২৩ এপ্রিল ২০১৭, রবিবার, ৮:৫৩

ভ্যাটে ১৫ শতাংশের আতঙ্ক

অনড় অর্থমন্ত্রী, উদ্বেগ বাণিজ্যমন্ত্রীর

বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং গত বুধবার নিজ দেশের প্রবৃদ্ধি বাড়াতে ৫৫ বিলিয়ন ডলার ভ্যাট কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন। মানুষ যাতে কেনাকাটা বাড়িয়ে দিয়ে অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে পারে, সে জন্যই এ ছাড় বলে জানিয়েছে দেশটির স্টেট কাউন্সিল। অথচ উন্নয়নের ক্ষেত্রে চীনের দেখানো পথে হাঁটার আকাঙ্ক্ষায় থাকা বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন আগামী ১ জুলাই থেকে প্রায় সব পণ্যে ১৫ শতাংশ ভ্যাটের আগাম চাপে। শিল্পের বিকাশ, বাণিজ্য সম্প্রসারণের সঙ্গে সম্পৃক্ত শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দুই সিনিয়র মন্ত্রীর কপালেও এ নিয়ে চিন্তার ভাঁজ। কিন্তু আইন প্রয়োগের দায়িত্বে থাকা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ বিষয়ে কোনো সমঝোতায় নারাজ। তিনি ব্যবসায়ীদের তুলে ধরা আতঙ্ক, শিল্প খাতের ওপর এর সম্ভাব্য বিরূপ প্রভাব আমলে না নিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে বড় শিল্প মালিক—সবার কাছ থেকে বাড়তি রাজস্ব আদায় করতে চান। এ অবস্থায় শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীকেই একমাত্র ভরসা মানছেন ব্যবসায়ীরা। আগামী ১ জুন নতুন বাজেট ঘোষণায় ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে সহনীয় পর্যায়ে না নামালে শেখ হাসিনার কাছে যাবেন ব্যবসায়ীরা।
বিভিন্ন দেশের অবস্থা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বাংলাদেশ ১৫ শতাংশ হারে সব পণ্যে ভ্যাট বসালে এশিয়ার অগ্রসরমান ও দ্রুত বর্ধনশীল বিভিন্ন দেশের তুলনায় চাপে পড়বেন শিল্প মালিক ও ভোক্তারা। এশিয়ার দুই বৃহৎ অর্থনীতির দেশ চীন ও ভারতে সর্বোচ্চ ভ্যাট ১৫ শতাংশের চেয়ে কম। চীনে বর্তমানে চার স্তরের ভ্যাট রয়েছে। এর মধ্যে খুচরা পণ্য, বিনোদনসামগ্রী, হোটেল, রেস্টুরেন্ট, ক্যাটারিং সার্ভিস, মোবাইল কল, পোস্টাল, ট্রান্সপোর্ট ও লজিস্টিকসের ওপর ১১ শতাংশ; আর্থিক ও বীমা সেবা, ইন্টারনেট ডাটা, তথ্য-প্রযুক্তি ও কনসাল্টিংয়ের ওপর ৬; জাতীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওপর ৩ এবং স্থানীয় শিক্ষার ওপর ২ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে। ভারতে রাজ্য ও পণ্যভেদে ১২.৫ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত ভ্যাট আরোপ করে গত ১ এপ্রিল থেকে ‘ন্যাশনাল গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স সিস্টেমস’ চালু হয়েছে। অর্থনীতিতে বাংলাদেশের প্রায় সমকক্ষ ভিয়েতনাম শুধু বিলাস পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আদায় করে। অন্য বেশির ভাগ পণ্যে ভ্যাট ১০ শতাংশ। তবে খাদ্যপণ্য, পরিবহন, মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি, কৃষিপণ্য ও সেবা খাতের ওপর ভিয়েতনামে ভ্যাট ৫ শতাংশ। রপ্তানি পণ্য ও রপ্তানি সহযোগী পণ্য, কৃষি উপকরণ, সার ও প্রাণিখাদ্যের ওপর কোনো ভ্যাট বসায়নি দেশটি। এশিয়ার অগ্রসরমান অর্থনীতির দেশ সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডে ভ্যাট ৭ শতাংশ। মালয়েশিয়া ২০১৫ সালের ১ এপ্রিল থেকে ৬ শতাংশ হারে ভ্যাট আদায় করছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ‘প্রগ্রেসিভ’ রাজস্ব ব্যবস্থার নামে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শে ১৯৯১ সালে বাংলাদেশে ভ্যাট ব্যবস্থার প্রচলন ঘটে। এরপর ২০১২ সালে নতুন ভ্যাট আইন সংসদে পাস হয়, যেখানে অল্প কিছু পণ্য বাদে বাকিগুলোতে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট বসানোর কথা বলা হয়েছে। তখন থেকেই ব্যবসায়ীদের আপত্তির কারণে এ আইন প্রয়োগ করতে পারেনি সরকার। ২০১৮ সালের শেষে সংসদ নির্বাচনের আগে আগামী অর্থবছরই পুরো বাজেট বাস্তবায়নের সুযোগ পাবেন অর্থমন্ত্রী। তাই আগামী অর্থবছর থেকেই এই আইন বাস্তবায়ন করে ১৯৯১ সালে ভ্যাট আইন প্রয়োগ করার সময়কার অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের মতো স্মরণীয় হতে চান তিনি।
১৫ শতাংশ ভ্যাট আগামী ১ জুলাই থেকে বাস্তবায়নের জন্য আবদুল মুহিত কয়েক দফা এনবিআরের চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছেন। গত মঙ্গলবার এনবিআর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে নিজেদের প্রস্তুতির কথা উল্লেখ করে বলেছে, সংস্থার কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী অর্থমন্ত্রীর নির্দেশ পালনে শৈথিল্য, উদ্যোগহীনতা বা উদাসীনতা দেখালে তাঁকে শাস্তির আওতায় আনা হবে।
ব্যবসায়ীরা জানান, নতুন ভ্যাট আইনে তাঁদেরও আপত্তি নেই। প্যাকেজ ভ্যাট, টার্নওভার ট্যাক্স বিষয়েও তাঁদের খুব একটা সমস্যা নেই। তবে সব পণ্যে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ কেবল ভোক্তাদেরই চাপে ফেলবে না, পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে কেনার সামর্থ্য কমে যাবে, যা চূড়ান্ত বিচারে শিল্পের উত্পাদন কমিয়ে দেবে। এর প্রভাব পড়বে বিনিয়োগে, কর্মসংস্থানে, সার্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে। নতুন আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে ভ্যাট বাড়ার সঙ্গে কমবে আমদানি পণ্যের ওপর সম্পূরক শুল্ক। অর্থাৎ আমদানি পণ্যের দাম কমে যাবে। একদিকে দেশে উত্পাদিত পণ্যের দাম বৃদ্ধি, অন্যদিকে আমদানি পণ্যের মূল্য হ্রাস দেশের শিল্পপণ্যকে অসম প্রতিযোগিতায় ফেলে দেবে। তাই ভ্যাট কমানোর পাশাপাশি দেশি শিল্প সুরক্ষার ব্যবস্থা চান তাঁরা।
সরকারের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করা হলে রাজস্ব আয় কতটা বাড়বে, সার্বিক ব্যবসা-বাণিজ্য ও ভোক্তাপর্যায়ে এর কতটা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, সে বিষয়ে কোনো সমীক্ষা অর্থ মন্ত্রণালয় বা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) করেনি। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকেও এ ধরনের কোনো গবেষণা নেই। তবে দুই পক্ষই নিশ্চিত যে নতুন আইন প্রয়োগ করা হলে ভ্যাট আদায় বাড়বে, ভোক্তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি হবে। তবে এই চাপ সামগ্রিক অর্থনীতিতে কতটা প্রভাব ফেলবে সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা নেই কোনো পক্ষেরই।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআরের কর্মকর্তারা জানান, নতুন ভ্যাট আইন নিয়ে বিতর্ক চললেও সরকার এর বাস্তবায়ন থেকে সরে আসবে না। কারণ এর পরের অর্থবছরের সর্বোচ্চ ছয় মাস পরই নির্বাচন হবে। তাই এখনই এটি বাস্তবায়ন শুরু না করলে তা আর সম্ভব হবে না। তবে সরকার শুরু থেকেই আইনটি প্রয়োগে খুব বেশি কঠোর হবে না। কারণ নতুন আইনে উত্পাদন ও বিপণনের বিভিন্ন স্তরে ভ্যাট আরোপের কথা বলা হয়েছে। সঠিকভাবে ভ্যাট পরিশোধ করতে হলে বিভিন্ন স্তরের ক্রেতা-বিক্রেতাকে বেচা-বিক্রির হিসাব রাখতে হবে। সারা দেশের ব্যবসায়ীদের হিসাবে অভ্যস্ত করাসহ তাঁদের ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্টার ব্যবহারে বাধ্য করতে যে বেশ সময় লাগবে, সে ব্যাপারে সজাগ নীতিনির্ধারকরা। আগামী সংসদ নির্বাচনের পরে সরকার আইনটি কঠোরভাবে বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেবে।
