১২ মে ২০২৩, শুক্রবার, ১১:৫৭

১৪০ টাকার কমে মিলছে না চিনি

দেশের বাজারে ন্যায্যমূল্যে চিনি সরবরাহে গত কয়েক মাসে দফায় দফায় পণ্যটির দাম নির্ধারণ করেছিল সরকার। কিন্তু সেই দামে কোনো বাজারেই চিনি পাওয়া যায়নি। সর্বশেষ গত বুধবারও চিনির কেজিতে ১৬ টাকা বাড়িয়ে ১২০ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। বলা হয়, চিনি পরিশোধনকারীরা এখন থেকে নতুন এই দামে চিনি বিক্রি করতে পারবে। অথচ বাজারে প্রতি কেজি ১৪০ টাকার কমে মিলছে না। আর নিয়ন্ত্রণহীন চিনির বাজারে কোথাও মিলছে না প্যাকেটজাত চিনি।

নতুন দাম অনুযায়ী, পরিশোধিত খোলা চিনির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি কেজি ১২০ টাকা, যা আগে ছিল ১০৪ টাকা। আর প্যাকেটজাত পরিশোধিত চিনির দাম কেজি প্রতি ১০৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২৫ টাকা করা হয়েছে। তবে বাজারে এই বাড়তি দরেও অনেক দোকানে চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। পাওয়া গেলেও গ্রাহকদের কাছে প্রতি কেজি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা রাখা হচ্ছে। আর প্যাকেটজাত চিনি পাওয়াই যাচ্ছে না।

বুধবার এক কর্মশালায় ৩ কারণে চিনির দাম বেড়েছে বলে জানান বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ।

এরমধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেশি হওয়া, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া ও দেশে বাড়তি পরিবহন খরচ। বিষয়টি ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স এসোসিয়েশনকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেশ কিছুদিন ধরেই চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে। আবার পাড়া-মহল্লা আর অলি-গলির মুদি দোকানে কোথাও কোথাও প্রতি কেজি ১৪৫ টাকাও বিক্রি করতে দেখা গেছে। বাজারে এখন প্যাকেটজাত চিনি একেবারেই পাওয়া যাচ্ছে না। সুপারশপে কিছু প্যাকেটজাত চিনি পাওয়া গেলেও তা সীমিত। এমন প্রেক্ষাপটে সরকার প্রতি কেজি খোলা চিনির দাম ১২০ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। অথচ সরকার যে দাম নির্ধারণ করেছে, তার চেয়ে অন্তত ২০ টাকা বেশি দামে বাজারে চিনি বিক্রি হচ্ছে।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের বাজারদরের হিসাবে, ঢাকার বাজারে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায়। এক মাসের ব্যবধানে চিনির দাম বেড়েছে ১৫ শতাংশ। আর এক বছরে বেড়েছে ৬২ শতাংশের বেশি।

কাওরান বাজারে দেখা গেছে, প্রতি কেজি চিনি ১৩০ টাকায় পাওয়া গেলেও রাজধানীর অন্য বাজার ও মুদির দোকানে ১৪০ টাকার বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। সরকার নির্ধারিত প্রতি কেজি ১২০ টাকা কেউ মানছে না।

দাম বেড়ে যাওয়ায় খুচরা ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ বিক্রি বন্ধ রেখেছেন। তাদের দাবি, চিনির বাজারে সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই। পাইকারি বাজারে দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। ডিলাররা দাম বেশি নিলেও দিচ্ছেন না ক্রয় রসিদ। এ ব্যাপারে অভিযোগ দিয়েও তদারকি সংস্থার সদস্যদের দেখা পাওয়া যায় না।

সূত্র জানায়, বাজারে দাম স্বাভাবিক রাখতে গত ২৬শে ফেব্রুয়ারি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চিনির আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার ও নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৫ শতাংশ কমিয়েছে। চিনির জন্য শুল্কহার এখনো বলবৎ রয়েছে। আগামী ৩০শে মে পর্যন্ত এ সুবিধা পাবেন আমদানিকারকরা।

জানা গেছে, বাজারে চিনির দাম স্বাভাবিক রাখতে গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে সরকার চিনির দাম নির্ধারণ করে দিতে শুরু করে। এরমধ্যে পাঁচ দফায় চিনির দাম বেঁধে দেয়া হলেও একবারো চিনির সরকারি মূল্য কার্যকর হয়নি। গত ৬ই এপ্রিল প্রতি কেজি চিনির দাম ৩ টাকা কমায় সরকার। এতে সরকার ঘোষিত পরিশোধিত খোলা চিনির সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য দাঁড়ায় কেজিতে ১০৪ টাকা আর পরিশোধিত প্যাকেটজাত চিনির দাম প্রতি কেজি ১০৯ টাকা। এরপরও বাজারে চিনির দাম বাড়তে বাড়তে ১৪০ টাকায় গিয়ে ঠেকে। এখন উভয় পদের চিনিতে একলাফে ১৬ টাকা বাড়িয়ে ১২০ টাকা সরকার নির্ধারিত করা হলো।

মালিবাগ বাজারের মুদি দোকানি সোলায়মান বলেন, দাম বাড়ায় চিনির সংকট তৈরি হয়েছে। খোলা চিনি পাইকারি পর্যায়ে কেনা পড়ে ১৩০ টাকার বেশি। তাই বিক্রি বন্ধ রেখেছি। কারণ চিনি কেনার সময় পাকা রসিদ দেয় না ডিলাররা। মোবাইল কোর্ট এলে ঝামেলায় পড়তে হয়।

একই কথা জানান সেগুনবাগিচার মহিন জেনারেল স্টোরের বিক্রয়কর্মী সুমন। তিনি বলেন, তিন দিন আগে পাইকারিতেই কেজি ১৩০ টাকার মতো পড়েছে। এখন দাম আরও বেড়েছে। এজন্য কেনা হয়নি, বিক্রিও করি না।

কাওরান বাজারের মালিহা স্টোরের বিক্রয়কর্মী রিয়াজ বলেন, ঈদের পর সংকট যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে দামও। এখন ১৪০ টাকার কমে বিক্রি করা যায় না। আরেক দোকানি বলেন, ডিলাররা দাম নিলেও কোনো ধরনের ভাউচার দেন না। এ বিষয়ে ভোক্তা অধিদপ্তরেও কয়েকবার ফোন দিয়েছি, কেউ তদারকি করছে না।

চিনি আমদানি ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান মেঘনা গ্রুপের জ্যেষ্ঠ সহকারী মহাব্যবস্থাপক তাসলিম শাহরিয়ার বলেন, বিশ্ববাজারে গত ৩৭ বছরের মধ্যে চিনির দর এখন সর্বোচ্চ। এ মাস আগেও চিনির টন ছিল ৫৮০ ডলারের মতো। দাম বেড়ে এখন দাঁড়িয়েছে ৬৭০ ডলারে। ফলে এত দামে চিনি আমদানি করে বাজারজাত করা খুব কঠিন।

পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী গোলাম মাওলা বলেন, বিশ্ববাজারে দাম কতো, সরকার কতো দাম বেঁধে দিয়েছে, তার কোনো প্রভাব বাজারে পড়ে না। মিল থেকে যে দামে চিনি বিক্রি করা হয়, সে দামেই আমাদের কিনতে হয়। এর সঙ্গে সামান্য খরচ যুক্ত করে বিক্রি করি।

https://mzamin.com/news.php?news=55039