১৩ মে ২০২৩, শনিবার, ১১:৫৮

অরক্ষিত অর্থভাণ্ডার ও জাতির গন্তব্য

-ইবনে নূরুল হুদা

মূলত, সুশাসনের অভাব ও রাজনৈতিক ব্যর্থতার কারণে দেশের অর্থভা-ার পুরোপুরি অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। কোন কিছুই স্বাভাবিক নিয়মে চলছে না বরং সারাদেশেই চলছে লুটপাটের মচ্ছব। কিন্তু এসবের রথী-মহারথীরা একেবারে ধরাছোঁয়ার বাইরে। চলতি দশকে দেশ থেকে লক্ষকোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। পাচার করা অর্থে বিদেশের মাটিতে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন একশ্রেণির অসাধু রাজনীতিক, তথাকথিত ব্যবসায়ী ও দুর্নীতিবাজ আমলারা। এমনকি উন্নত বিশে^র বিভিন্ন দেশে বেগমপাড়াসহ নানা নামে গড়ে উঠেছে অর্থপাচারকারীদের অভয়ারণ্য। কিন্তু এসব দেখার কেউ আছে বলে মনে হয় না।

এবিষয়ে সম্প্রতি একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. ফরাসউদ্দিন। তিনি অনেকটা খেদোক্তি করেই বলেছেন, ‘বাংলাদেশ থেকে বছরে ৭শ কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে (যদিও অন্য পরিসংখ্যানে এই পরিমাণ আরো অনেক বেশি)। এ বিষয়ে কারো কোনো কথা নেই। খেলাপি ঋণ বাড়ছে। ঋণ খেলাপিদের আরো সুযোগ দেয়া হচ্ছে। এটা জাতির পিতার সমতাভিত্তিক বাংলাদেশ নীতির পরিপন্থি’। তিনি গত ৯ মে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরস্থ এনইসি সম্মেলন কক্ষে ‘দেশ রূপান্তরের কারিগর শেখ হাসিনা’ শীর্ষক বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেছেন। যা খুবই বাস্তবসম্মত বলেই মনে করছেন অভিজ্ঞমহল।

এই অর্থনীতিবিদ বলেছেন, ঋণ খেলাপীদের জন্য সমস্ত সুযোগ, যা জাতির পিতার সমতাভিত্তিক উন্নয়নের পরিপন্থী। তার ভাষায়, ‘এই যে ট্যাক্স জিডিপি রেশিও আট শতাংশ, যা নেপালের অর্ধেক। এটা কি ভালো হচ্ছে? এই যে বেসরকারি খাতে ঋণ ও পাবলিক-প্রাইভেট ইনভেস্টমন্টে ৮০ শতাংশ এটা কেতাব-কলমের কথা। বাংলাদেশে এটা চলছে না। কেনাকাটায় সম্পূর্ণ নৈরাজ্য। কোন দেশে এক কিলোমিটার রাস্তা করতে ২০ কোটি টাকা লাগে? আমাদের দেশে অনেক বেশিই লাগে’। যা রীতিমত হাটে হাঁড়ি ভেঙে দেয়ার মত।

মূলত জাতীয় অর্থনীতিতে রাজরাক্ষসের উপদ্রব শুরু হয়েছে বেশ আগেই। এই সর্বভূক বাহিনী কোনভাবেই পরিতৃপ্ত হতে পারছে না বরং নিজেদের উদোরকে একেবারে দরিয়া বানিয়ে ফেলেছে। ফলে দেশের পরিবর্তে বিদেশে অর্থপাচারের মাধ্যমে অঢেল বিত্তবৈভব গড়ে তুলছে। কিন্তু আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে ভাবলেশহীন; নির্বিকার! ফলে দেশে রাক্ষসীয় তৎপরতা চলছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে। কোনভাবেই এর লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হচ্ছে না।

