১৩ মে ২০২৩, শনিবার, ১২:২৪

একদিকে হাহাকার অন্যদিকে দক্ষ কর্মীর সংকট

ঘরে ঘরে বেকার। চাকরির বাজারে চলছে মন্দা। শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত বেকার হন্যে হয়ে খুঁজছে চাকরি। বেকার জীবন থেকে মুক্তি পেতে তাদের কতো চেষ্টা। চাকরির বাজারে চলছে হাহাকার। অন্যদিকে দক্ষ কর্মী খুঁজছে অনেক প্রতিষ্ঠান। বার বার বিজ্ঞপ্তি দিয়েও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত দক্ষ কর্মী। একদিকে চাকরির জন্য হাহাকার অন্যদিকে দক্ষ কর্মীর অভাব- সব এলোমেলো করে দিচ্ছে। মাস্টার্স সম্পন্ন করা বেকারকেও দেখা যায় এসএসসি পাস চাকরির নিয়োগে আবেদন করতে। কেউ কেউ সোজা পথে কিংবা বাঁকা পথে উড়াল দিচ্ছেন বিদেশ বিভূঁইয়ে।

সেখানেও এক অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। তারপরও অনেক যুবক জীবনকে এগিয়ে নিতে নিজে চেষ্টা করছেন।
কিন্তু সেখানেও গিয়ে হোঁচট খাচ্ছেন নানা কারণে। এমনই একজন আদনান আহমেদ। সফ্‌টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। শিক্ষা জীবন শেষ করে চার বন্ধু মিলে গড়ে তুলেছেন নিজস্ব প্রতিষ্ঠান। খুব ছোট পরিসরে ২০১৭ সালে ওয়ানটেক’স নামের প্রতিষ্ঠান চালু করেন। এখন সেখানে ১৮ জন কর্মী কাজ করছেন। মিরপুর-২ নম্বরে নিয়েছেন একটি অফিস। কিন্তু লোকবল প্রয়োজন হলেও দক্ষ লোক পাচ্ছেন না তারা। আদনান বলেন, চাকরির পিছনে না ছুটে শুরু থেকেই চেষ্টা করেছি কীভাবে আয়মূলক কাজ করা যায়। আমি বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স-মাস্টার্স করেছি। এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করার জন্য অনেক জুনিয়র প্রায়শই নক দেয়। আমিও তাদের আমন্ত্রণ জানাই। কিন্তু আমি যে চাকরি দেব সাধারণ দক্ষতাটা নিয়েও আসে না তারা।

তিনি বলেন, আমি আশ্চর্য হই অনেক সময় যে অনার্সে ভালো ফল করার পর বাস্তব কাজ সম্পন্ন সাধারণ ধারণাটাও অনেকের নেই। তিনি বলেন, আমাদের খুব স্বল্প বেতন দিয়ে লোক নিতে হয়। এজন্যই আমরা ফ্রেশারদের সুযোগ দেই। চাকরিতে ঢোকার পর কিছু কাজও শেখাতে হয়। কিন্তু একেবারেই অ আ ক খ’তো আমি শেখাবো না। এই মুহূর্তে আমার প্রতিষ্ঠানে চারজন লোক প্রয়োজন। অনেকেই যোগাযোগ করেন কিন্তু হরহামেশাই আমি চাকরিতে নিতে পারি না।

