১০ মে ২০২৩, বুধবার, ৫:৪০

গরমের সঙ্গে বেড়েছে লোডশেডিংও

দেশে চলছে তীব্র গরম। তার মধ্যেই লোডশেডিং। প্রচ- গরমে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। এতে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি কলকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ওদিকে শহর ও গ্রামে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। গ্রামে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকারও অভিযোগ করেছে কুমিল্লার মুরাদনগর সড়কের এক হোটেল কর্মচারী। বাড়তি চাহিদা পূরণ করতে পারছে না বিতরণ কোম্পানিগুলোও। অন্যদিকে দেশের কয়লাভিত্তিক বড় দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন নিয়ে আবারো টানাপড়েন তৈরি হয়েছে। সময়মতো ডলার না পাওয়ায় কয়লা আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। কয়লার অভাবে দুই সপ্তাহ ধরে বন্ধ হয়ে আছে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন।

ডলার না পেলে উৎপাদন বন্ধ হতে পারে দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র পায়রায়ও। আর এতে বাড়তে পারে লোডশেডিং।
এদিকে দেশে তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪১-এর ঘরে ঘোরাফেরা করছে। এর সঙ্গে ঢাকার নিত্যদিনের জ্যাম, ধুলাবালি, লোডশেডিং মিলিয়ে নগরের মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। প্রচ- গরমে রাজধানীতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে শ্রমজীবীদের। এখন বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ আছে। এটি ঘনীভূত হলে ১২ থেকে ১৪ই মে নিম্নচাপের প্রভাবে টানা বৃষ্টি হতে পারে। ১৫ই মে ঘূর্ণিঝড়েরও পূর্বাভাস রয়েছে। গতকাল ঢাকায় দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

পিডিবি’র দাবি, ৮ই মে সন্ধ্যায় সারা দেশে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১৫ হাজার মেগাওয়াট। এই সময়ে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ উৎপাদন হয় ১৪ হাজার ৮২৬ মেগাওয়াট। সর্বনিম্ন উৎপাদন হয় ১১ হাজার ৩৫৮ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ বিভাগের হিসাব মতে, দেশে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৬ হাজার ৫৫০ মেগাওয়াট। গ্রাহক সংখ্যা ৪ কোটি ৪৮ লাখ।

গত ডিসেম্বরে একটি ইউনিট উৎপাদনে আসার পর এ পর্যন্ত কয়েক দফায় বন্ধ হয়েছে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ মালিকানায় নির্মিত বাগেরহাটের রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। গত ১৫ই এপ্রিল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ হয়ে যায়। এরপর চার দিন পর এটি আবার চালু হয়। কিন্তু কয়লার অভাবে ২৪শে এপ্রিল থেকে এটি আবার বন্ধ হয়ে যায়। নতুন করে আমদানি করা কয়লার জাহাজ গতকাল চট্টগ্রামে পৌঁছার কথা রয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া পার্টনারশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (বিআইএফপিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাঈদ একরাম উল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেন, ডলার-সংকটের কারণে কয়লা আমদানি নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছিল। কয়লার জাহাজ চলে এসেছে। দুই দিনের মধ্যে উৎপাদন শুরু হবে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্র বলছে, দেশে তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো কম চালানো হচ্ছে। আবার গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোও পুরোদমে চালানো যাচ্ছে না। এরমধ্যে হঠাৎ রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহে ঘাটতি তৈরি হয়। এখন দেশের অনেক এলাকায় প্রতিদিন গড়ে এক ঘণ্টার বেশি লোডশেডিং করতে হচ্ছে। যেকোনো বিদ্যুৎকেন্দ্র চালুর আগে পিডিবিকে জানাতে হয়। এরপর বিদ্যুৎ উৎপাদন সূচির সঙ্গে তা সমন্বয় করে পিডিবি। পিডিবি’র সদস্য (উৎপাদন) এস এম ওয়াজেদ আলী সরদার বলেন, কয়েকদিনের মধ্যে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হবে।

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি ইউনিট আছে। দ্বিতীয় ইউনিট আগামী জুনে চালুর কথা রয়েছে। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র সূত্র বলছে, বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিট চালু হলে দিনে ১০ হাজার টন কয়লা প্রয়োজন হবে। বর্তমানে তাদের ৬ লাখ টন কয়লার ক্রয়াদেশ দেয়া আছে। নতুন করে ডাকা দরপত্রে অংশ নিয়ে আরও ৬০ লাখ টন কয়লার ক্রয়াদেশ পেয়েছে দেশের একটি শীর্ষ ব্যবসায়ী গ্রুপ। ৬০ লাখ টন কয়লা দিয়ে আগামী তিন বছর রামপাল কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে। ইন্দোনেশিয়া থেকে আনা হচ্ছে এসব কয়লা।

১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে পটুয়াখালীর কয়লাভিত্তিক পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। বিদ্যুৎ সরবরাহের দিক থেকে এটি দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র। বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশ-চীন পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসি) এটি নির্মাণ করে। ডলার-সংকটের কারণে কয়লা আমদানি নিয়ে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো একই সমস্যায় পড়েছে পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র।

গত তিন বছরে এমন উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি বলে জানান পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরিচালনার দায়িত্বে থাকা (কেন্দ্র ব্যবস্থাপক) শাহ্ আবদুল মওলা। তিনি বলেন, টাকা পরিশোধ করে কয়লা কিনতে হয়। এরপরও ডলারের সংকট থাকায় ৬ মাস পর পরিশোধের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাও এখন বিল দেয়া যাচ্ছে না। মজুত কয়লা দিয়ে এ মাস হয়তো কোনো রকমে চালানো যাবে। এরমধ্যে ডলার না পেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে।

https://mzamin.com/news.php?news=54720