আমাদের দেশ থেকে অর্থপাচার একেবারে নতুন কিছু না হলেও চলতি দশকে এই অপতৎরতা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। এক্ষেত্রে সুইস ব্যাংক অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যমতে, সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশীদের পাচার করা অর্থের পাহাড় জমেছে। দেশটির ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশীদের পাচার করা অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৭ কোটি ১১ লাখ সুইস ফ্রাঁয়। বাংলাদেশী মুদ্রায় যার পরিমাণ ৮ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা। বিভিন্ন পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে বছরে গড়ে পাচার হচ্ছে ৬৪ হাজার কোটি টাকা। গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির সর্বশেষ প্রতিবেদনেও এ তথ্যের সত্যতা মিলেছে। প্রতি বছর দেশের এসব টাকা পাচার হয়ে চলে যাচ্ছে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত, থাইল্যান্ডসহ ১০টি দেশে।

আমদানি-রফতানিসহ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে কারসাজি আর হুন্ডির আড়ালে অর্থপাচার করছে পাচারকারী রাজরাক্ষসচক্র। এমনটাই বলছে বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ পাচার মনিটরিং সংস্থা-বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বিআইএফইউর সাম্প্রতিক প্রতিবেদন। আর গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইনটেগ্রিটি বলছে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের আড়ালে প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে গড়ে ৬৪ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে।

সংস্থাটির তথ্যানুযায়ী, ২০১৬ থেকে ২০২০ তথা ৫ বছরে পাচারকারীরা ৩ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে। যার মধ্যে শুধু ২০১৫ সালে ১ বছরেই দেশ থেকে পাচার হয়ে যায় ৯৮ হাজার কোটি টাকা। পাচারকৃত টাকার পরিমাণ বিবেচনায় দক্ষিণ এশিয়ায় পাচারকারী দেশ হিসেবে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যিক লেনদেনের সাড়ে ১৭ শতাংশই কোনো না কোনোভাবে পাচার হচ্ছে বলে দাবি আন্তর্জাতিক সংস্থাটির।

বিদেশে টাকা পাচার রোধ, পাচারকৃত অর্থ ফেরত আর পাচারকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে একযোগে কাজ করছে রাষ্ট্রের ৮ টি সংস্থা। তারপরও কেন পাচার ঠেকানো যাচ্ছে না বা পাচারকৃত টাকা ফেরৎ আনা যাচ্ছে না-এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কৌঁসুলির বক্তব্য হলো, সংসদ সদস্য, বড় ব্যাংকার থেকে শুরু করে প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা পাচারের সঙ্গে জড়িত। তাদের ক্ষমতা এবং প্রভাবের কারণে এই অপরাধ বন্ধ করা যাচ্ছে না। তার ভাষায়, কাগজে-কলমে ব্যাংকিং খাত এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপর নজরদারি আছে। কিন্তু সেই নজরদারি যথেষ্টভাবে সক্ষমতার সঙ্গে কাজ করছে না।

স্বাধীনতার পর এ পর্যন্ত দেশ থেকে পাচার হওয়া লক্ষ কোটি টাকার মধ্যে মাত্র ২১ কোটি টাকা ফেরত আনা সম্ভব হয়েছে। যা পর্বতের মুশিক প্রবস বলেই মনে করা হচ্ছে। মূলত, তিনটি প্রক্রিয়ায় এ অর্থ পাচার হয়। এর মধ্যে রয়েছে- বেপরোয়া দুর্নীতি, অনিশ্চিত বিনিয়োগের পরিবেশ এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তাহীনতা। বিশেষ করে নির্বাচনের আগে টাকা পাচার বেশি বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর দুর্বল নজরদারি, সুশাসনের ঘাটতি, বৈদেশিক বাণিজ্যে মিথ্যা ঘোষণা এবং হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাচার বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অর্থ রাখার ক্ষেত্রে বিত্তবানরা দেশকে নিরাপদ মনে করছেন না। তাই বিভিন্ন উপায়ে অর্থ পাচার হচ্ছে। পাচার রোধে বিভিন্ন কথা বলা হলেও বাস্তবে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেই। পাচারের সঙ্গে অনেক প্রভাবশালী জড়িত। এ কারণে তাদের বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। এক্ষেত্রে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা আর সুশাসন জরুরি বলে মনে করেন অভিজ্ঞমহল। কিন্তু এক্ষেত্রে রয়েছে আমাদের বড় ধরনের দুর্বলতা!