কর্মকর্তারা জানান, ১৫ শতাংশ ভ্যাট বাস্তবায়ন বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর অনড় অবস্থানের পেছনে বড় কারণ হলো, একটি মাত্র ভ্যাট হার থাকলে তার বাস্তবায়ন সহজ হয়। একেক পণ্যে একেক হারে ভ্যাট আরোপ করা হলে অসাধু ব্যবসায়ীরা উচ্চ ভ্যাটের পণ্যকে নিম্নহারের পণ্য হিসেবে দেখিয়ে ফাঁকি দেওয়ার পথ খুঁজবেন। তাই ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের শুরুতে সরকার ১৫ শতাংশ হারেই এটি বহাল রাখতে আগ্রহী। তবে আইন প্রয়োগের পর ভ্যাট কোনো খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেললে, তখন বিশেষ আদেশের (এসআরও) মাধ্যমে তা কমানো হতে পারে।
গত রবিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, বেক্সিমকো গ্রুপের কর্ণধার সালমান এফ রহমান, হা-মীম গ্রুপের মালিক এ কে আজাদ, এফবিসিসিআইয়ের প্রথম সহসভাপতি মো. সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, এনবিআরের চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দুই ঘণ্টা বৈঠক করেন। পরে অর্থমন্ত্রী নিজের অনড় অবস্থান তুলে ধরে বলেন, ১ জুলাই থেকেই নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর হবে। আর ভ্যাট ১৫ শতাংশই থাকবে।
অর্থমন্ত্রীর এই অবস্থানের সঙ্গে একমত নন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তিনি ভ্যাট কমানোর পক্ষে। তা না হলে ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, সবার জন্য সন্তোষজনক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ভ্যাট কমানো বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে রাজি করানোর সাধ্য রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের। ব্যবসায়ীরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাওয়ার আগে বাণিজ্যমন্ত্রীর মাধ্যমেই এ দাবি আদায় করতে চান। বর্তমান সরকারের দুই মেয়াদের গত আট বছরে শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, হলমার্ক ইস্যু ও বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় অর্থমন্ত্রী বারবার সরকারের ভেতর থেকে সমালোচিত হয়েছেন। প্রতিবারই স্রোতের বিপরীতে গিয়ে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী। ফলে আবুল মাল আবদুল মুহিত নিজে তোফায়েল আহমেদকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেন। তাতেও কাজ না হলে ব্যবসায়ীদের শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর কাছেই যেতে হবে।
বৈঠকে উপস্থিত এক ব্যবসায়ী নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সর্বজনীন ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে না কমানোর অবস্থান তুলে ধরলেও টার্নওভার ট্যাক্সের সীমা বাড়ানোর ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। ’ বিদ্যমান আইনে বছরে ২৪ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেন, এমন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ভ্যাট দিতে হয় না। ২৪ লাখ থেকে ৮০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রেতাকে বার্ষিক মোট বিক্রির ওপর ৩ শতাংশ হারে টার্নওভার ট্যাক্স দিতে হয়। ৮০ লাখ টাকার ওপরে বিক্রি করে এমন ব্যবসা ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন হারে ভ্যাট দিতে হয়।
