১১ মে ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ১১:২৭

বাবাকে নিতে এসে লাশ হয়ে ফিরলেন দুজনই

পরিবারের সঙ্গে খুব বেশি থাকা হয়নি মো. ইউনুস মিঝির (৫৯)। পরিবার থাকত গ্রামে, তিনি চট্টগ্রাম শহরে। অবশেষে সে সুযোগ এসেছিল। মাস দেড়েক পরই অবসরজীবন শুরু হতো ইউনুস মিঝির। তবে অবসরে যাওয়ার আগেই নিজের জমানো ছুটি নিয়ে বাড়ি ফিরতে চেয়েছিলেন। বাবাকে নিতেও এসেছিলেন মো. আবদুল করিম মিঝি (২৫)।

তবে পরিবারকে সময় দেওয়ার আর সুযোগ পেলেন না ইউনুস মিঝি। বাবা-ছেলের বাড়ি ফেরা হয়নি। তাঁর বাড়ি ফেরার খবর পরিবারে যে আনন্দপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করেছিল, তা রূপ নিয়েছে বিষাদে। এক দুর্ঘটনায় নিভেছে বাবা-ছেলের জীবনের আলো।

আজ বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা স্টিল মিল বাজার এলাকায় লরি থেকে রশি ছিঁড়ে ছিটকে গিয়ে পণ্যবাহী একটি কনটেইনার রিকশার ওপর পড়ে। এতে ঘটনাস্থলে রিকশার আরোহী এই বাবা-ছেলের মৃত্যু হয়েছে। ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছেন রিকশাচালক মোর্শেদ আলম (২৭)। তিনি এখন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

ছেলেকে নিয়ে চিকিৎসক দেখিয়ে এবং বাজার করে বাসায় ফিরছিলেন দুজন। বিকেলে বাড়ি যাওয়ার কথা ছিল একসঙ্গে। বাড়ি ঠিকই যাবেন, তবে তা অন্তিমযাত্রা। তার আগে যেতে হলো হাসপাতালের মর্গে।

মো. ইউনুস মিঝির বাড়ি চাঁদপুরের মতলব উপজেলার মুন্সিরহাট এলাকায়। তিন ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে তাঁর সংসার ছিল। স্ত্রী ও সন্তানেরা গ্রামে থাকলেও তিনি চাকরিসূত্রে থাকতেন চট্টগ্রামের পতেঙ্গায়। বড় ছেলে কাতারে থাকেন। ছোট ছেলে মাদ্রাসায় পড়ে। বাবার সঙ্গে যাঁর মৃত্যু হয়েছে, সেই মেজ ছেলে আবদুল করিম মিঝিও ছিলেন মাদ্রাসাছাত্র।

কনটেইনারের নিচে চাপা পড়া ব্যক্তিদের উদ্ধারে অভিযান চালায় ফায়ার সার্ভিস। ফায়ার সার্ভিসের চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক মো. আবদুল মালেক বলেন, নৌবাহিনীর ক্রেনের সাহায্যে বেলা একটার দিকে কনটেইনারের নিচে চাপা পড়া রিকশার দুজন যাত্রীকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।

মো. ইউনুস মিঝি চট্টগ্রাম সাইলোর (খাদ্যশষ্যের গুদাম) সাইলো অপারেটর পদে কর্মরত ছিলেন। তাঁর সহকর্মী ও স্বজনেরা জানান, আগামী জুনে তাঁর অবসরে যাওয়ার কথা ছিল।

নগরের ইপিজেড থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রুপক কান্তি চৌধুরী প্রথম আলোকে জানান, লরিতে থাকা পণ্যবাহী কনটেইনারের দড়ি ছিঁড়ে পাশ দিয়ে যাওয়া রিকশার ওপরে পড়ে। এতে রিকশার দুই যাত্রী বাবা-ছেলে ঘটনাস্থলে নিহত হন। তবে ওই রিকশাচালক কোনো রকম প্রাণে বাঁচলেও গুরুতর আহত হয়েছেন। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

মাথা ও কোমরে আঘাত পাওয়া রিকশাচালক মোর্শেদ আলম বলেন, দুজন যাত্রীকে নিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। হঠাৎ পাশ দিয়ে যাওয়া লরি থেকে কনটেইনার ছিটকে রিকশার ওপর পড়ে। ওই গাড়িতে থাকা একটি শিকল তাঁর শরীরে এসে পড়ে। তবে কীভাবে বের হয়ে এসেছেন, তা জানেন না। এর আগেই জ্ঞান হারান বলেন জানান তিনি।

বুধবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে অ্যাম্বুলেন্স করে হাসপাতালের মর্গে লাশ নিয়ে আসা হলে ডুকরে কেঁদে ওঠেন ইউনুস মিঝির মামা ব্যাংক কর্মকর্তা মো. আবদুল কাদির। তিনি ভাগনে ও নাতির মৃত্যুর খবর পান দুর্ঘটনারও প্রায় তিন ঘণ্টা পরে, বেলা তিনটায়। ব্যাংক থেকে বের হয়ে তিনি ছুটে যান নগরের ইপিজেড থানায়। পরে সেখান থেকে আসেন হাসপাতালের মর্গে।

আবদুল কাদির জানালেন, বাড়ি যাওয়ার জন্য ছুটি নিয়েছিলেন ইউনুস। বাড়ি যাবেন বলে বেতনের টাকাও তুলেছিলেন। বাড়ি থেকে ডেকে এনেছিলেন ছেলেকে। গ্রামে ফিরে পরিবারের সঙ্গে বাকি জীবন থাকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নিয়তি সব কেড়ে নিল।
ইউনুসের মামাতো ভাই বশির প্রথম আলোকে বলেন, বুধবার রাতেই ভাই ও ভাতিজার মরদেহ গ্রামে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু ময়নাতদন্তের কাজ শেষ না হওয়ায় সেটা হচ্ছে না। বৃহস্পতিবার ময়নাতদন্ত শেষে তাঁদের গ্রামে নিয়ে যাবেন।

https://www.prothomalo.com/bangladesh/xmbz3tzcii