বাংলাদেশ থেকে ভয়াবহ আকারে টাকা পাচারের তথ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই), সুইস ব্যাংক এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সংগঠন আইসিআইজের পানামা ও প্যারাডাইস পেপারেও উঠে এসেছে। বড় ধরনের টাকা পাচার হলেও তা বন্ধে দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই বলে মনে করেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে প্রতি বছর দেশে গড়ে ১৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আসে। কিন্তু দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার হিসাবে দেশ থেকে গড়ে ৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি পাচার হয়ে যায়।

কেউ কেউ বিষয়টিকে পাচার নয় বরং বিদেশের ব্যাংকে অর্থ জমা রাখার কথা বলতে পুলকবোধ করছেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র বলছে, এখন পর্যন্ত কাউকে বিদেশে টাকা জমা রাখার বিশেষ অনুমোদন দেয়া হয়নি। এ ছাড়া কোনো প্রবাসীও সরকারকে জানাননি যে তিনি সুইস ব্যাংকে টাকা জমা রেখেছেন। অর্থাৎ সুইস ব্যাংকে জমা পুরো টাকাটাই দেশ থেকে পাচার করা হয়েছে। সূত্র জানায়, টাকা পাচার রোধে বাংলাদেশ ব্যাংক সব সময় কাজ করছে। মানিলন্ডারিং প্রতিরোধে যেসব আন্তর্জাতিক নিয়মকানুন রয়েছে, তা পুরোপুরি মেনে চলছে। পাচার করা টাকা ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া আছে। কিন্তু এই দাবির প্রতি কেউই আশ^স্ত হতে পারছেন না। কারণ, এ বিষয়ে অতীতে আমাদের কোন সুখস্মৃতি নেই।

এদিকে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে অর্থ পাচারকারীদের বিশেষ সুযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ। যা সরকারের দ্বি-চারিতা এবং দুর্নীতিকে উৎসাহিত করার নামান্তর বলেই মনে করা হচ্ছে। জানা গেছে, কেউ ৭ শতাংশ কর দিয়ে বিদেশে পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে এনে বৈধ করতে পারবে। তবে বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা করছে দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা (টিআইবি) এবং দেশের শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদরা। সংসদে এ নিয়ে কথা হয়েছে। বর্তমানে দেশে একজন নিয়মিত করদাতা ২৫ শতাংশ পর্যন্ত কর দেন। সে হিসাবে অর্থ পাচারকারীদের প্রণোদনা দেয়া হয়েছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, টাকা পাচারের প্রধান কারণ হলো-দুর্নীতি। নানা অবৈধ উপায়ে খুব দ্রুতই সম্পদ বানানো যায়। যারা এভাবে অর্থ উপার্জন করে, তারা বড় অংশই বাইরে নিয়ে যায়। দ্বিতীয়ত, দেশে নানা ধরনের শঙ্কা রয়েছে। তৃতীয়ত, কোনো অ্যাকশন নেয়া হচ্ছে না। এক্ষেত্রে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর তেমন কোনো তৎপরতা নেই। চতুর্থ, আমদানি-রপ্তানিতে কার্যকর নজরদারি নেই। পঞ্চমত, কারও বিরুদ্ধে শাস্তি দেয়া হচ্ছে না। তারা মনে করেন, শুধু কথার কথা নয়, বাস্তবেই সরকারের পক্ষ থেকে শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। তারা আরো বলছেন, বাংলাদেশ এগমন্ট গ্রুপের (বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের সমন্বয়ে গঠিত একটি আন্তর্জাতিক ফোরাম) সদস্য। এমএলএর মাধ্যমে সুইজারল্যান্ডে যোগাযোগ করে অর্থ ফেরত আনার চেষ্টা করা যেতে পারে।