বর্তমানে দেশের কর্মক্ষম ব্যক্তির সংখ্যা প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। অনেকেই আছেন উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও পাচ্ছেন না যোগ্য বেতনের চাকরি। বেকারত্বের অভিশাপ নিয়ে হতাশাগ্রস্ত হচ্ছেন যখন তরুণরা উল্টোদিকে চাকরিদাতারা বলছেন তারা কর্মতৎপর, কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন যোগ্য লোক খুঁজে পাচ্ছেন না। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মতে, তরুণ জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি ভারতে ৩৫ কোটি ৬০ লাখ, চীনে ২৬ কোটি ৯০ লাখ, ইন্দোনেশিয়ায় ৬ কোটি ৭০ লাখ, যুক্তরাষ্ট্র ৬ কোটি ৫০ লাখ, পাকিস্তানে ৫ কোটি ৯০ লাখ এবং বাংলাদেশে রয়েছে ৪ কোটি ৭৬ লাখ। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) প্রতিবেদন অনুযায়ী, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশি পাকিস্তানে ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ। বাংলাদেশে এ হার ১০ দশমিক ৭ শতাংশ, যা এ অঞ্চলের ২৮টি দেশের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ বলছে, ২০১৩-১৪ ও ২০১৪-১৫ দুই বছরে মাত্র ছয় লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। অথচ প্রতি বছর দেশের কর্ম বাজারে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে প্রায় ২৭ লাখ মানুষ। অর্থাৎ মাত্র দুই বছরে বেকারের সংখ্যা বেড়েছে ৪৮ লাখ।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপ ২০১৬-১৭ এর হিসাব বলছে, দেশে কর্মক্ষম বেকারের সংখ্যা প্রায় ২৭ লাখ। প্রতিষ্ঠানটির হিসাব অনুযায়ী, দেশে শ্রমশক্তির মোট পরিমাণ ৫ কোটি ৬৭ লাখ। এর মধ্যে কাজ করছে ৫ কোটি ৫১ লাখ ৮০ হাজার জন। বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের হার সবচেয়ে বেশি। প্রতি ১০০ জন স্নাতক ডিগ্রিধারীর মধ্যে ৪৭ জনই বেকার। অর্থাৎ প্রতি দুইজনে একজনের নাম বেকারের খাতায়। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা ৩ কোটি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিক্ষিত তরুণদের মাঝে কারিগরি জ্ঞানের দিক থেকে পিছিয়ে এবং অনাগ্রহী। আর সেইসঙ্গে উদ্যোক্তা হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করছেন খুব কম তরুণ। ২০১৬ সালে ইউরোপীয় ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) এক পরিসংখ্যানে দেখিয়েছে, বাংলাদেশে শতকরা ৪৭ ভাগ গ্র্যাজুয়েট হয় বেকার, না হয় তিনি যে কর্মে নিযুক্ত এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট হওয়ার কোনো প্রয়োজন ছিল না। আবার উল্টোদিকে, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স শেষের পর চাকরিতে যোগদান করতে পারেন মাত্র ৩৪ শতাংশ শিক্ষার্থী। আবার তাদের মধ্যে ৬২ শতাংশই লেখাপড়া করেছেন ব্যবসায় প্রশাসন থেকে। এই পরিসংখ্যান থেকেও অনুমেয় কারিগরি বিষয়ে লেখাপড়া করায় এগিয়ে আছেন তারা। কিন্তু অন্য বিষয়ের শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে আছেন ঢের। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত আছেন প্রায় ২৯ লাখ শিক্ষার্থী।

একটি প্রতিষ্ঠানে এইচআর ডিপার্টমেন্টের প্রধান শফিকুল ইসলাম বলেন, ধরেন সাধারণ কাজের জন্য যেসবে কারিগরি দক্ষতার প্রয়োজন পড়ে না সেসবে ১০ পোস্টের জন্য লোক চাইলে আবেদন আসে ২০০ থেকে ৩০০। সেখান থেকে আমরা যোগ্য লোক খোঁজার চেষ্টা করি। আর দক্ষতা নির্ভর কাজের জন্য বা নির্দিষ্ট কিছু রিকোয়্যারমেন্ট শর্তে দেয়া থাকলে ১০ জন লোক প্রয়োজন হলে সিভি পাওয়া যায় গড়ে ২০ থেকে ২৫টা। এর ভিতরে আবার ভুয়া তথ্য সংবলিত সিভিও পাওয়া যায়। আবার আমরা কম্পিউটার দক্ষতা নির্ভর একটা পদের জন্য লোক চাইলাম। সেখানে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ভালো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া করা প্রার্থী পাই। আবার সিভিতে গ্রহণযোগ্য কিছু প্রজেক্টের কাজের ডাটা পাই। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে যখন কাজে নেয়া হয় দেখা যায় নতুন করে কাজের প্রাথমিক অংশটুকুও সে ঠিকমতো করতে পারছে না। এখন প্রশ্ন ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের এতো ভালো ফল করলো কীভাবে?

রংপুর কারমাইকেল কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী নওরিন জাহান বলেন, এক বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে রিসিপশনিস্টের জন্য আবেদন করলাম। পরে দেখলাম রিসিপশনিস্টের জন্য ব্যবসায় প্রশাসন থেকে দু’জন লোক নিয়েছে। এখন আমার প্রশ্ন ইংরেজি বিভাগ থেকে পড়ে যদি রিসিপশনিস্টের চাকরি না পাই তবে এই বিষয় রাখার প্রয়োজনটা কি?

