৯ মে ২০২৩, মঙ্গলবার, ৬:২৪

অর্থনৈতিক সঙ্কটের শঙ্কা

বৈদেশিক মুদ্রার সঙ্কট কাটাতে বাস্তবায়ন জরুরি নয় এমন সব উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ দীর্ঘদিন স্থগিত রাখা হয়েছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে। পাশাপাশি ডলারের তুলনায় টাকার মান কমিয়ে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করে ব্যয় কমানোর চেষ্টা করা হলেও ডলার সঙ্কট না কমে উল্টো বাড়ছে। আবার আমদানি ব্যয় মেটাতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে চলতি অর্থবছরে রেকর্ড ১২ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে টান পড়েছে। ডলার সঙ্কটে অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি পর্যন্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। তেল-গ্যাস-কয়লা আমদানি ব্যাহত হওয়ায় বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এর মধ্যে রফতানি আয় সাড়ে ১৬ শতাংশ ও রেমিট্যান্স প্রায় ১৭ শতাংশ কমায় এ চাপ আরো বাড়ছে। এদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) গত মার্চে সর্বনিম্ন ২২ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার নিট রিজার্ভ রাখার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল, যা পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। বর্তমানে রিজার্ভ আছে ২৯ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার। এটি গত ৭ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। সরকারের অর্থনীতিবিষয়ক থিঙ্কট্যাঙ্ক, অর্থনীতিবিদ, এমনকি আড্ডা এবং ফেসবুকে সকলের আলোচনার কেন্দ্রে এখন দেশের রিজার্ভ পরিস্থিতি এবং এ সংক্রান্ত সঙ্কট। আর এ মুহূর্তে দেশের রিজার্ভ আসলে কত, তা নিয়েও সরকারের সঙ্গে আইএমএফের মতপার্থক্য আছে।

অর্থিক খাতের বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে রিজার্ভের পরিমাণ আরো কম। তাই আগামীতে আমদানি কমানো এবং রফতানি বৃদ্ধি করা না গেলে চলতি বছরের শেষ নাগাদ বড় ধরনের অর্থনৈতিক সঙ্কটের মুখে পড়তে হবে বাংলাদেশকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক গত রোববার বলেছেন, আমাদের মূল চ্যালেঞ্জ এখন রিজার্ভ ধরে রাখা। একই সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গণনার আন্তর্জাতিক রীতি অনুসরণ করে নিট রিজার্ভ প্রকাশ করা হবে।

অর্থনীতিবিদ এবং বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির বোর্ড অব ট্রাস্টির সদস্য ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে রিজার্ভের পরিমাণ যা বলা হচ্ছে, সেটা নিঃসন্দেহে দেশের অর্থনীতির জন্য বিপদ সঙ্কেত। তিনি মনে করেন, রিজার্ভ কমে যাওয়ায় প্রয়োজন বা চাহিদা অনুযায়ী পণ্য আমদানি প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ছে। সামনে যা আরো বাড়বে। একইসঙ্গে এটি টাকার বিনিময় মূল্যকেও দুর্বল করে দিচ্ছে। এর ফলে, অনেক ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি হবে। তিনি এখনকার পরিস্থিতিতে রফতানি বাড়ানো এবং প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানোর উৎসাহ বাড়ানোয় গুরুত্বারোপ করেছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব মতে, ২৯ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ দিয়ে পাঁচ মাসের কিছু বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে। তবে, আইএমএফ’র হিসাবে ব্যবহারযোগ্য যে রিজার্ভ রয়েছে তা দিয়ে ৩ মাসের আমদানি ব্যয়ও মেটানো সম্ভব নয়। কারণ, আইএমএফ’র হিসাবে বর্তমানে রিজার্ভে যে অর্থ দেখানো হচ্ছে, সেখান থেকে রফতানি উন্নয়ন তহবিলে (ইডিএফ) সরবরাহ করা ৭ বিলিয়নসহ অন্যান্য মিলিয়ে ৮ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার বাদ যাবে। এটা বাদ গেলে রিজার্ভ থাকবে ২১ বিলিয়ন ডলারের ঘরে। অথচ আগামী জুনে রিজার্ভ ২৪ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার শর্ত রয়েছে সংস্থাটির। একই সঙ্গে আগামী সেপ্টেম্বরে নিট রিজার্ভের পরিমাণ বাড়িয়ে ২৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার এবং ডিসেম্বরে ২৬ দশমিক ৪১ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্য ঠিক করে দিয়েছে আইএমএফ। বর্তমান প্রেক্ষাপটে আগামী দিনে আইএমএফ’র লক্ষ্য অনুযায়ী রিজার্ভ ধরে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। কারণ সাধারণত অন্যান্য সময়ের ঈদের সময়ে অনেক বেশি রেমিট্যান্স আসে এবার সেখানেও ঘাটতি দেখা গেছে। হজের মৌসুম শুরু হয়েছে। এখন আরো প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে হজযাত্রীদের। তাই রিজার্ভের ওপর সামনে চাপ আরো বাড়বে। কারণ রিজার্ভ বাড়ার কোনো পথ সামনে নেই। এতে দেশে বিদেশি মুদ্রার সঙ্কট আরো প্রকট আকার ধারণ করবে। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন জানান, জুনের মধ্যে নিট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গড়ে তোলা সম্ভব হবে না। এক্ষেত্রে শর্ত পূরণ নাও হতে পারে। তবে শর্ত পূরণে ব্যর্থ হলে সংস্থাটির স্টপ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম থেকে একটি ছাড়পত্র প্রয়োজন হবে। নরমালি ওয়েভার চাইতে গেলে ঋণের সুদ হারের ক্যাপ তুলে দেয়া, মুদ্রা বিনিয়ম হার বাজারভিত্তিক করার অঙ্গীকার চাইতে পারে সংস্থাটি।

