১২ মে ২০২৩, শুক্রবার, ১১:৪৪

ক্রয়ক্ষমতা হারিয়ে বিপাকে ভোক্তা

সয়াবিন-চিনির দাম বৃদ্ধিতে বাজারে অস্থিরতা আরও বাড়ছে। ক্রয়ক্ষমতা হারিয়ে সাধারণ ক্রেতা বিপাকে পড়েছে। চিনি ও ভোজ্যতেলের মূল্য বৃদ্ধির আগুনে দিশোহার সাধারণ মানুষ। আর্ন্তজাতিক বাজারে অজুহাতে ভোজ্যতেল ও চিনি নিয়ে শুরু হয়েছে ছিনিমিনি খেলা।

অথচ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট চিনি ও ভোজ্যতেল ফের গুদামজাত করে বাজার অস্থিতিশীল করে তুলেছে। এই সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে সরকার হুঁশিয়ারি দিলেও তার কোন প্রভাব নেই বাজারে। গত বেশ কিছুদিন ধরেই খুচরা বাজারে চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রতি কেজি চিনি ১৩০ টাকায় পাওয়া গেলেও রাজধানীর অন্যান্য বাজার ও মুদির দোকানে ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ, সরকার নির্ধারিত পরিশোধিত খোলা চিনির দাম ছিল ১০৪ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনির দাম ছিল ১০৯ টাকা।

বুধবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, পরিশোধিত খোলা চিনির দাম বাড়িয়ে প্রতি কেজি ১২০ টাকা এবং প্যাকেটজাত পরিশোধিত চিনির দাম প্রতি কেজি ১২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু সরকার নির্ধারিত মূল্য কেউ বাজারে মানছে না। এতে করে বাণিজ্যমন্ত্রী হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন বেশি দামে তেল চিনি বিক্রি করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার বলেন, দেশ এগিয়ে চলেছে, বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। কিন্তু তারপরও দেশে আজকে যে অরাজকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে, ব্যবসার নামে আজকে যে লুটপাট হচ্ছে, মানুষের পকেট কাটা হচ্ছে। মানুষ আজ বাজারে গিয়ে কাঁদছে।

আমরা যখন বাজারে যাই তখন দেখি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, কেন ঊর্ধ্বগতি? আমাদের কিন্তু কোনো কিছুর অভাব নেই, আমরা প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে সয়ংসম্পূর্ণ। চাল, ডাল, তরি-তরকারি, মাছ-মাংস থেকে শুরু করে সবকিছুতেই স্বয়ংসম্পূর্ণ। তারপরও সিন্ডিকেটের কারণে দেশের এই অবস্থা বিরাজ করছে।

চিনি ও ভোজ্যতেলের গায়ে নতুন করে আগুন লাগায় দিশোহার সাধারণ মানুষ। ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট চিনি ও ভোজ্যতেল ফের গুদামজাত করে বাজার অস্থিতিশীল করে তুলেছে। এ নিয়ে সরকারের দায়িত্বশীলদের মাথা ব্যথা তৈরি হয়েছে তা তারাই ভালো জানেন। কিন্তু সাধারণ ভোক্তাদের নাভিশ্বাস উঠেছে।

বৈশ্বিক কারণ দেখিয়ে দেশের ব্যবসায়ীরা ভোজ্যতেল ও চিনির দাম বাড়ালেও আসল ঘটনা তা নয়। আসল ঘটনা হলো অতিমুনাফার লোভে দেশের অসাধু ব্যবসায়ীরা চিনি, ভোজ্যতেল সহ প্রত্যেকটি নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়েছে। অতিমুনাফা পকেটে পুরতে নতুন পথ বের করেছে পণ্য গুদামজাত করে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি।

এর বিরুদ্ধে সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে একই সাথে বাজার মনিটরিং আরও জোরদার করতে হবে। দেশের অসাধু ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম হু হু করে বাড়িয়ে তুলছে, এর পেছনে অতিমুনাফার লোভ ছাড়াও হীন রাজনৈতিক পরিকল্পনা কাজ করছে কি-না তাও খতিয়ে দেখার প্রয়োজন আছে।