আবার দেশের অধিকাংশ তরুণ সরকারি চাকরি বা বিশেষ করে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এতে বিশেষ কোনো কারিগরি দক্ষতার প্রয়োজন হয় না। ফলে স্বাবলম্বী ও ভবিষ্যৎ সুন্দরের আশায় মেধাবীরা ছুটছেন বিসিএস’র পেছনে। কিন্তু সোনার হরিণ হাতে তুলতে পারছেন গুটি কয়েক। আর বাকীরা দীর্ঘদিন সরকারি চকরির পিছনে ছুটে ৩০ পেরুনোর পর হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে পড়েন। ক্যারিয়ার গড়ার মোক্ষম সময়ে চাকরি বা ব্যবসার পিছনে না ছুটে বই নিয়ে থাকায় শূন্য হাতে ৩০ পেরিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করতে হয় তাদের।

২০১৯ সালের এক গবেষণায় বলা হয়, স্কুল-কলেজগুলো থেকে তরুণ-তরুণীরা যে শিক্ষা পাচ্ছেন, তাতে তারা কর্মসংস্থানের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করতে পারছে না। ব্র্যাক, বিআইজিডি এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে পরিচালিত জরিপটিতে বলা হয়, শিক্ষার্থীদের মধ্যে কম্পিউটার ও ইংরেজি ভাষায় আত্মবিশ্বাসী মাত্র ১৬ শতাংশ। গবেষণায় বলা হয়, যে চাকরিগুলো রয়েছে, সেগুলোয় ভালো করার জন্য যে দক্ষতা প্রয়োজন। সেই দক্ষতা যুব সমাজের নেই। মাত্র ১৪ শাতংশ তরুণ-তরুণী কারিগরি প্রশিক্ষণ পেয়েছে। ২৪ শতাংশ তরুণ ও ১০ শতাংশ তরুণী কম্পিউটারে দক্ষ। ইংরেজিতে ২১ শতাংশ তরুণ ও ১৪ শতাংশ তরুণী দক্ষ। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা অপেক্ষাকৃত কম শিক্ষিত তারা সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া পাড়ি জমাতে চান সবচেয়ে বেশি। আবার যারা ইংরেজি ভাষা এবং কম্পিউটারে বেশ দক্ষ, তারা যেতে চায় অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র এসব দেশে।
বাংলাদেশে কারিগরি শিক্ষার গুরুত্বের কথা বলা হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরেই।

কিন্তু এই শিক্ষাব্যবস্থায় দৃশাটাও খুবই করুণ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকার সরকারি কারিগরি এক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক শামসুন নাহার বলেন, এখানে প্রধান সমস্যা হচ্ছে সিলেবাসে আধুনিকায়ন নাই। যেভাবে সিলেবাসটা করা হচ্ছে তাতে প্র্যাকটিক্যালের থেকে বিষয়ভিত্তিক পড়ালেখায় অধিক নজর দিতে হচ্ছে। তার মতে প্রধান সমস্যা শিক্ষার্থীদের মান। এসএসসিতে যেসব শিক্ষার্থী লোয়ার লেবেলের শিক্ষার্থী তারা ভর্তি হচ্ছে। কিন্তু আমরা এখানে এনে তাদের গণিত, পদার্থ এসব বিজ্ঞানের বিষয় পড়াচ্ছি। কিন্তু তাদের প্রাথমিক যে জ্ঞান নিয়ে আসা প্রয়োজন ছিল তা তাদের নেই। আবার এসব শিক্ষার্থী ভর্তিতে নেই কোন পরীক্ষা। শুধু রেজাল্টের উপর ভিত্তি করে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু এরপরও আমরা শিক্ষার্থীর কোটা পূরণ করতে পারছি না। আবার মেধাবী শিক্ষার্থীদের আকৃষ্টও করতে পারছি না। তিনি বলেন, আমাদের প্রতিটা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক সংকট রয়েছে। এই কারণে আমাদের অন্য বিষয়ে ক্লাস নিতে হচ্ছে কিংবা খণ্ডকালীন শিক্ষক নিতে হচ্ছে। যার ফলে আমরা এসব শিক্ষার্থীদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারছি না।

বাংলাদেশে বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্মে চাকরির জন্য বিডিজবস অন্যতম। এতে ক্রিয়েটিভ সল্যুশনের প্লাটফর্মটির মাধ্যমে লোক আবেদন করেছিল আইটি প্রতিষ্ঠান ক্রিয়েটিভ সল্যুশন। তার এক কর্মকর্তা আলিমুল ইসলাম বলেন, একটা বিষয় লক্ষ্য করা যায় যেসব পদের জন্য জেনারেল এডুকেশন হলেই চলে বা দক্ষতার ওই অর্থে প্রয়োজন হয় না সেসব পদের জন্য একাধিক আবেদন পরে। কিন্তু যেসব চাকরির জন্য আমরা নির্দিষ্ট করে দেই এই রিকোয়্যারমেন্ট প্রয়োজন সেসব জায়গায় আবেদন চাহিদার তুলনায় খুবই কম আসে। আবার অনেকে ভুল তথ্য দিয়েও আবেদন করে। আবার অনেকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে শিক্ষাজীবন শেষ করার পরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে ভাইভা ফেস করতে পারছেন না।