অবশ্য আইএমএফ রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা প্রদানেই থেমে থাকেনি; বর্তমান রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের সর্বশেষ অবস্থা নিয়েও তারা প্রশ্ন তুলেছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্যাংকগুলোতে পড়ে থাকা বাংলাদেশ থেকে রফতানি হওয়া পণ্যের বিপরীতে ৩০০ কোটি ডলার কেন দেশে আসছে না, তা জানতে চেয়েছে আইএমএফ। বাংলাদেশ সফররত আইএমএফ’র প্রতিনিধিদল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করে বিষয়টি উত্থাপন করে। সংস্থাটি মূলত রফতানির আড়ালে অর্থ পাচার নিয়ে কথা বলেছে। অবশ্য রফতানি তথ্যের সংজ্ঞার গরমিলের কারণে রফতানি আয় দেশে না আসার পরিমাণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি জানিয়েছে, কোনো পণ্য রফতানি হওয়ার ১২০ দিনের মধ্যে দেশে আসার নিয়ম রয়েছে। আবার বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশিদের মালিকানাধীন কোম্পানির মুনাফাও দেশে আনতে হয়। দেশে আসেনি এমন রফতানি আয় ও মুনাফার পরিমাণ ১৪০ কোটি ডলার। আর এমন এক সময়েই তারা রফতানি আয়ের একটি অংশ দেশে না আসার বিষয়ে জানতে চাইল, যখন বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোতে ডলার সঙ্কট চলছে। ডলার সঙ্কট এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, সঙ্কটের কারণে ব্যবসায়ীরা ঋণপত্র (এলসি) খুলতে গেলে ব্যাংক তাঁদের ফিরিয়ে দিচ্ছে। এমনকি আগামী অর্থবছরে ৬৫ হাজার কোটি টাকার অতিরিক্ত রাজস্ব কিভাবে এবং কোন কৌশলে আহরণ করা হবে সে বিষয়েও প্রশ্ন রয়েছে আইএমএফ’র। এ বিষয়ে আইএমএফ জানতে চেয়েছে কীভাবে এবং কোন কৌশলে এ অতিরিক্ত কর আহরণ করা হবে। এছাড়া চলতি সংশোধিত বাজেট এবং আগামী অর্থবছরের বাজেটে কত টাকা ব্যয় হবে, অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ ও পরবর্তী উত্তরণে পদক্ষেপগুলো নিয়েও আলোচনা হয়। অপরদিকে মধ্যবর্তী অর্থবছরের (২০২৪-২০২৭) বাজেট ঘাটতি কমিয়ে আনা এবং ঘাটতি অর্থায়নে চার ভাগের এক অংশ সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার কথা বলা হয়েছে।

