৭ মে ২০২৩, রবিবার, ৩:৫৯

সোনার হরিণ চিনি!

গত কয়েকমাস ধরে অস্থির চিনির বাজারে দেখা নেই চিনির। কোনো দোকানেই মিলেছে না প্যাকেট কিংবা খোলা চিনি। অভিযোগ উঠেছে, দরদাম ঠিক হলেই কেবল চিনি বের করছেন বিক্রেতারা। গতকাল শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়। চিনি যেন হয়ে উঠেছে সোনার হরিণ। কোনো দোকানেই মিলছে না নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটি।

সরজমিনে বাজার ঘুরে দেখা যায়, কোনো দোকানেই ‘নেই’ প্যাকেট কিংবা খোলা চিনি। তবে বাজারে ঠিকই বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতা বুঝে প্রতিকেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায়। ক্রেতাদের অভিযোগ, চিনি লুকিয়ে রেখেছেন বিক্রেতারা। কেবল দরদাম ঠিক হলেই বের করছেন। আর বিক্রেতাদের দাবি, মিলার পর্যায় থেকে চিনি না পাওয়ায় ও দাম বেশি থাকায় দোকানে চিনি তুলছেন না তারা। এছাড়া চিনির বাজারের অস্থির পরিস্থিতির মধ্যেই গত মাসের ১৭ এপ্রিল বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনে (বিটিসি) চিনির দাম কেজিতে ২৬ টাকার বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠিয়েছেন আমদানিকারকরা। তাদের দাবি, বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত চিনির দাম বেড়ে ৬৮০ থেকে ৭০০ ডলার হয়ে গেছে। তাই খোলা চিনি কেজিপ্রতি ১২৫ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনি কেজিপ্রতি ১৩৫ টাকা নির্ধারণের জন্য বিটিসিতে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

অবশ্য বিশ্ববাজারে চিনির দাম ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। বাড়তি দামে বিশ্ববাজার থেকে চিনি কিনে এনে দেশে দাম পাওয়া যাবে কি না, সেই শঙ্কায় আমদানিও কমিয়ে দিয়েছে কোম্পানিগুলো। অর্থাৎ চিনি আমদানিতে বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আর তাই দেশে এখন চিনি আমদানি কম হচ্ছে। চলতি বছরের প্রথম চার মাসে চিনি আমদানি হয়েছে ৭ লাখ ৩৮ হাজার টন। গত বছর একই সময়ে আমদানি হয়েছিল সাড়ে ১০ লাখ টন। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় এবার আমদানি কমেছে প্রায় ৩০ শতাংশ বা ৩ লাখ টন।

সূত্র মতে, এ বছর জানুয়ারিতে প্রতি টন কাঁচা চিনি আমদানি হয় ৪৭০ ডলারে, যা ধারাবাহিকভাবে বেড়ে এপ্রিলে দাঁড়ায় ৫৩০ ডলারে। অর্থাৎ চার মাসের ব্যবধানে বিশ্ববাজারে চিনির টনপ্রতি দাম ৬০ ডলার বেড়েছে। প্রতি ডলারের দাম ১০৭ টাকা ধরলে চিনির দাম কেজিপ্রতি প্রায় সাড়ে ছয় টাকা বেড়েছে বলা যায়। তবে দেশের বাজারে চিনির দাম বেড়েছে অনেক বেশি।

এ পরিস্থিতিতে গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ও দেশবন্ধু গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) গোলাম রহমান বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দেন। এই চিঠিতে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত চিনির দাম অনেকটাই বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি মেট্রিক টন চিনির দাম ৬৭৫ মার্কিন ডলার। অথচ এক মাস আগেও তা ছিল ৫২০ মার্কিন ডলার। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লেও দেশের বাজারে সে হারে বৃদ্ধি না পাওয়ায় সংগঠনের সদস্যরা চিনি আমদানির সাহস পাচ্ছেন না।

জানতে চাইলে গোলাম রহমান বলেন, বর্তমানে বিশ্ববাজারের দামে চিনি আমদানি করলে বাজারে খুচরা মূল্য অনেক বেড়ে যাবে। এ পরিস্থিতিতে সরকারের পরামর্শ ও সিদ্ধান্ত জানতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে।

এদিকে বিশ্ববাজারে চিনির দাম এখন বেশি। কিন্তু এই দরে চিনি আমদানি হয়নি। অথচ এর প্রভাব পড়েছে বাজারে। যেমন সরবরাহ কমে গেছে। তাই সরকারের নির্ধারিত দরে চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। এপ্রিল মাসের শুরুতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রতি কেজি খোলা চিনির সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছিল ১০৪ টাকা। তখন মোড়কজাত চিনির দাম নির্ধারণ করা হয় ১০৯ টাকা কেজি। খুচরা বাজারে এখন প্রতি কেজি চিনি ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।##

https://dailyinqilab.com/national/article/572736