দেশি প্রতিষ্ঠান ওয়ালটনের ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর রবিউল ইসলাম মিল্টন বলেন, দক্ষ লোকের কিছু বৈচিত্র্যতা আছে। ফ্যাক্টরিতে একরকম, অফিসিয়াল সেক্টরে একরকম। অফিসিয়াল কাজের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ালেখা হচ্ছে। কিছুটা অগ্রগতি হচ্ছে। দক্ষ লোক পাচ্ছি না একেবারে তাও না। তবে দক্ষ লোকের সংখ্যা ৫০/৫০ বলতে হবে। যদি একেবারেই দক্ষ লোক না থাকত তবে দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে যেতো না। তবে এই সংখ্যা যদি আরও বাড়ে তবে ভালো। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা করা অবস্থায় চাকরি নির্ভর কাজের অনুশীলন করা উচিত। তাহলে চাকরির পর চেয়ারে বসেই কাজ করতে পারবে।

শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাড়ি জমানো অধিকাংশেরই থাকে না কারিগরি দক্ষতা। ফলে তারা এসব দেশে গিয়ে হাড় ভাঙা খাটুনির কাজ করতে হয়। যেমন, ইমারত নির্মাণ, পরিষ্কারক, কৃষি কাজ ইত্যাদি। মালয়েশিয়া প্রবাসী সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এই দেশে যারা কাজ করতে আসেন তার অধিকাংশই আসেন নিম্ন পর্যায়ের কাজে। আর পাশের দেশ ভারতের কথা যদি বলি সেখান থেকে যারা আসছেন তারা কারিগরি কিংবা ইংরেজিতে দক্ষতা অর্জন করে আসছেন। ফলে টেকনিক্যাল কাজগুলো তারা পাচ্ছেন। আবার রেস্টুরেন্ট কিংবা মার্কেটের অধিকাংশ বিক্রয়কর্মী ভারত থেকে আসছেন কারণ তারা ইংরেজিতে দক্ষ। তিনি আরও বলেন, মালয়েশিয়ায় কাজের ক্ষেত্রে একটা চেইন থাকে। ধরেন ভারতের যে প্রবাসী এখানে আসছেন তাকে হয়তো তার পরিচিত কেউ আনছে। ফলে সে আগে থেকেই জেনে আসছে যে এদেশে কাজ করতে গেলে কি করতে হবে, কি দক্ষতার প্রয়োজন হবে। কিন্তু বাংলাদেশের চেইনটা হয়েছে সেভাবেই। যার পরিচিত ব্যক্তি কৃষি কাজে জড়িত তিনি সেই কাজেই অন্য একজনকে লাইন ঘাট দেখিয়ে দিচ্ছেন। ফলে দক্ষতা অর্জন করে আসার বিষয়টা এখানে হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, মালয়েশিয়া বা যেকোনো দেশে আসার আগে সংশ্লিষ্ট কাজের কিছুটা অভিজ্ঞতা ও চলার মতো কিছু ইংরেজি জেনে আসলে ভালোভাবে এবং অধিক পারিশ্রমিকে সারভাইভ করা যাবে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, বাজারে চাকরির জন্য যেসব যোগ্যতা প্রয়োজন সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখানো হচ্ছে না। আবার আমাদের দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ চাকরি নিয়ে নিচ্ছে ভারত, শ্রীলঙ্কা, কোরিয়ানসহ অন্য দেশের লোকেরা। কারণ আমাদের দেশের চাকরি প্রত্যাশীদের ভাষা দক্ষতা কম, যোগাযোগ দক্ষতাতো আরও সাংঘাতিক রকমের কম।

তিনি বলেন, শিক্ষিতদের মাঝে বেকারত্ব বাড়ার কারণ হচ্ছে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে যে শিক্ষা দিচ্ছি তা পরিপূর্ণ নয়। শিক্ষার্থীদের শুধু সনদ নিয়ে বের হতে হয়। বর্তমান সময়ে বিজনেস কমিউনিকেশন, ডিপ্লোমেটিক কমিউনিকেশন এসব বিষয় খুবই প্রয়োজন। ভাষাগত দুর্বলতার কারণেও নিজের যোগ্যতা প্রকাশ করতে পারি না।

https://mzamin.com/news.php?news=55202