সূত্র মতে, দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত সঙ্কটজনক। রফতানি আয়, রেমিট্যান্স, বিনিয়োগ, রাজস্ব আহরণÑ কোনো ক্ষেত্রেই সুখবর নেই। রফতানি আয় কমতে শুরু করেছে। এপ্রিলে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫০৫ কোটি ডলার। আয় হয়েছে ৩৯৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আয় কমেছে ২১ দশমিক ৬৭ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ে আয় হয়েছিল ৪৭৯ কোটি ৮৭ লাখ ডলার। এ হিসাবে আয় কমেছে ১৬ দশমিক ৫২ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, এপ্রিলে রেমিট্যান্স এসেছে ১৬৮ কোটি ৩৫ লাখ ডলার। মার্চের তুলনায় তা ১৭ শতাংশ কম। গত বছর এপ্রিলে এসেছিল ২০১ কোটি ডলার। সে হিসাবে আয় প্রায় ১৭ শতাংশ কমেছে। সাধারণত ঈদের সময় রেমিট্যান্স বেশি আসে। এবার ঈদে প্রত্যাশার তুলনায় অনেক কম এসেছে। এছাড়া দেশের রফতানি আয়ের তিন চতুর্থাংশের বেশি আসে গার্মেন্ট থেকে। সেই গার্মেন্ট রফতানি অনেক কমেছে। গার্মেন্ট পণ্যের প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্রেই মার্চে রফতানি কমেছে প্রায় ৩৬ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে আগের বছর মার্চে রফতানি হয়েছিল ১ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন ডলার। এবার হয়েছে ৬৬৬ দশমিক শূন্য ৩ মিলিয়ন ডলার। সামনের মাসগুলোতেও গার্মেন্ট রফতানি কমার আশঙ্কা করা হচ্ছে। রফতানিকারকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর ক্রেতারা ইতোমধ্যে তাদের ক্রয় কমিয়ে দিয়েছে। তারা এমনকি ৫ শতাংশ মূল্য ছাড়ও দাবি করছে। বাংলাদেশের জন্য এটা যে খুবই উদ্বেগজনক। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অর্থনীতির প্রধান দুই স্তম্ভ হলো গার্মেন্ট রফতানি ও রেমিট্যান্স। এই দু’ ক্ষেত্রেই যদি আয় কমে, তবে অর্থনীতি গভীর খাদে গিয়ে পড়তে বাধ্য। বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসানও এ বছর গার্মেন্ট রফতানি গভীর চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তার মতে, বিশ্ববাজারে গার্মেন্ট রফতানি অন্তত ১০ শতাংশ কমে যেতে পারে।

