৯ মে ২০২৩, মঙ্গলবার, ৬:২৬

চট্টগ্রামে ডায়রিয়ার প্রকোপ কারণ খুঁজছে আইইডিসিআর

চট্টগ্রামের ১৪টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ ১৮টি হাসপাতালে গতকাল সোমবার ৬২৮ জন রোগী ভর্তি থাকার খবর পাওয়া গেছে। এসব হাসপাতাল ও চিকিৎসক সূত্রে এই তথ্য জানা যায়।
চিকিৎসকরা বলছেন, চট্টগ্রামে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। এক সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী বেশি আসছে।

চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) গত ২৪ ঘণ্টায় ৭৩ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছে। গতকাল বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে সরকারি ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মোট রোগী ছিল ১০৩ জন। এর মধ্যে ৯০ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। অর্থাৎ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মোট রোগীর ৮৭ শতাংশ ডায়রিয়ার রোগী।

এ ব্যাপারে গতকাল বিআইটিআইডি ক্লিনিক্যাল ট্রপিক্যাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মামুনুর রশীদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ডায়রিয়া রোগী অনেক বেড়ে গেছে। কিন্তু আজ (গতকাল) সকাল থেকে ওয়াসার পানি সরবরাহ বন্ধ থাকায় শুধু রোগী-স্বজন নয়, সবাই দুর্ভোগে পড়েছে। ডায়রিয়া রোগীদের জন্য পানি অতি প্রয়োজন। পানি ছাড়া কিভাবে কষ্টে দিন যাচ্ছে, তা বলে বোঝানো যাবে না। ওয়াসা কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ করলেও তারা এখনো কোনো পানির ব্যবস্থা করতে পারেনি।’

চট্টগ্রাম নগর এবং জেলার সরকারি ও বেসরকারি অন্যান্য হাসপাতালেও ডায়রিয়া রোগীর ভর্তি বেড়েছে। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সকাল ৮টার পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ১৪ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৯১ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছে। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় গত শনিবার এসব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছিল ২৬৪ জন।

সন্ধ্যায় নগরের বিভিন্ন হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে প্রায় ১৫০ জন, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ৪৩ জন, বেসরকারি চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে ৫০ জনের বেশি এবং অন্যান্য হাসপাতাল ও ক্লিনিকের প্রতিটিতে চার-পাঁচজন ডায়রিয়ার রোগী চিকিৎসাধীন। এসব হাসপাতালের আউটডোরেও প্রতিদিন আরো কিছু রোগী প্রাথমিক চিকিৎসা নিচ্ছে।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান গতকাল সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠকে বলেন, চট্টগ্রামে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। এক সপ্তাহ ধরে ডায়রিয়া রোগী বেশি আসছে। প্রতি ২৪ ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ জন ভর্তি হচ্ছে। এখন প্রায় ১৫০ জন রোগী চিকিৎসাধীন। অনেকে সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরছে।

একই হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. রাজীব পালিত বলেন, ‘ডায়রিয়া রোগী বাড়ার কারণ অনুসন্ধানে ঢাকা থেকে আইইডিসিআরের টিম চট্টগ্রামে এসে আজ (গতকাল) জেলার বোয়ালখালীতে গেছে। চমেক হাসপাতালেও আসার কথা।’ দুঃসহ গরমের কারণে ডায়রিয়া দেখা দিয়েছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি তদন্ত না করে বলা যাচ্ছে না।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (উপপরিচালক) ডা. শেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে আজ (গতকাল) মোট চিকিৎসাধীন ১৬০ জন। এর মধ্যে ৪৩ জন ডায়রিয়া রোগী।’

তিনি বলেন, কয়েক দিন ধরে চিকিৎসাধীন রোগীর প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ডায়রিয়া রোগী। উষ্ণ আবহাওয়া, বাসি খাবার খাওয়া, জীবাণুযুক্ত পানি ব্যবহারসহ বিভিন্ন কারণে ডায়রিয়া বাড়তে পারে। এ কারণে ফোটানো ও বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। রোদ এড়িয়ে চলতে হবে, খোলা জায়গায় রাখা খাবার এড়াতে হবে।

চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির জেনারেল সেক্রেটারি রেজাউল করিম আজাদ বলেন, সর্বশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় ৪০টি শিশু ও ১৪ জন প্রাপ্তবয়স্ক ডায়রিয়া নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

চট্টগ্রামে গরমের মধ্যে ডায়রিয়া রোগী বেড়ে যাওয়ায় কারণ অনুসন্ধানে ঢাকার রোগতত্ত্ব্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) ১২ সদস্যের একটি এবং চট্টগ্রামের সিভিল সার্জনের গঠন করা তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গতকাল থেকে আলাদাভাবে কাজ শুরু করেছে। আইইডিসিআর দলে ঢাকার আইসিডিডিআরবির একাধিক কর্মকর্তাও রয়েছেন। গত রবিবার এই দল ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে আসে।

https://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2023/05/09/1278238