২২ এপ্রিল ২০১৭, শনিবার, ১১:৩৬

সুনামগঞ্জে বিপর্যয়ে ২০ লাখ মানুষ

সুনামগঞ্জের ২০ লাখ মানুষ চরম বিপর্যয়ের মুখে। সর্বত্র চলছে হাহাকার। নিজেদের খাদ্য অর্থ সম্পদ হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন লাখ লাখ মানুষ। পহাড়ি ঢলে হাওর রক্ষা বাঁধ ভেঙে ধান তলিয়ে যাওয়া, গো-খাদ্যের অভাবে গরু ছাগল নামমাত্র মূল্যে বিক্রি, ধান পচে হাওরের পানিতে বিষক্রিয়ায় মাছের মড়ক ও একই কারণে হাওর পারের হাঁসের খামারে হাঁসের মড়ক জেলার অর্থনীতিকে পঙ্গু করে ফেলছে। সেই সঙ্গে বিশুদ্ধ পানিয় জলের অভাবে নানা অসুখ ছড়িয়ে পড়ছে হাওর পারের গ্রামে। শত বছরের মধ্যে এরকম বিপর্যয় দেখেননি এ অঞ্চলের মানুষ।

হাওরের ধান পচা বিষাক্ত পানির দুর্গন্ধে গ্রামগুলোতে মানুষ বসাবাস করার অনুপযোগী হয়ে উঠছে। এদিকে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হাওর বিল নদীতে মাছ ধরা এক সপ্তাহের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণায় মৎস্যজীবীরা চরম বিপদে পড়েছেন। বাজারে নদী ও হাওরের মাছ বিক্রি একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। এতে জেলায় সবজি ডিম ও পুকুরের মাছের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে বিভিন্ন হাওরে চুন দেয়া হচ্ছে। এতে পানির গুণাগুণ ভালো হচ্ছে।

জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের মতে বৃষ্টিতে পানিতে বিষক্রিয়া কিছুটা কমে যাওয়ায় অক্সিজেনের পরিমাণ বেড়েছে। হাওরের মাছ খেয়ে হাঁসের খামারে মড়ক লেগেছে বলে তারা জানান। তবে এখন হাওরে হাঁস নাছাড়ার পরামর্শ দেন তারা।
নতুন আতঙ্ক ভুরুঙ্গা: তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, তাহিরপুরে এক শনি হাওরে যেন হাজারও শনি ভর করছে। ঘণ্টায় ঘণ্টায় পানি বাড়তে থাকায় জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করে বাঁধ উঁচু করে টিকিয়ে রাখার শেষ চেষ্টায় হাওরে অবস্থান করছেন কৃষক, শ্রমিকসহ সর্বস্তরের জনসাধারণ। এবার নতুন আতঙ্ক শুরু হয়েছে ভুরুঙ্গা। এই ভুরুঙ্গা বন্ধ ও বাঁধ রক্ষায় কাজ করছে হাজার হাজার শ্রমিক। শেষ রক্ষা না হলে শেষ সম্পদ এ হাওরটির পরিণতি হবে অন্য হাওরগুলোর মতো। উপজেলার ছোট বড় ২৩টি হাওরে উৎপাদিত ২০০ কোটি টাকার অধিক ফসলের ওপর নির্ভর করেই জীবন জীবিকা চলে হাজার হাজার কৃষক পরিবারের। শনি হাওরের বগিয়ানী, লালুরগোয়ালা, ঝালখালি, আহমখখালি, নান্টুখালি, গুরমা এক্সটেশনে বাঁধগুলোর বুরুঙ্গা (পানি প্রবেশের ছোট ছোট সুড়ঙ্গ) দিয়ে হাওরে প্রবেশ করছে পানি। যে কোনো সময় এসব বাঁধ ভেঙে পানিতে ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এসব বুরুঙ্গা বন্ধ ও বাঁধ উঁচু করতে গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই স্বেচ্ছাশ্রমে প্রাণপণ চেষ্টা করে টিকিয়ে রাখছেন ২টি উপজেলার ৩ সহস্রাধিক কৃষক, শ্রমিক জনতা। অন্য বাঁধগুলোর সমান সমান পানি। উপজেলায় প্রধান বোরো ধান উৎপাদন সমৃদ্ধ এ হাওরে সাড়ে ৬ হাজার হেক্টর ও পাশের জামালগঞ্জ উপজেলার ৩ হাজার হেক্টরের অধিক ও মধ্যনগর থানার কিছু অংশে বোরো ধানের চাষাবাদ করা হয়েছে। উপজেলার সব হাওর হারিয়ে যাওয়ার পরও সবার আশা অন্তত এই শেষ সম্বল শনির হাওরটুকু রক্ষা করা। প্রতি মুুহূর্তেই উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে কৃষক ও স্থানীয় জনসাধারণের মাঝে। হাওরের কোনো খবর শুনলেই হতাশায় ভেঙে যায় উপজেলার সবার মন। আর সবাই বাঁধে উড়া, কোদাল নিয়ে ছুটে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে পড়ে। কারণ, এই হাওরের একটি বাঁধ ভেঙে গেলে শনির হাওর রক্ষার আর কোনো উপায় থাকবে না। গুরুত্ব সহকারে বাঁধে কাজ করছেন তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল, ইউপি চেয়ারম্যানসহ উদীয়মান তরুণ সমাজ সেবক ও হাজার হাজার কৃষক, শ্রমিক জনতা নিঃস্বার্থভাবে।