এ বিষয়ে গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) বক্তব্য হলো,দুর্নীতির কারণে বাংলাদেশ থেকে প্রচুর অর্থ পাচার হয়। সুইস ব্যাংকগুলো গ্রাহকের অর্থের বিষয়ে যথেষ্ট গোপনীয়তা রক্ষা করে। সরকার ইচ্ছা করলে আনুষ্ঠানিকভাবে সে দেশের কাছে তথ্য চাইতে পারে। সংস্থাটি মনে করে, অনেক উন্নত দেশ এখন সম্পদের উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন না করেই বিদেশিদের বিনিয়োগের সুযোগ দিচ্ছে। বাংলাদেশের বাজেটে বিদেশে থাকা সম্পদ থেকে কর আদায় করতে এবং নগদ অর্থ ফেরত আনতে যে সুযোগ দেয়া হয়েছে, তাতে সাড়া মিলবে বলে তিনি মনে করেন না।

সূত্র জানায়, দেশ-বিদেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন বন্ধ ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধে সহায়তায় তথ্যের আদান-প্রদান করতে ২০১৩ সালের জুলাইয়ে এগমন্ট গ্রুপের সদস্য হয়েছে বাংলাদেশ। বর্তমানে দেড়শোর অধিক দেশ ওই গ্রুপের সদস্য। বাংলাদেশ এই গ্রুপের সদস্য হওয়ায় এখন সবক’টি দেশ থেকে মানিলন্ডারিং, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন বা টাকা পাচার বিষয়ক যে কোনো তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে। কিন্তু সেক্ষেত্রে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই। গত বছর জুন মাসে প্রকাশিত সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে বাংলাদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে সেখানকার ব্যাংকে থাকা অর্থে বড় উল্লম্ফন হয়ে মোট ৮৭ কোটি ১১ লাখ সুইস ফ্রাঙ্ক হয়েছে। বাংলাদেশি টাকায় এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৩৯০ কোটি। প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশীদের নামে সেখানে রাখা অর্থের পরিমাণ বেড়েছে আগের বছরের চেয়ে ৩০ কোটি ৮১ লাখ ফ্রাঙ্ক (৫৪.৭৫ শতাংশ); টাকার হিসাবে যা প্রায় ২,৯৭০ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারতের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান। ২০২০ সালে সুইস ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের নামে থাকা গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ ছিল ৫৬ কোটি ২৯ লাখ ফ্রাঙ্ক। গত এক বছরে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের নামে জমা টাকার পরিমাণ ৫৫ শতাংশ বেড়েছে; যা ১৯৯৬ সালের পর সর্বোচ্চ।

সার্বিক দিক বিবেচনায় মনে হচ্ছে, দেশ থেকে রাজরাক্ষসরা প্রতিনিয়ত অর্থপাচার করছে। দেশে আইনের শাসনের বিচ্যুতি, জবাবদিহিতার অভাব, গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের অবনমন এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এজন্য প্রধানত দায়ী। দেশে সুস্থধারার গণতন্ত্রচর্চা না থাকার কারণে অপরাধীরা অতিমাত্রায় তৎপর হয়ে অপরাধপ্রবণতা চালিয়ে যাচ্ছে। আর দেশে সুশাসন না থাকায় এ অপরাধীদের বিরুদ্ধে সরকার বা আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছে না। কোন কোন ক্ষেত্রে অপরাধীদের সাথে আপোষ করে চলার অভিযোগও রয়েছে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে।

এমতাবস্থায় দেশ থেকে অর্থপাচার বন্ধসহ অপরাধপ্রবণতা নিয়ন্ত্রণের জন্য সুস্থধারার গণতন্ত্র চর্চা, সুশাসন ও সকল ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা নিশ্চিতের কোন বিকল্প নেই। একই চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটের যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য সমাধান এবং নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা হওয়ার দরকার। অন্যথায় দেশে সুশাসন ফিরবে না; বন্ধ হবে না অর্থপাচারসহ লুটপাটের মচ্ছব! জাতির গন্তব্যও হয়ে পড়বে অনিশ্চিত।

https://dailysangram.com/post/524294