১৯ মে ২০২৩, শুক্রবার, ৩:০৮

চিনি নিয়ে নয়ছয় যেভাবে

সম্প্রতি দাম বাড়িয়ে নতুন করে চিনির মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। যদিও আগে থেকেই নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে চিনি বিক্রি করেছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। এখন বাড়ানোর পরেও নির্ধারিত দর মানছে না তারা। অতিরিক্ত দামেই চিনি বিক্রি করা হচ্ছে। গত ১১ই মে কেজিতে ১৬ টাকা বাড়িয়ে খোলা চিনি ১২০ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনির দাম ১২৫ টাকা নির্ধারণ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে আগে থেকেই বাজারে নির্ধারণ করে দেয়া দামের চেয়ে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশি দরে চিনি বিক্রি করেছে ব্যবসায়ীরা। এখনো সেই বাড়তি দামেই চিনি কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের।

সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবি’র হিসেবেই দেখা যায়, গতকাল ১২০ থেকে ১৪০ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হয়েছে প্যাকেটজাত ও খোলা চিনি। যা গত এক বছরের তুলনায় ৬৫ শতাংশ এবং গত মাসের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি। যদিও গতকাল খুচরা বাজারে এর চেয়ে বেশি দামে চিনি বিক্রি হতে দেখা গেছে। রাজধানীর কাওরান বাজার, ইব্রাহিমপুর বাজারে ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত চিনি বিক্রি হয়েছে।
গত মঙ্গলবার বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছিলেন, এক-দুই দিনের মধ্যে চিনির দাম কমবে।

দাম নির্ধারিত করে দেয়ার পরও যারা বেশিতে চিনি বিক্রি করছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারিও দেন মন্ত্রী।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, নতুন দাম নির্ধারণের পর প্যাকেটজাত চিনি চাহিদার তুলনায় খুব কম এসেছে। অন্যদিকে খোলা চিনিও আড়ৎ থেকে বেশি দামে সংগ্রহ করতে হচ্ছে। তাই তারা আড়ৎ থেকে চিনি কিনছেন না। কাওরান বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, চিনির সরবরাহ এখনও স্বাভাবিক হয়নি। যে কোম্পানিগুলো চিনি দেয়, তারা মাত্র সরবরাহ শুরু করেছে। আর দাম আগের মতোই।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ২৫ শতাংশ আরোপিত নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক, ১৫ শতাংশ ভ্যাট, পরিবহন ও পরিশোধন খরচ যোগ করে প্রতিকেজি চিনির মোট খরচ পড়ে ৯০ টাকা। সেই হিসাবে খুচরা বাজারে প্রতিকেজি চিনি বিক্রি হয়ার কথা সর্বোচ্চ ১০০ টাকায়। কিন্তু রমজানের শেষ সময় হতে বাজারে প্রতিকেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি। যদিও এতদিন সরকার নির্ধারিত পরিশোধিত খোলা চিনির সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ছিল ১০৪ টাকা।

সূত্র জানায়, চিনি আমদানির ব্যয় পরিশোধ করা হয়েছে ডলার প্রতি ১০৬ থেকে ১০৭ টাকার মধ্যে। সেই হিসাবে প্রতিকেজি চিনির বুকিং দর সর্বোচ্চ ৫৭ টাকা। ২৫ শতাংশ আরোপিত নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ও ১৫ শতাংশ ভ্যাট হিসেবে প্রতিকেজি চিনি আমদানিতে সরকারকে দিতে হয় ২২ টাকা। পাশাপাশি পরিবহন ও পরিশোধন খরচ পড়ে কেজিতে ৭ টাকা। অর্থাৎ বর্তমানে বাজারে থাকা প্রতিকেজি চিনি কারখানা পর্যায়ে সর্বোচ্চ ৮৬ টাকা। এক ব্যবসায়ী বলেন, আন্তর্জাতিক বুকিং দর অনুযায়ী পাইকারি পর্যায়ে প্রতিকেজি চিনি ৯৫ টাকা এবং খুচরায় সর্বোচ্চ ১০০ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা।

গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে সরকার বাজারে চিনির দাম কয়েক দফা নির্ধারণ করে। এরমধ্যে পাঁচ দফায় চিনির দাম বেঁধে দেয়া হলেও একবারও চিনির সরকারি মূল্য কার্যকর হয়নি। গত ৬ এপ্রিল সরকার ঘোষিত পরিশোধিত খোলা চিনির সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ছিল কেজিতে ১০৪ টাকা; আর পরিশোধিত প্যাকেটজাত চিনির দাম নির্ধারিত হয়েছিল প্রতিকেজি ১০৯ টাকা। গত ১১ই মে সেটি বাড়িয়ে খোলা চিনি ১২০ টাকা এবং প্যাকেটজাত চিনির দাম নির্ধারণ করা হয় ১২৫ টাকায়।

কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসেন বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের চিনির বর্তমান বুকিং দর এবং দেশীয় বাজারের বিক্রয় মূল্যে যথেষ্ট ফারাক রয়েছে। এ বিষয়ে সরকারের মনিটরিং প্রয়োজন।

https://mzamin.com/news.php?news=56188