ডলার সঙ্কটে কাঁচামাল আমদানি কমায় দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের ব্যয় বেড়েছে। পাশাপাশি উন্নয়ন কাজ স্থবির হয়ে পড়েছে। আন্তঃব্যাংক মানি মার্কেটে ২০২২ সালের শুরুতে প্রতি ডলার বিক্রি হয়েছে ৮৫ টাকা। বর্তমানে তা ১০৯ টাকায় উন্নীত হয়েছে। যদিও খোলাবাজারে আরো ৭-৮ টাকা বেশি। যা মুদ্রাস্ফীতিকে ডাবল ডিজিটের কাছাকাছি ঠেলে দিয়েছে। এতে দেশের সীমিত ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। অবশ্য ডলার সঙ্কটে চাল-গমসহ খাদ্যপণ্য আমদানিতে শুল্ক কমিয়েও আমদানি বাড়ানো যায়নি। আবার শিল্পের কাঁচামাল, জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ, চাল, সার, ছোলা ভোজ্যতেলসহ জরুরি নিত্যপণ্য আমদানিতে এলসি (ঋণপত্র) খুলতে পারছে না ব্যাংকগুলো। বিশ্লেষকরা বলছেন, যা অর্থনীতিকে শঙ্কটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। গত রোববার আইএমএফ এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ মিশনের প্রধান রাহুল আনন্দ বলেছেন, তিনটি চ্যালেঞ্জের মুখে আছে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতি। এক. ক্রমাগত মুদ্রাস্ফীতির চাপ, দুই. বৈশ্বিক আর্থিক অস্থিরতা এবং তিন. বাণিজ্যের অংশীদারদের মধ্যে মন্দা প্রবৃদ্ধি হ্রাস। যে কারণে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং টাকার ওপর চাপ অব্যাহত আছে। সামনের দিনগুলোতে যা অব্যাহত থাকবে।
এছাড়া বিদেশি ঋণ পরিশোধ নিয়ে দুশ্চিন্তা ক্রমেই বাড়ছে। গত কয়েক বছরে চীন, রাশিয়া ও ভারতের কাছ থেকে নেয়া কঠিন শতের ঋণ এ দুশ্চিন্তাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশে মাথাপিছু বৈদেশিক ঋণ ৭ বছর আগের তুলনায় দ্বিগুণ হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রেই বৈদেশিক ঋণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে মাথাপিছু বৈদেশিক ঋণ ছিল ৫৫৮ ডলার, যা ২০২০-২১ অর্থবছরে ছিল ৪৮২ ডলার। গত অর্থবছরে দেশের মোট বৈদেশিক ঋণ ছিল ৯৫ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার, যা ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ছিল ৪১ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলার। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেছেন, এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সরকার রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র, ঢাকা মেট্রোরেল, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর ও বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং কর্ণফুলী টানেলসহ বিদেশি অর্থায়নে বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এর মধ্যে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের জন্য বৈদেশিক ঋণ প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার। তিনি বলেন, এর ফলে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এদিকে দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি আগের মতই। সরকার বিনিয়োগ অকর্ষণে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের তেমন আগ্রহ লক্ষ করা যাচ্ছে না। বহু বছর ধরেই বিনিয়োগ ক্ষেত্রে এক ধরনের শ্লথতা বা বন্ধ্যাত্ম্য চলছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, এখনো তিনটি চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। প্রথমটি কোভিড, দ্বিতীয়টি ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং তৃতীয়টি বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি। এ সমস্যার সমাধান কবে হবেÑ সেটা কেউই বলতে পারবে না। সঙ্কট মোকাবিলায় সময়ের সঙ্গে প্রয়োজনীয় নীতিমালা গ্রহণ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়াও আগামীতে বেশকিছু বিষয় বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে জানিয়ে তিনি বলেন, বিশ্ব বাজারে জ্বালানিসহ পণ্যদ্রব্যে মূল্য বেড়েছে, তাই দেশের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। এছাড়া আমাদের অর্থনীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ আসছে সামনে। এটা হলো জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তাই আগামীতে আমাদের পরিস্থিতি কী হবে তা সময় বলে দেবে।

অনুমোদন করা ঋণ পেতে আইএমএফ বাংলাদেশকে যে শর্ত দেয়া হয়েছে এর মধ্যে অন্যতম- ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করা, আদায়ের অযোগ্য ঋণ বিষয়ে আলাদা কোম্পানি গঠন করা, জ্বালানির মূল্য নির্ধারণে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী ফর্মুলা কার্যকর করা, আয়কর আইন সংসদে পাস করা, করছাড়ের ওপর বিস্তারিত নিরীক্ষা করা, বাজেটের নির্দিষ্ট অংশ সামাজিক ব্যয়ের (শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা কমর্সূচি) জন্য রাখা এবং ক্রমান্বয়ে তা বাড়ানো।

উল্লেখ্য, আইএমএফ’র ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণের প্রথম কিস্তি গত ফেব্রুয়ারিতে পেয়েছে বাংলাদেশ। আগামী নভেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়কে কেন্দ্র করে গত ২৫ এপ্রিল থেকে ৭ মে পর্যন্ত ঢাকা সফর করে দলটি। তাদের ঋণে বাস্তবায়ন কর্মসূচি এবং শর্তের অগ্রগতি পর্যালোচনা করতেই দলটি ঢাকায় আসে। গত ১৪ দিনে তারা অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সঙ্গে ৩৫টি বৈঠক করেছে।

https://dailyinqilab.com/national/article/573171