা ও চিনি ১৩০-১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে এখনো চিনির সংকট কাটেনি। অধিকাংশ দোকানে পাওয়া যাচ্ছে না প্যাকেটজাত চিনি।

সবজির বাজারে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে কোনো সবজির দাম কমেনি। বরং এ বছর চড়া দামের সবজির তালিকায় যোগ হয়েছে সচরাচর স্থিতিশীল থাকা আলুও। এখন অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বাড়তি দামে আলু কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। বাজারে আলুর দাম আরও বেড়ে এখন প্রতি কেজি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত দুদিন আগেও ছিল ৩৫ টাকা। রোজার ঈদের পর থেকেই ধীরে ধীরে আলুর দাম বাড়তে শুরু করে। তখন এ পণ্যটির দাম ছিল প্রতি কেজি ২৫ টাকা। অর্থাৎ এক মাসেরও কম সময়ের ব্যবধানে আলুর দাম কেজিপ্রতি বেড়েছে ১৫ টাকা। শুধু আলু নয়, বাজারে অস্থিতিশীল হয়ে ওঠেছে পেঁপের দামও। সারাবছর এ সবজিটি ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে কেনা গেলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বাজারে অন্যান্য সবজিও প্রতি কেজি ৬০ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে।

আলুর দাম বাড়ার বিষয়টি উঠে এসেছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যেও। সংস্থাটি বলছে, বাজারে গত এক মাসের ব্যবধানে আলুর দাম ২৯ শতাংশ বেড়েছে। আর বছরের ব্যবধানে দাম বেড়েছে প্রায় ৭৪ শতাংশ। গত বছর এসময়ে প্রতি কেজি আলুর দাম ছিল ১৮ থেকে ২৫ টাকা। যা এখন ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

অন্যান্য সবজির মধ্যে প্রতি কেজি শশা ৪০ টাকা, লেবুর হালি ২০ টাকা। লাউ প্রতি পিস ৬০-৮০ টাকায়। কাঁচামরিচ ২০০ টাকা কেজি। ধনিয়াতাপাতা ৪০০ টাকা কেজি। আর দাম বেড়ে দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এসপ্তাহে সবজির বাজারে প্রতি কেজি ৬০ টাকায় বিক্রি হওয়া সবজিগুলো হচ্ছে ঢেঁড়স, চিচিঙ্গা ও চালকুমড়া। আর প্রতি কেজি ৮০ টাকার মূল্যের সবজিগুলো হচ্ছে ফুলকপি, বাঁধাকপি, পটল, উস্তা, করলা, ধুন্দুল, ঝিঙে, বেগুন। প্রতিকেজি ১০০ টাকায় বিক্রি হওয়া সবজি গুলো হচ্ছে কাকরল, বরবটি, কচুরমুখি।

সবজির পাশাপাশি উত্তাপ ছড়াচ্ছে মাছের বাজারও। হুট করে সব ধরনের মাছের দাম কেজিপ্রতি ৩০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ৬০০ টাকা কেজির কমে কেনা যাচ্ছে না টেংরা, কই, শিং ও চিংড়ি মাছ। চাষের রুই-কাতলা বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকার বেশি দামে। দুই কেজি বা তারচেয়ে বড় হলে দাম কেজিতে আরও ১০০-২০০ টাকা বেশি গুনতে হচ্ছে। এমনকি ছোট আকারের পাঙাশ-তেলাপিয়া মাছের দামও এখন কেজিপ্রতি ২৪০-২৫০ টাকা। যা স্বাভাবিক সময়ে ২০০ টাকা কেজি বা তারও কমে পাওয়া যেতো।

https://dailysangram.info/post/525029