১১ মে ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ১১:৩৪

তিন বছরের কাজ ১৫ বছরে, খরচ বাড়ছে সাড়ে ৩ গুণ

ঢাকা-টঙ্গী তৃতীয় ও চতুর্থ রেললাইন প্রকল্প

ভারতীয় ঋণে (এলওসি) তিন বছরে ঢাকা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়েলগেজ রেললাইন এবং টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু ২০১২ সালের এই প্রকল্প ১১ বছরেও হয়নি। অন্যান্য প্রকল্পের সঙ্গে ‘সংঘর্ষ’ ও জমি জটিলতায় কবে কাজ শেষ হবে– তা এখনও অনিশ্চিত। তাই প্রকল্প মেয়াদ ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত বাড়াতে প্রস্তাব করেছে রেলওয়ে। ৮৪৮ কোটি টাকা খরচ ধরে শুরু করা প্রকল্পটির ব্যয় সাড়ে তিন গুণ বাড়িয়ে ২ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা করা হচ্ছে।

প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) সভার সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। শুরুতে ছিল ভারতের ঋণের টাকা পেতে জটিলতা। ঋণের শর্ত অনুযায়ী, দেশটির ঠিকাদাররা এ প্রকল্পে কাজ করছেন। নথি অনুযায়ী, প্রথম উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) অনুযায়ী ২০১৫ সালের ৩০ জুনে নির্মাণ সম্পন্নের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু এর ২৪ দিন আগে বিস্তারিত নকশা প্রণয়নে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান আরভী-আয়েশা জেভিকে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ করে রেল।

ডিপিপির প্রথম সংশোধনে ৯০২ কোটি টাকা ভারতীয় ঋণসহ প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে হয় ১ হাজার ১০৬ কোটি টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ দেড় বছর তথা ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি হয়। কিন্তু এর দেড় বছর পর ভারতীয় ঠিকাদার এফকনস এবং কেপিটিএলের যৌথ উদ্যোগে চুক্তি করে রেল। নির্মাণকাজ শুরু হয় পরের বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি। প্রকল্প মেয়াদ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। খরচ বেড়ে হয় ১ হাজার ১২৩ কোটি টাকা।

সংশোধিত ডিপিপি অনুযায়ী, আর দুই মাসের মধ্যে নির্মাণকাজ সম্পন্ন করতে হবে। কিন্তু এপ্রিল পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি ৬৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ। তবে রেললাইন, সেতু, স্টেশন ভবনের মতো অবকাঠামো নির্মাণে অগ্রগতি অনেক কম। গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কাজ এগিয়েছে ৪৯ দশমিক ৭৯ শতাংশ।

উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে ঢালাও খরচ ও সময় বৃদ্ধিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার ক্ষোভ প্রকাশ করলেও ডিপিপির আরেক দফা সংশোধনের প্রস্তাব করেছে রেল। প্রকল্প ব্যয় ২ হাজার ৮৪০ কোটি করার প্রস্তাব করা হয়েছে। যার মধ্যে ভারতীয় ঋণ ২ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা।

প্রকল্প মেয়াদ ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হলেও নথিতে বলা হয়েছে, একই এলাকায় নির্মাণাধীন ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শেষে জমি হস্তান্তর করা হলে ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে নতুন নির্মিত তৃতীয় ও চতুর্থ রেললাইনে আগামী বছরের জুনে ট্রেন চালানো সম্ভব। পরের বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন হবে বিদ্যমান দুই রেললাইনের রেল ট্র্যাক, স্লিপার ও ফিটিংস পরিবর্তনের কাজ। যদি জমি পাওয়া না যায়, তবে এ লক্ষ্যও অর্জিত হবে না বলে জানিয়েছেন রেলের কর্মকর্তারা।

প্রকল্পের তৃতীয় প্যাকেজে টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনের সাতটি স্টেশনে কম্পিউটারভিত্তিক সিগন্যালিং এবং ইন্টারলকিংয়ের কাজ হবে। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রথম দরপত্র আহ্বান হলেও বাজেট না থাকায় এখনও ঠিকাদার নিয়োগ করা যায়নি।

গত সোমবার রেলওয়ে মহাপরিচালক কামরুল আহসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পিআইসি সভার সূত্রে জানা গেছে, নতুন রেললাইনের জন্য ঢাকা থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার এমব্যাংকমেন্ট (বাঁধ) নির্মাণ করতে হবে। গত এপ্রিল পর্যন্ত নির্মাণ হয়েছে ২৬ দশমিক ৬৪ কিলোমিটার। ৯৬ কিলোমিটার রেললাইনের মধ্যে মাত্র ১৯ দশমিক ২৯ কিলোমিটার নির্মিত হয়েছে। রেলওয়ে মহাপরিচালক সমকালকে বলেছেন, প্রতিটি প্রকল্পে নানা চ্যালেঞ্জ থাকে। এগুলো মোকাবিলা করে এগোতে হয়। এখানে রেলের গাফিলতি নেই। নির্মাণসামগ্রীর দাম বৃদ্ধি এবং রেট শিডিউল পরিবর্তন হওয়ায় খরচ এতটা বাড়ছে।

ঢাকা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত ডাবল লাইনে চলে ট্রেন। রেলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কমলাপুর থেকে দিনে ৭২টি ট্রেন চলে। তৃতীয় ও চতুর্থ লাইন নির্মাণে ১৪৪টি ট্রেন পরিচালনা করা সম্ভব হবে। টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত ডাবল লাইন নির্মাণের পর ঢাকা পর্যন্ত ট্রেন যোগাযোগে সময় কম লাগবে।

রেলের কর্মকর্তারা সুফলের কথা বললেও অন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন এখনও অনিশ্চিত। বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে রেলের। মালিবাগ থেকে খিলগাঁও পর্যন্ত রেলের জমিতে রাস্তা নির্মাণ করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। সেখানে তৃতীয় ও চতুর্থ লাইন নির্মাণ করতে চায় রেল। এর সমাধানও হয়নি। মগবাজারের পিয়ারাবাগে প্রকল্পের অতি প্রয়োজনীয় রেলের সাড়ে ৬ শতাংশ জমি রেকর্ড হয়েছে এক ব্যক্তির নামে। এ নিয়ে মামলায় আদালতের স্থিতাবস্থায় কাজ আটকে গেছে।

বিমানবন্দর থেকে বিদ্যমান রেললাইনের ওপর দিয়ে এবং পাশ দিয়ে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ চলমান। এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ শেষে ৩৭ দশমিক ৮ কিলোমিটার ‘রাইট অব ওয়ে’র মধ্যে ৬ দশমিক ১৯ কিলোমিটার বুঝে পেয়েছে রেলওয়ে। রেললাইনের এমব্যাংকমেন্ট ও সাবব্যালাস্ট আগে নির্মাণ করা হলে এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজে তা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ের খুঁটি কোথায় হবে– তা নির্ধারণ না হওয়ায় কাওলায় আটকে আছে রেললাইনের কাজ।

https://samakal.com/whole-country/article/2305171920