১৯ মে ২০২৩, শুক্রবার, ২:৫৬

মে’র ১৮ দিনে ৩৭৩ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত

ধীরে ধীরে বাড়ছে ডেঙ্গুর শঙ্কা। সরকারি হিসাবেই চলতি মে মাসের ১৮ দিনে ৩৭৩ জন আক্রান্ত হয়েছে এবং একজনের মৃত্যু হয়েছে। অপর দিকে চলতি বছরের জানুয়ারি প্রথম দিন থেকে গতকাল পর্যন্ত দেশে এক হাজার ৩৫৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে মোট মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত পূর্বের ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ২৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকাতেই আক্রান্ত হয়েছে ২২ জন। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন অঞ্চলে আক্রান্ত হয়েছে সাতজন। এ ছাড়া গতকাল দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্তদের চিকিৎসা নিচ্ছে ১২৭ জন। এর মধ্যে ঢাকা শহরের ৫৩ সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছে ১০৫ জন।

সামনের জুন মাস থেকে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টি বাড়লে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা হঠাৎ করেই অনেক বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ আবহাওয়াবিদদের পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি বছরটি যেতে পারে তীব্র গরম ও খরা পরিস্থিতির মধ্যে। আর্দ্র ও গরম থাকতে পারে বাংলাদেশের আবহাওয়া। এডিস মশার বংশ বৃদ্ধির সাথে আর্দ্রতা ও গরমের সম্পর্ক রয়েছে। চলতি বছর জুন থকে অক্টোবর মাসে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব কম থাকতে পারে বলে জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা আভাস দিয়েছেন। ফলে বৃষ্টিপাতও কম হতে পারে এবং হতে পারে বেশ কিছু দিন পর পর। ডেঙ্গু জীবাণুবাহী এডিস মশার সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য এই পরিবেশটা আদর্শ।

মেডিসিনের চিকিৎসক মাহমুদুল ইসলাম বলেন, চলতি মাসে গত কয়েক দিন তীব্র গরমের পর কিছুটা বৃষ্টি হতে শুরু করেছে। এর ফলে বিভিন্ন স্থানে জমে থাকা পানিতে এডিস মশা ডিম ছেড়ে দিয়ে সহজেই বংশবৃদ্ধি করার সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। বাড়ির মধ্যে অথবা ঘরে জমে থাকা পানি পরিষ্কার করে ফেলা যায় কিন্তু বাড়ি অথবা ঘরের আশপাশের ঝোপ-জঙ্গলের ভেতরে জমে থাকা পানি ব্যক্তি উদ্যোগে পরিষ্কার করা সম্ভব নয়। ফলে মানুষের অজান্তেই এসব স্থানে এডিস মশা বংশ বৃদ্ধি করতে পারে। এসব স্থান থেকে পানি সরিয়ে ফেলতে সিটি করপোরেশন উদ্যোগ নিতে পারে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের জরিপে এডিস মশা বেড়ে ওঠার সবচেয়ে আদর্শ স্থান হিসেবে নির্মাণাধীন ভবনকে চিহ্নিত করেছে। একটি ভবন নির্মাণ শেষ করতে এক থেকে দুই বছর লেগে যায়। প্রথম দিকে নির্মাণাধীন ভবনের কাঠামো নির্মাণ করে শেষ করা হয়। এরপর দেয়াল এবং ফ্লোরে কাজ ধরা হয়। এর মধ্যে ফ্লোরে পানি জমে থাকতে পারে অনেক দিন। ঢাকা শহরের নির্মাণাধীন ভবনের ফ্লোরে জমে থাকা পানি অথবা ড্রামে জমিয়ে রাখা পানিতে এডিস মশা সবচেয়ে বেশি হারে বেড়ে উঠতে পারছে বলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের জরিপে উঠে আসছে প্রতিবারই। এই প্রবণতা বন্ধ করতে না পারলে ঢাকা থেকে ডেঙ্গুর প্রকোপ দূর করা প্রায় অসম্ভব।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালে সারা দেশে ৬২ হাজার ৩৮২ জন মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালেই ভর্তি হয়েছিলেন, এর বাইরে আরো অনেক ডেঙ্গু আক্রান্ত চিকিৎসা ছাড়াই সুস্থ হয়ে গেছেন এবং অনেকেই চিকিৎসকের প্রাইভেট চেম্বারে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে গেছেন। এদের হিসাব সরকারি খাতায় উঠানোর সুযোগ নেই। অন্য দিকে ২০২২ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ২৮১ জন মারা গেছেন। অপর দিকে ২০১৮ সালে ৮৭ হাজারের মতো মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিল বলে আইইডিসিআরের তথ্য থেকে জানা যায়। চিকিৎসা না নেয়া, চিকিৎসকের চেম্বারে গিয়ে চিকিৎসা করে সুস্থ হওয়া এবং তালিকার বাইরের হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি হয়ে সুস্থ হওয়া রোগীদের যোগ করলে লক্ষাধিকের বেশি হবে সংখ্যাটি। ২০২১ সালে ডেঙ্গু সংক্রমিতদের হাসপাতালে মোট ভর্তি হয়েছিলেন ২৮ হাজার ৪২৯ জন, মারা যান ১০৫ জন।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/749034