১২ মে ২০২৩, শুক্রবার, ১২:০৩

দেশে এক বছরে ১৫ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত

প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে গত বছর বাংলাদেশে ১৫ লাখ ২৪ হাজার মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। সংঘাত-সহিংসতার কারণে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ৫৬০ জন। আর সারা বিশ্বে গত বছর অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ছিল সাত কোটি ১০ লাখেরও বেশি। আগের বছরের চেয়ে বিশ্বে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতি ২০ শতাংশ বেড়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার জেনেভায় প্রকাশিত ‘অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতি ও খাদ্য নিরাপত্তা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনটি যৌথভাবে প্রকাশ করেছে জেনেভাভিত্তিক ‘ইন্টারনাল ডিসপ্লেসমেন্ট মনিটরিং সেন্টার (আইডিএমসি)’ ও ‘নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিল (এনআরসি)’।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির জন্য বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা তুলে ধরা হয়েছে। ২০২২ সালে দক্ষিণ এশিয়ায় বাস্তুচ্যুতির ৯০ শতাংশই হয়েছে বন্যার কারণে। বাংলাদেশ ও ভারত বর্ষা মৌসুমের আগেই বন্যার শিকার হচ্ছে। গত বছর মে ও জুনে ভারতের আসাম রাজ্য এবং বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে বন্যা হয়েছে। সিলেট, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জে বন্যায় প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার লোক বাস্তুচ্যুত হয়েছে। গত অক্টোবরে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ওই ঝড়ের কারণে বাংলাদেশকে তার উপকূলীয় এলাকার প্রায় ১০ লাখ লোককে অন্যত্র সরিয়ে নিতে হয়েছে। ওই ঝড়ের প্রভাব প্রায় ১৫ লাখ মানুষের ওপর পড়েছে।

বর্ষা মৌসুমে দুই দেশেই বৃষ্টিপাত ও বন্যা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু গত বছর জুলাইয়ে ভারতের কিছু অংশে ১২২ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম বৃষ্টি হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ২০২০ সালে বন্যা ছিল দেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসের অন্যতম বড় বন্যা। এতে প্রায় ১৯ লাখ লোক অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়। তবে আগে থেকে উদ্যোগ সফলভাবে নেওয়ার ফলে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুতদের ওপর প্রভাব কমেছে।
২০২২ সাল শেষে বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ছিল আট হাজার ৬০০।

গত বছর সারা বিশ্বে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতি প্রসঙ্গে আইডিএমসিপ্রধান আলেকজান্দ্রা বিলাক বলেছেন, অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুতির এ সংখ্যা অনেক বেশি। তিনি বলেন, অধিক সংখ্যায় বাস্তুচ্যুতির মূল কারণ ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। এ ছাড়া রয়েছে পাকিস্তানের বন্যা, বিশ্বজুড়ে নতুন ও চলমান সংঘাত এবং আমেরিকা থেকে প্রশান্ত মহাসাগর পর্যন্ত ধীর ও আকস্মিক কিছু দুর্যোগ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর ইউক্রেনে এক কোটি ৭০ লাখ লোকের বাস্তুচ্যুতি ছাড়াও পাকিস্তানে ভয়াবহ বন্যার কারণে ৮০ লাখ লোক তাদের বাড়িঘর ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। সাব-সাহারা অঞ্চলে এক কোটি ৬৫ লাখ লোক বাস্তুচ্যুত হয়েছে। তাদের বেশির ভাগেরই বাস্তুচ্যুতির কারণ সংঘাত। বিশেষ করে কঙ্গো ও ইথিওপিয়ার সংঘাত এ জন্য দায়ী।

এদিকে এনআরসিপ্রধান জান এগল্যান্ড অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুতির এই হারকে ঝড়ের সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি বলেন, দুর্যোগ ও সংঘাত— এই দুয়ে মিলে জনগণের জন্য এর আগে থাকা ঝুঁকি আরো বাড়িয়ে তুলেছে। এর আগে এত ব্যাপক বাস্তুচ্যুতি আর দেখা যায়নি।

https://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2023/05/12/1279192