এফবিসিসিআইয়ের প্রথম সহসভাপতি মো. সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, ‘আমাদের দাবি ৩ শতাংশ হারে টার্নওভার ট্যাক্স দেওয়ার সীমা ৮০ লাখ থেকে বাড়িয়ে পাঁচ কোটি টাকা নির্ধারণ করা। ’ ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকা এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সহসভাপতি মো. হেলালউদ্দিন জানান, অর্থমন্ত্রী বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, আগামী বাজেটে টার্নওভার ট্যাক্সের সীমা ৮০ লাখ থেকে বাড়িয়ে এক কোটি টাকায় উন্নীত করতে পারে সরকার।
বিদ্যমান আইনে ‘প্যাকেজ ভ্যাট’ ব্যবস্থা প্রচলিত আছে, যেখানে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মোট বিক্রির হিসাব না নিয়ে বছর শেষে ভ্যাট বাবদ নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ নেয় এনবিআর। নতুন আইনে প্যাকেজ ভ্যাটের বিধান নেই। এফবিসিসিআইয়ের তরফ থেকে প্যাকেজ ভ্যাট বহালের দাবি তোলা হলেও এটি নিয়ে খুব একটা দর-কষাকষি করবে না সংগঠনটি। আর অর্থ মন্ত্রণালয় বা এনবিআরের তরফ থেকেও প্যাকেজ ভ্যাট পুনর্বহাল করার পরিকল্পনা নেই। কারণ প্যাকেজ ভ্যাট বাবদ সরকার যে পরিমাণ রাজস্ব পায়, তা আদায় করতেই তার চেয়ে বেশি অর্থ খরচ হয়।
এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্যাকেজ ভ্যাট বহাল কিংবা টার্নওভার ট্যাক্সসীমা বাড়ানো আমাদের মূল লক্ষ্য নয়। এফবিসিসিআই চায় দেশের শিল্পের বিকাশ ঘটুক। এ জন্য দেশে উত্পাদিত শিল্পপণ্যের ওপরে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপের যে সিদ্ধান্ত রয়েছে, তা কমানোর দাবি আমাদের। এত বেশি হারে ভ্যাট বসালে দেশি পণ্যের মূল্য বেড়ে যাবে। ফলে ক্রেতাদের চাহিদা কমবে। এতে শিল্পের ক্ষতি হবে। অন্যদিকে, সম্পূরক শুল্ক কমে যাবে। তাতে আমদানি পণ্যের দাম কমবে। এ অবস্থায় দেশি শিল্পের স্বার্থ রক্ষা ও ভোক্তার চাহিদা বাড়ানোর মাধ্যমে উত্পাদন বৃদ্ধির জন্য ১৫ শতাংশ ভ্যাট হার কমানোর কোনো বিকল্প নেই। ’
তবে অর্থমন্ত্রী গতকাল যুক্তরাষ্ট্রে আইএমএফের সভায় আবারও বলেছেন, ভ্যাট ১৫ শতাংশই থাকবে।
এফবিসিসিআইয়ের তরফ থেকে বহু স্তর ভ্যাট ব্যবস্থার দাবি করা হয়েছে। অর্থাৎ একেক পণ্যের একেক হারে ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব তাদের। এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ভ্যাট হার ১০ শতাংশ করার জোর দাবি সংগঠনটির। মাতলুব আহমাদ বলেন, ‘আগামী ৩০ এপ্রিল ও ২ মে অর্থমন্ত্রী ও এনবিআরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাজেট নিয়ে আমাদের সভা হবে। সেখানেও ভ্যাট কমানোর জন্য চাপ দেওয়া হবে। ’ এ ছাড়া শুধু ভ্যাট নিয়ে অর্থমন্ত্রী আরেকটি বৈঠকে বসতে চেয়েছেন। এসব বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রী দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বার্থে আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ভ্যাট কত নির্ধারণ করেন, তা দেখার পরই এফবিসিসিআই প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সহসভাপতি মো. হেলালউদ্দিন বলেন, ‘নতুন ভ্যাট আইন কার্যকরের ফলে কোন পণ্যের দাম কত বাড়বে, তাতে ভোক্তার ওপর কেমন চাপ সৃষ্টি হবে, সে বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাব। আশা করি, সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের ভোগান্তি ও দেশের অর্থনীতি বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে সরকার ভ্যাট কমানোসহ আইনের বিতর্কিত ধারাগুলো সংশোধন করবে। ’

http://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2017/04/23/489814