৬ মে ২০২৩, শনিবার, ১২:৪৫

ভূমিকম্পে কাঁপল দেশ

- কেন্দ্রস্থল ঢাকার দোহারে

আবারো ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে দেশ। এবারের ভূমিকম্পের কেন্দ্র স্থল ছিল ঢাকার কাছে দোহার উপজেলায়। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা খুব বেশি না থাকলেও কেন্দ্রস্থলের তথ্য পাওয়ার পর মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। কারণ ঢাকার এত কাছে ভূমিকম্পের ইতিহাস খুবই কম। গতকাল শুক্রবার সকাল ৫টা ৫৭ মিনিট ৮ সেকেন্ডে ৪.৩ মাত্রার ভূমিকম্পটি সংঘটিত হয়েছে। তখন অনেকের ঘুমই ভাঙ্গেনি, আবার অনেকে ঘুম ভেঙ্গে নিজেকে তৈরিতে ব্যস্ত ছিলেন। তবে যারা শুয়ে ছিলেন অথবা বসে ছিলেন তারাই ভূমিকম্প বেশি টের পেয়েছেন।

ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকার আবহাওয়া অফিসের ভূকম্পন পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র থেকে মাত্র ৪২ কিলোমিটার দূরে দোহারের উত্তর-পশ্চিমে। ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরে। ঢাকার এত কাছে এই মাত্রার ভূমিকম্পের নজির বিরল। এত কাছে একটি সক্রিয় ভূ-চ্যুতি রয়েছে এটা ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞদের ভাবিয়ে তুলেছে। এর আগে ২০১২ সালের ১ মার্চ দোহার থেকে ১৪.২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে ৪.৫ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়েছিল।

সাম্প্রতিককালে সবচেয়ে বড় ভূমিকম্পটি হয়েছিল ১৯৯৭ সালের ২১ নভেম্বর বিকেল ৪টা ৫৩ মিনিটে। সেদিনকার ভূমিকম্পের রিখটার স্কেলের মাত্রা ছিল ৬.১। সাম্প্রতিকালে এর চেয়ে বড় ভূমিকম্প হয়নি। সাড়ে ৫ মাত্রার নিচে ভূমিকম্প হয়েছে। সেটা ভারতের মিজোরামে এর উৎপত্তিস্থল হলেও বাংলাদেশে পার্বত্য চট্টগ্রামে একটি ৬তলা ভবন ধসে গিয়ে ২১ জনের প্রাণহানি ঘটেছিল।

বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে মুহূর্তেই ঢাকায় কয়েক লাখ মানুষ মারা যাবে ধসে যাওয়া ভবন চাপায়। কারণ এ শহরে বিল্ডিং কোড না মেনে গড়ে ওঠা ভবনের সংখ্যা অনেক। অনিয়ম করে তৈরি হওয়া ভবনগুলো ধসে যাওয়ার আশঙ্কাই বেশি।

ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, ছোট ছোট ভূমিকম্প বড় ভূমিকম্পের ইঙ্গিত প্রদান করে। বড় ভূমিকম্প হলে ঢাকা শহরের ক্ষতিটা সবচেয়ে বেশি হবে। তাতে আমাদের সাধারণ মানুষের করার কিছু নেই সতর্ক হওয়া ছাড়া। কিন্তু সরকার কিংবা নিয়ন্ত্রক সংস্থার দায় রয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি হলে সরকার কিংবা নিয়ন্ত্রক সংস্থাকেই বেশি দায় নিতে হবে। কারণ ভবন নির্মাণ এবং ভবনটি বিল্ডিং কোড অনুসারে নির্মাণ করা হচ্ছে কি না, যে প্ল্যানটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে পাস করিয়ে নেয়া হলে সে অনুসারেই ভবন মালিক ভবনটি নির্মাণ করছে কি না দেখার দায়িত্ব তাদেরই।

ভূমিকম্পের ব্যাপারে অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, গত ১০০ বছরের মধ্যে বড় কোনো ভূমিকম্প এই অঞ্চলে হয়নি বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেকোনো সময় হয়তো আরেকটি বড় ভূমিকম্প হতে পারে। তিনি বলেন, ভূমিকম্পের ক্ষতি থেকে বেঁচে থাকতে সামনে যে ভবনগুলো তৈরি করা হবে মালিক পক্ষকে বলব, আপনারা সেগুলো ভূমিকম্প সহনীয় করে তৈরি করবেন নিজেদের নিরাপত্তার জন্যই।

অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী ভূমিকম্প প্রসঙ্গে বলেন, ছাট ছোট ভূমিকম্প প্রায়ই ঘটছে এই ঢাকা শহরের আশে-পাশে। ইউএসজিএস ছোট ভূমিকম্পগুলো শনাক্ত করতে পারে না বলে আমরা জানতে পারি না। তিনি বলেন, গত ২৫ এপ্রিল ঢাকার কাছে রূপগঞ্জে আরেকটি ভূমিকম্প হয়েছে কিন্তু আমরা বুঝতে পারিনি।

আর্থকোয়েক ট্র্যাক ডটকম বলছে, ২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইলের ১২ কিলোমিটার পূর্বে ৪ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। ২০০৮ টাঙ্গাইলের কাছে নাগরপুরে এবং ২০১৯ সালে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে ৪ মাত্রার কম ভূমিকম্প হয়েছে। এ ছাড়া গত ১৫ বছরে নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জে অন্তত চারবার ভূমিকম্প হয়েছে বলে জানাচ্ছে সংস্থাটি। ঢাকার কাছে ফরিদপুরেও গত ১৫ বছরের মধ্যে দুইবার ৪ মাত্রার বেশি শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়েছে। ঢাকার কাছে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়েছিল ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে নারায়ণগঞ্জে ৫.১ মাত্রার।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/745725