জানা গেছে, চিনির দাম এমন লাফিয়ে বাড়ছে, ক্রেতার কাছে এখন তা তেতোই ঠেকছে। কমার কোনো লক্ষণ নেই। এ খবরে বাজারের প্যাকেটজাত চিনি কয়েক দিন ধরেই হাওয়া। গলির মুদি দোকান থেকে বড় বাজার কিংবা সুপারশপ-কোথাও মিলছে না চিনি। পাঁচ-ছয় দোকান ঘুরে খোলা চিনির দেখা পাওয়া গেলেও দাম শুনে অনেক ক্রেতার চোখ উঠছে কপালে।

অভিযোগ রয়েছে, বাজারের অস্থিরতার সুযোগে অনেক অসাধু ব্যবসায়ী চিনি মজুত করে রেখেছে। ফলে বাজারে বেশ সংকট চলছে চিনির। এর মধ্যেই গোদের ওপর বিষফোড়া হয়ে ধেয়ে আসছে ভোজ্যতেলের দুঃসংবাদ। আবার সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর সব আয়োজন চূড়ান্ত। এখন শুধু বাড়তি দাম কার্যকরের অপেক্ষা। তার আগেই বাজারে বেড়ে গেছে তেলের দর।

সম্প্রতি বিশ্ববাজারে বাড়ার কারণে দেশে দাম বেড়েছে বলে জানান চিনি পরিশোধনকারী মিল মালিকরা। এ অজুহাতে এখন দেশেও চিনির দাম বাড়ানোর দাবি তুলে মিলাররা। কিন্তু এ দাবি তোলার আগেই বাজার তেল এবং চিনির দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু তাতে সরকারে পক্ষ থেকে কোর ধরনেই প্রতিকার নেই।

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, কমিশনের কর্মকর্তারা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তেল ও চিনিতে বিদ্যমান শুল্ক ও ভ্যাট এবং আন্তর্জাতিক দামের বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা করে তারা পণ্য দুটির দাম নির্ধারণ করে দিয়েছেন। কিন্তু বাজার তার কোন কার্যকারিতা নেই।

দেশে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট বাজার অস্থিতিশীল করে তুলেছে। অতিমুনাফার জন্য পণ্যর ঘাটতি না থাকার পরেও কৃত্রিম সংকট তৈরি করে যে কান্ড করছে তা পুরোপুরি অবৈধ, অনৈতিক এবং এতে দেশের মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। এর বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর হওয়া খুবই প্রয়োজন।

দেশের বাজার ব্যবস্থা বিধ্যমান সিন্ডিকেট নিয়ে সরকারের মন্ত্রীরা কথা বললেও এই সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কোন কঠোর ব্যবস্থাও নিতে পারেনি সরকার। আর এ কারণেই কোন অজুহাত পেলেই তারা এক জোটে দাম বাড়িয়ে বাজার অস্থির করে তুলে। একই সাথে বাজারে পন্য সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে কৃতিম সংকট তৈরি করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে সরকারের সাথে সমন্বয়ের বৈঠক করে করে। পরে তার যত সামান্য কমিয়ে বাজারে পণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক করেন। এতে করে ক্রেতার পকেট থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়।

এ নিয়ে খোদ এফবিসিসিআইর ক্ষোভ প্রকাশ করলেও কোন কাজে আসেনি। পণ্যের দাম বাড়ছেই। ক্রেতার অভিযোগ সরকারের পক্ষ থেকে যদি প্রতিটি বাজার মনিটরিং করা হতো তাহলে ব্যবসায়ীরা নিজেদের ইচ্ছা মত পণ্যের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করতে পারতো না। কিন্তু সেই কার্যকর মনিটরিং না থাকায় সিন্ডিকেট নিজেদের ইচ্ছা মত পণ্যের দাম বাড়িয়ে বাজার অস্থির করে তুলছে। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে এসব দেখার কেউ নেই।

https://dailysangram.info/post/524278