১৪ মে ২০২৩, রবিবার, ২:০৫

রাজধানীতে গ্যাসের সঙ্কট তীব্র

দুর্ভোগে সাধারণ গ্রাহক

রাজধানী জুড়েই চলছে গ্যাস সঙ্কট। গরমের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে লোডশেডিং। পাশাপাশি গ্যাস সঙ্কট বেড়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন গ্রাহকরা। রাজধানীতে কোনো কোনো এলাকায় প্রায় সারা দিনই গ্যাসের চাপ কম থাকে। নিভু নিভু চুলায় রান্নাবান্না করা যাচ্ছে না বলে অনেকেই অভিযোগ করেছেন। বাধ্য হয়ে রাত জেগে রান্না করতে গিয়ে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। আবার গ্যাস সঙ্কটের কারণ ও এ থেকে প্রতিকারেরও কোনো সদুত্তর নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে। তিতাস গ্যাস থেকে বলা হচ্ছে ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে এলএনজি সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। এর প্রভাব পড়েছে সবজায়গায়ই। তবে দীর্ঘ দিন শিল্পসহ অন্যান্য খাতে গ্যাস সরবরাহ কম থাকার কারণ কী এর কোনো সদুত্তর মিলছে না। গ্রাহকদের অভিযোগ, গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে দফায় দফায়। শিল্পে এক বারে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছিল প্রায় দুইশ শতাংশ। কিন্তু সরবরাহ পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি হচ্ছে না।

গত কয়েক দিন রাজধানীতে গ্যাস সঙ্কটের কারণ হিসেবে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির পরিচালক অপারেশন (চলতি দায়িত্বে) প্রকৌশলী মো: সেলিম মিয়া গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, রাজধানীতে গ্যাস সঙ্কট হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলো ঘূর্ণিঝড় মোখা। মোখার প্রভাবমুক্ত রাখতে এলএনজি সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। আগে থেকেই অতিরিক্ত সতর্কতা হিসেবে বন্দরে এলএনজি খালাস করা কমিয়ে দেয়া হয়েছে। এর ফলে রাজধানীসহ সারা দেশেই এর প্রভাব পড়েছে।

প্রতিদিন গ্যাস উৎপাদন ও সরবরাহ পরিস্থিতি নিয়ে পেট্রোবাংলার এক প্রতিবেদন থেকে দেখা যায় রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও বিদেশী কোম্পানিগুলো মোট গ্যাস উত্তোলন করেছে ২১৪ কোটি ঘনফুট। আর এলএনএজি আমদানি করা হয়েছে প্রায় ৬৭ কোটি ডলার। আমদানিসহ মোট গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে প্রায় ২৮১ কোটি ঘনফুট। কিন্তু চাহিদা ছিল অনেক বেশি। পেট্রোবাংলার পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, শুধু বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতেই চাহিদার চেয়ে কম সরবরাহ করা হয়েছে ১১০ কোটি ঘনফুট। বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে গ্যাসের চাহিদা ছিল ২১৮ কোটি ঘনফুট। কিন্তু সরবরাহ করা হয়েছে মাত্র ১০৮ কোটি ঘনফুট। অপর দিকে সারকারখানাগুলোতে গ্যাসের চাহিদার অর্ধেকও সরবরাহ করা যাচ্ছে না। সারকারখানাগুলোতে গ্যাসের চাহিদা ছিল ৩১ কোটি ৬০ লাখ ঘনফুট। কিন্তু সরবরাহ করা হয় ১৪ কোটি ১০ লাখ ঘনফুট। অর্থাৎ চাহিদার চেয়ে কম সরবরাহ করা হয়েছে সাড়ে ১৭ কোটি ঘনফুট। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, মোট গ্যাস সরবরাহের ১০ শতাংশের কম আবাসিকে গ্যাস সরবরাহ করা হয়। কিন্তু সঙ্কটের কারণে দীর্ঘ দিন ধরেই চাহিদার ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কম সরবরাহ করা হচ্ছে। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে এলএনজি সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় ইদানীং এর প্রভাব একটু বেশি দেখা দিয়েছে।

এ দিকে রাজধানীতে গ্যাস সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করেছে। এমনিতেই প্রচণ্ড গরমে বিদ্যুতের লোডশেডিং চলছে। এরপর রাজধানী জুড়েই গ্যাস সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে দিনের বেলায় বেশির ভাগ এলাকাতেই গ্যাসের চাপ কমে যায়। রাজধানী রামপুরা, বনশ্রী, বাড্ডা, উত্তরা, মিরপুর, বাসাবো, যাত্রাবাড়ী, শ্যামলীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রাহকরা জানিয়েছেন, সকাল থেকে গ্যাসের চাপ কমতে থাকে। বিকেল অবধি অনেক এলাকায় চুলাই বন্ধ হয়ে যায়।

এ বিষয়ে রামপুরা থেকে হাবিবুর রহমান নামক এক গ্রাহক জানান, এমনিতেই প্রচণ্ড গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। এর ওপর ঘন ঘন লোডশেডিং হচ্ছে। এতে দুর্ভোগ আরো বেড়ে গেছে। সাথে যুক্ত হয়েছে গ্যাস সঙ্কট। গরমের দিনে টেকা দায়। কিন্তু রাতে রাত জেগে রান্না করতে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। ওই গ্রাহক জানিয়েছেন, দফায় দফায় বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো হচ্ছে। এতে গ্রাহকের পকেট থেকে বাড়তি অর্থ নেয়া হচ্ছে। কিন্তু বাড়তি অর্থ দিয়েও কাক্সিক্ষত সেবা মিলছে না। এ থেকে প্রতিকারেও কোনো ব্যবস্থা নেই।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর জন্য যেমন জোর দেয়া হয়েছিল, এ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালানোর জন্য প্রাথমিক জ্বালানি হিসেবে গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর জন্য তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। ১৫ বছর আগেও যেখানে ২০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন হতো। এখনো তাই হচ্ছে। ২০০৯ সাল থেকে আবাসিকে গ্যাসসংযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে। এখনো তা বন্ধই আছে। কিন্তু গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতি তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। এখন উচ্চ দামে এলএনজি আমদানি করে জাতির ঘাড়ে দায় চাপানো হচ্ছে। অথচ বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ২৫ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করা হয়েছে ৫ হাজার মেগাওয়াট থেকে। আর এ কারণেই জ্বালানি সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করেছে। এ থেকে উত্তরণের একটাই পথ হলো, দেশী কয়লাখনি থেকে কয়লা উত্তোলন করা। পাশাপাশি স্থল ও সাগর থেকে গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া। আগে থেকে পদক্ষেপ নেয়া হলে গ্যাসের অভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রাখা হতো না। পাশাপাশি শিল্পকারখানায়ও নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ করা যেত। সাশ্রয় হতো বৈদেশিক মুদ্রা।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/747773