১৭ মে ২০২৩, বুধবার, ২:৪২

গভীর সঙ্কটে পোশাক খাত

তৈরি পোশাক খাতে সঙ্কট ক্রমেই ঘনিভূত হচ্ছে। কাজ না থাকায় বন্ধ হচ্ছে অনেক পোশাক কারখানা। ফলে বেকার হয়ে পড়ছেন শ্রমিকরা। নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) তথ্য বলছে, চলতি বছর প্রায় ৩০০ কারখানা বন্ধ হয়েছে। ফলে চাকরি হারিয়েছেন ২৫ থেকে ৩০ হাজার শ্রমিক। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ও শ্রমিক অসন্তোষকে পোশাক কারখানা বন্ধের মূল কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ যুদ্ধের কারণে নতুন কার্যাদেশ পায়নি বাংলাদেশের বেশিরভাগ পোশাক কারখানা।

কাজ না থাকার পাশাপাশি শ্রমিক অসন্তোষের কারণে ঈদের পর বন্ধ হয়ে যায় আশুলিয়ার ডি কে নিটওয়্যার। একই কারণে বন্ধ হয় গাজীপুরে অবস্থিত ক্রসলাইন ফ্যাক্টরি। আর ঈদের আগে ডি কে নিটওয়্যার কোম্পানিতে শ্রমিক অসন্তোষ দানা বাঁধে। এমডির কক্ষ ভাঙচুর করা হয়। এ কারণে প্রতিষ্ঠানটি গত ২ মে থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

বন্ধ হওয়া কারখানা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদের আগে বেশকিছু দাবি-দাওয়া নিয়ে কারখানাগুলোতে শ্রমিকরা আন্দোলন করেন। এমনকি ভাঙ্গচুর করেন তারা। একে তো অর্ডার নেই, অন্যদিকে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দিতে সমস্যা হলে আন্দোলন। এসব কারণে কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশ শিল্প পুলিশের তথ্য মতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ অর্থাৎ প্রথম তিন মাসে দেশের মোট ৯৭টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। এগুলো বন্ধ হওয়ার কারণে ২০ হাজার ২৭৬ শ্রমিক চাকরি হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছেন। বন্ধ হওয়া কারখানাগুলোর মধ্যে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত ১৭টি কারখানায় ছয় হাজার ৬৪৭ শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন। বিকেএমইএর সাত কারখানায় এক হাজার ৪৮৬ জন, বিটিএমইএর তিন কারখানায় দুই হাজার ৮৭ জন, বেপজার দুই কারখানায় দুই হাজার ৪৫ জন এবং অন্যান্য ৬৮টি কারখানায় আরও আট হাজার ৩২ শ্রমিক বেকার হয়েছেন।

এপ্রিলে খুলনা ও সিলেট এলাকার আরও ১৮৯টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। বেকার হয়েছেন হাজার হাজার শ্রমিক। সবমিলিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে প্রায় ৩০০ কারখানা বন্ধ হয়েছে। এসব কারখানায় কর্মরত ২৫ থেকে ৩০ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন, বলছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ সদস্যভুক্তসহ রপ্তানিমুখী কারখানাগুলোর ক্ষেত্রে খুব একটা সমস্যা হবে না। এগুলো কোনো না কোনোভাবে টিকে যাবে। হয়তো মালিকানা পরিবর্তন হবে কিংবা অন্য কোনো কোম্পানির অর্ডার নিয়ে কাজ করবে। সমস্যায় পড়বে গত চার মাসে খুলনা ও সিলেট অঞ্চলের যেসব কারখানা বন্ধ হয়েছে। এসব কারখানা এবং এখানে কর্মরত শ্রমিকদের বিষয়ে ভাবতে হবে। কারণ, সরকার রপ্তানিমুখী পণ্য উৎপাদনকারী কারখানার ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা দিয়েছে। বঞ্চিত করা হয়েছে ছোট ছোট কারখানাগুলোকে। করোনার প্রকোপ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে যে সঙ্কট দেখা দিয়েছে তা মোকাবিলায় এসব কারখানার ক্ষেত্রে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বড় ধরনের অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে দেশের মাঝারি ও ছোট পরিসরের পোশাক কারখানাগুলো। ফলে পুরো তৈরি পোশাক খাতই বড় ধরনের সঙ্কটের মুখে পড়েছে। এমতাবস্থায় দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের উল্লেখযোগ্য খাত তৈরি পোশাক শিল্পকে বাঁচাতে হলেও এই খাতে সরকারকে আরো বেশি প্রণোদনা দেয়া দরকার। একই সাথে সহজ শর্তে ঋণ দেয়ারও আবশ্যকতা রয়েছে। অন্যথায় পরিস্থিতি আগামী দিনে আরো অবনতি হতে পারে। যা জাতীয় অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করবে।

https://dailysangram.info/post/524670