১৩ মে ২০২৩, শনিবার, ১২:২৬

পিয়াজের বাজারে অস্থিরতা

রাজধানীর পিয়াজের বাজারে অস্থিরতা শুরু হয়েছে। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পিয়াজের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ২০-৪০ টাকা। গত সপ্তাহে ৫৫-৬০ টাকায় বিক্রি হওয়া পিয়াজ এখন বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৭০-৮০ টাকায়। দুই সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি পিয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৪৫ টাকায়। অন্যদিকে কাঁচা বাজারেও বেড়েছে অস্বস্তি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ দিশাহারা। নতুন করে ভোগান্তি বেড়েছে সীমিত আয়ের লোকদের। বাজারে অতিরিক্ত চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে মাছ, মাংস, সয়াবিন তেল, পিয়াজ-রসুন ও আদাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। এ ছাড়া বাজারে এক মাসের ব্যবধানে চিনির কেজি ১১৫ থেকে বেড়ে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আগামী বর্ষা মৌসুম ও ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে পিয়াজের বাজার নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন সাধারণ ভোক্তারা।

পিয়াজের দাম এখন যেভাবে বাড়ছে, তা অব্যাহত থাকলে ভারত থেকে পিয়াজ আমদানির সুযোগ বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে গত বছরের তুলনায় বর্তমানে পিয়াজের দাম ৭৮ শতাংশ বেশি। টিসিবি’র হিসেবে খুচরা বাজারে দেশি পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৬ টাকা কেজি। সে হিসাবে সপ্তাহের ব্যবধানে পিয়াজের দাম বেড়েছে ১৯ শতাংশ। গত সপ্তাহে ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। আর আমদানি করা পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৭০ টাকা কেজি। সে হিসাবে সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ২২ শতাংশ। গত সপ্তাহে ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা।

এদিকে দিনাজপুরের হিলিতে পিয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ১৫ টাকা। প্রকারভেদে ৫০ টাকার পিয়াজ এখন বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা কেজি। ভারত থেকে পিয়াজ আমদানি বন্ধ থাকায় বাজারে বৃদ্ধি পেয়েছে দেশি পিয়াজের দাম, বলছেন ব্যবসায়ীরা। গতকাল হিলির বাজারে গত তিনদিন আগে যে পিয়াজের দাম ছিল ৫০ থেকে ৫২ টাকা কেজি, বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে পাইকারি বাজারে ৬৪ টাকা কেজি। আর খুচরা বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা কেজি দরে।

কৃষি সম্প্রসাণ অধিদপ্তরের (ডিএই) তথ্য অনুযায়ী, পিয়াজের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কিছুটা কম হলেও দেশের চাহিদা পূরণ করার মতো পিয়াজ রয়েছে। এবার পিয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩৬ লাখ টন, তবে উৎপাদন হয়েছে ৩৪ লাখ টনের কিছু বেশি। তবে এতেই বছরের চাহিদা পূরণ হয়ে যাবে। আমদানির প্রয়োজন হবে না।

কাওরান বাজারের পিয়াজের আড়তদার খলিল বলেন, পিয়াজের আমদানি বন্ধ রয়েছে। দেশি পিয়াজের সরবরাহও কমে গেছে। তাই দামও বেড়েছে।

বাজারে সব সবজির দামই চড়া। ১০-২০ টাকা করে প্রায় সব সবজিতে দাম বেড়েছে। ১০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি পটোল বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৬৫ টাকা, বেগুন ৯০, ঝিঙ্গা ৭০ টাকা, বরবটি ৯০ টাকা, কাঁকরোল ১০০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

অন্যদিকে কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা, করলা ১০০ টাকা, টমেটো প্রতি কেজি ৮০ টাকা, মুলা ৭০ টাকা এবং শসা বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজিপ্রতি। এ ছাড়া ১৫-২০ টাকা বেড়ে জালি কুমড়া পিস ৮০ টাকা, গাজর প্রতি কেজি ১০০-১২০ টাকা, কচুর লতি ১০০-১২০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৯০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে করলা প্রতি কেজি ৮০-৯০ টাকা, ঢেঁড়স ৫৫ টাকা, বেগুন ৮০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, কাঁকরোল ৮০-৯০ টাকা, চাল কুমড়া ৬০-৭০ টাকা পিস। মিষ্টি কুমড়া পিস ৬০ টাকা, টমেটো কেজি ৬০-৭০ টাকা বিক্রি হয়েছিলো। যা বাজারে এখন চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে বাজারে ফার্মের মুরগির লাল ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায়। সাদা ডিমের দাম প্রতি ডজন ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। দেশি মুরগির ডিমের ডজন ২০০ থেকে ২১০ টাকা। আর হাঁসের ডিমের দাম ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা ডজন। এদিকে দাম বাড়ানোর পরও কাটছে না চিনির সংকট। গত বৃহস্পতিবার খোলা ও প্যাকেটজাত চিনির দাম খুচরা পর্যায়ে কেজিতে ১৬ টাকা বাড়িয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। নতুন দাম অনুযায়ী প্রতি কেজি পরিশোধিত খোলা চিনি বিক্রি হবে ১২০ টাকায়, আর পরিশোধিত প্যাকেটজাত চিনি বিক্রি হবে প্রতি কেজি ১২৫ টাকায়। তবে বিক্রেতারা জানান, চিনির দাম বাড়ানোর ফলে পরিস্থিতি আগের চেয়ে আরও খারাপ হচ্ছে।

দাম বৃদ্ধি হলেও সরবরাহ কমে গিয়ে বাজারে চিনির সংকট তৈরি হয়েছে। ঠিক এক সপ্তাহ আগেই বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ১২ টাকা বাড়িয়ে ১৯৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়। যা আগে ছিল ১৮৭ টাকা। তবে নতুন দামের তেল এখনো আসেনি সবখানে। কিন্তু পুরনো দাম লেখা মোড়কের বোতলও বাজারে বিক্রি হচ্ছে নতুন দামে। বাজারে এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের মোড়কে দাম ১৮৭ টাকা লেখা, অথচ সেই তেল বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকায়।

সেগুনবাগিচা এলাকার বাসিন্দা রায়হান আহমদ বলেন, কোনো কিছুর দাম কমেনি। সবকিছু অতিরিক্ত দামে কিনতে হচ্ছে। যেমন কয়েকদিন আগে চিনি ১১৫ থেকে ১২০ টাকার মধ্যেই কিনেছি। এখন ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।


https://mzamin.com/news.php?news=55198