৩ মে ২০২৩, বুধবার, ৮:৫৪

বিবিএসের জরিপ

দেশে বেকার বেড়েছে

দেশে গত তিন মাসে বেকারত্ব বেড়েছে। গত বছরের শেষ তিন মাসে যেখানে বেকারত্ব ছিল ৩.২ শতাংশ, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে সেটা হয়েছে ৩.৫১ শতাংশ। বৃদ্ধির হার ০.৩১ শতাংশ। এ হিসাবে চলতি তিন মাসে দেশে বেকার বেড়েছে ২ লাখ ৭০ হাজার। বর্তমানে দেশে বেকারের সংখ্যা ২৫ লাখ ৯০ হাজার বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। জরিপে বলছে, শ্রমশক্তির বাইরে অবস্থিত জনগোষ্ঠীর সংখ্যা হলো ৪ কোটি ৬৩ লাখ ৯০ হাজার। এখানে কৃষিতে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর পরিমাণ কমে হয়েছে ৩ কোটি ১৯ লাখ ৪০ হাজার। পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, কৃষিতে মন্দাকাল জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর এবং জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত। যখন কাজ না থাকে তখন এই শ্রমশক্তি ঘুরে বেড়ায়। চিল্লাতে যায়। তবে অর্থনীতিতে বেকারত্ব বাড়া-কমার মধ্যে থাকবে। এটি নিয়ে আমি আতঙ্কিত নই।

শেরেবাংলা নগরস্থ এনইসি সম্মেলন কক্ষে গতকাল বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর উদ্যোগে ত্রৈমাসিক শ্রম শক্তি জরিপ প্রকাশ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। অনুষ্ঠানে তথ্য উপস্থাপন করেন প্রকল্প পরিচালক আজিজা রহমান। বিবিএস মহাপরিচালক মো: মতিয়ার রহমানের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনারা আরেফিন।

বিবিএস বলছে, যারা গত সাত দিনে কমপক্ষে এক ঘণ্টা বেতন বা মজুরি বা মুনাফার বিনিময়ে অথবা খানার নিজস্ব ভোগের জন্য পণ্য উৎপাদনমূলক কাজ করেছে তারাই মূলত আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) নির্দেশনা অনুযায়ী কর্মে নিয়োজিত হিসেবে বিবেচিত হবে। আর বেকার জনগোষ্ঠী হলো তারাই যারা গত সাত দিনে কমপক্ষে এক ঘণ্টাও কোনো কাজ করেনি। কিন্তু সাত দিনে কাজ করার জন্য প্রস্তুত ছিলেন এবং গত ৩০ দিনে বেতন বা মজুরি বা মুনাফার বিনিময়ে কোনো না কোনো কাজ খুঁজেছেন।

বিবিএস মহাপরিচালক জানান, শ্রমশক্তি জরিপের তথ্য সংগ্রহের জন্য সমগ্র বাংলাদেশে ১ হাজার ২৮৪টি পিএসইউ এবং প্রতিটি পিএসইউতে ২৪টি থানা দ্বৈবচয়নের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি কোয়ার্টারে ৩০ হাজার ৮১৬ খানা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এভাবে এক বছরে তিন মাস ধরে চারটি কোয়ার্টার সম্পন্ন করা হবে। এই জরিপের মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে ২০২৩ সালে চলমান থাকবে। মূলত এই জরিপে প্রাপ্ত উপাত্ত হতে জাতীয় শ্রমশক্তির সুষ্ঠু ব্যবহার ও কর্মসংস্থান এবং বেকারত্ব নিরসনে প্রয়োজনীয় নীতি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।

বিবিএস জরিপ তথ্য তুলে ধরে আজিজা রহমান বলেন, ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত বেকারদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ১৭ লাখ ১০ হাজার জন এবং নারী ৮ লাখ ৮০ হাজার। গত শ্রম জরিপ ২০২২ অনুযায়ী, পুরুষ ১৬ লাখ ৬০ হাজার আর নারী ৬ লাখ ৬০ হাজার ছিল। সে হিসাবে তিন মাসের জরিপে পুরুষ ও নারী উভয় ধরনের বেকারই বেড়েছে।

শ্রমশক্তি জরিপ ২০২৩ (জানুয়ারি-মার্চ) ফলাফল অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে মোট শ্রমশক্তিতে নিয়োজিত জনগোষ্ঠী ৭ কোটি ৩৬ লাখ ৯০ হাজার জন। এর মধ্যে পুরুষ ৪ কোটি ৮২ লাখ ৫০ হাজার এবং নারী ২ কোটি ৫৪ লাখ ৪০ হাজার জন। এ ছাড়া কর্মে নিয়োজিত জনগোষ্ঠী ৭ কোটি ১১ লাখ জন। যার মধ্যে পুরুষ ৪ কোটি ৬৫ লাখ ৪০ হাজার এবং মহিলা ২ কোটি ৪৫ লাখ ৬০ হাজার জন। আর ২০২২ সালের জরিপে দেশে মোট শ্রমশক্তি ছিল ৭ কোটি ৩৪ লাখ ১০ হাজার। এর মধ্যে পুরুষ ৪ কোটি ৭৪ লাখ ৮০ হাজার এবং নারী ২ কোটি ৫৯ লাখ ৩০ হাজার ছিল।

এবারের জরিপ অনুযায়ী, শ্রমশক্তির বাইরে অবস্থিত জনগোষ্ঠী ৪ কোটি ৬৩ লাখ ৯০ হাজার। যার মধ্যে পুরুষ ১ কোটি ১১ লাখ ৯০ হাজার এবং নারী ৩ কোটি ৫২ হাজার জন। এ ছাড়া শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণের হার ৬১ দশমিক ৩৭ শতাংশ। অর্থনৈতিক খাত অনুযায়ী কৃষিতে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ৩ কোটি ১৯ লাখ ৪০ হাজার, শিল্পখাতে এক কোটি সাড়ে ২২ লাখ এবং সেবা খাতে ২ কোটি ৬৯ লাখ ১০ হাজার জন। এখানে গত ২০২২ সালের জরিপের তুলনায় এবং গত বছরের তুলনায় কৃষিতে কমেছে। ২০২২ সালে ছিল ৩ কোটি ২২ লাখ এবং শেষ প্রাপ্তিকে ছিল ৩ কোটি ২৩ লাখ জন। যা ৩ লাখ ৬০ হাজার জন কমেছে এবার। যুব শ্রমশক্তি যাদের বয়স ১৫ থেকে ২৯ বছর এদের সংখ্যা ২ কোটি ৭৩ লাখ ৮০ হাজার জন। যার মধ্যে পুরুষ এক কোটি ৪০ লাখ ৩০ হাজার এবং মহিলা এক কোটি ৩৩ লাখ ৫০ হাজার জন।

ড. শামসুল আলম বলেন, মওসুমভিত্তিক বাংলাদেশ কৃষি শ্রমনির্ভর করে। বছরের প্রথম তিন মাসে মন্দা সময় গেছে। এটাকে বলা হয় কাজ কম থাকার সময়। ফলে কৃষিতে শ্রমিকের চাহিদা কমায় সার্বিকভাবে বেকার সংখ্যা বেড়েছে। তবে চলতি এপ্রিল থেকে মে মাস পর্যন্ত আবার শ্রমিকের চাহিদা বাড়বে। ফলে এই তিন মাসের হিসেবে বেকার কমতে পারে। ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে বেকারের সংখ্যা কমা-বাড়ার মধ্য দিয়েই যাবে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/745049