৩ মে ২০২৩, বুধবার, ৮:৫২

হোঁচট খেলো রেমিট্যান্স

এক মাসে কমেছে সাড়ে ১৬ শতাংশ

ঈদের মাসে বিদেশে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশীরা দেশে আত্মীয় পরিজনের কাছে বাড়তি অর্থ পাঠিয়ে থাকেন। এ কারণে বরাবরই বছরের অন্য সময়ের চেয়ে ঈদের মাসে বেশি রেমিট্যান্স আসে। কিন্তু ব্যতিক্রম দেখা দিলো এবারের ঈদের মাসে। গত বছরের ঈদের মাস অর্থাৎ এপ্রিলে যেখানে রেমিট্যান্স এসেছিল ২০০ কোটি ডলার বা ২ বিলিয়ন ডলারের ওপরে, সেখানে চলতি বছরের এপ্রিলে তা না বেড়ে বরং কমে হয়েছে ১৬৮ কোটি ডলার বা ১.৬৮ বিলিয়ন ডলার। এক মাসে রেমিট্যান্সের পরিমাণ কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়ায় চলতি হিসেবের ভারসাম্যেও ঋণাত্মক প্রভাব পড়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, টাকা পাচার প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি খোলা বাজারের সাথে ব্যাংকিং চ্যানেলের রেমিট্যান্সের ডলারের মূল্যের পার্থক্য কমিয়ে আনতে হবে। অন্যথায় ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানো কঠিন হবে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালন ও ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. আহসান এইচ মনসুর এ বিষয়ে গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, বিদেশে বর্তমানে এক কোটির ওপরে বাংলাদেশী কর্মরত আছেন। হিসেব অনুযায়ী তিন থেকে সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলারের বেশি আসার কথা। সেখানে আসছে ২ বিলিয়নের নিচে। কম আসার অর্থই হলো ব্যাংকিং চ্যানেলে কাক্সিক্ষত হারে রেমিট্যান্স আসছে না। এর অন্যতম কারণ হলো টাকা পাচার। এখন দেখা যায়, টাকা ওয়ালা, বড় কর্তা হলেই ছেলেমেয়েদের বিদেশে পড়ানোর জন্য পাঠানো হয়। অনেকেই পড়তে গিয়ে আর দেশে আসেন না। বিদেশে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনাসহ থাকা খাওয়ার অর্থ কিভাবে জোগান দেয়া হয় সে বিষয়ে তেমন কোনো প্রশ্ন উঠে না।

তিনি মনে করেন, বিদেশে টাকা পাচার ঠেকানো গেলেই রেমিট্যান্স প্রবাহ দ্বিগুণ হয়ে যেত। কিন্তু এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষের নেয়ার মতো কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ে না। তিনি মনে করেন, হুন্ডি প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিলেই দেশে বৈদেশিক মুদ্রার সঙ্কট অনেকাংশেই কেটে যেত। দ্বিতীয়ত হলো, ব্যাংক রেমিট্যান্সের ডলারের জন্য যে দর দেয়, খোলা বাজারের ডলারের মূল্য তার চেয়ে অনেক বেশি। তিনি মনে করেন, খোলা বাজারের সাথে ব্যাংকের রেমিট্যান্সের ডলারের মূল্য ব্যবধান ২ টাকার বেশি হওয়া ঠিক নয়। কিন্তু কার্যকর হলো এ পার্থক্য ৬ থেকে ৭ টাকা হচ্ছে। ব্যাংকে রেমিট্যান্সের ডলারের মূল্য যেখানে ১০৭ টাকা, সেখানে খোলা বাজারের ডলারের মূল্য ১১৩ টাকা থেকে ১১৪ টাকা। এ ব্যবধান কমিয়ে আনতে হবে। অন্য দিকে টাকাকে আরো আকর্ষণীয় করতে হবে। অর্থাৎ ব্যাংক ঋণের সুদহার আরো বাড়াতে হবে। তাহলে বেশি লাভের আশায় মানুষ ব্যাংকে টাকা রাখবে। এসব পদক্ষেপ নিলে রেমিট্যান্স প্রবাহ আপনাআপনিই বেড়ে যাবে বলে তিনি মনে করেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত মার্চে রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২ কোটি ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছিল প্রায় সাড়ে ৯ শতাংশ। গত মাস ছিল ঈদের মাস। এ মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ার কথা। কিন্তু গত এপ্রিলে রেমিট্যান্স প্রবাহ না বেড়ে বরং কমে গেছে সাড়ে ১৬ শতাংশ। মার্চে যেখানে রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২ কোটি ডলার, এপ্রিলে তা কমে হয়েছে ১৬৮ কোটি ডলার। আগের বছরের এপ্রিলে এসেছিল ২০১ কোটি ডলার। এ হিসেবে এপ্রিলে রেমিট্যান্স কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ।
রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়ায় চলতি হিসেবের ভারসাম্যে ঋণাত্মক প্রভাব পড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, এমনিতেই পণ্য বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে যাচ্ছে। এর ওপর রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়ায় চলতি হিসেবের ভারসাম্য ঋণাত্মক হয়ে গেছে। গত জুলাই-ফেব্রুয়ারি মাসে চলতি হিসেবের ভারসাম্য হয়েছে ঋণাত্মক প্রায় ৪৩৯ কোটি ডলার। চলতি হিসেবের ভারসাম্য ঋণাত্মক হওয়ার অর্থই হলো আন্তর্জাতিক দায় পরিশোধের সক্ষমতা কমে যাওয়া।

এদিকে একদিকে আমদানি ব্যয় বাড়ছে, অন্য দিকে কাক্সিক্ষত হারে রফতানি আয় হচ্ছে না। পাশাপাশি রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়ায় ডলারের আন্তঃপ্রবাহের ওপর ঋণাত্মক প্রভাব পড়েছে। এর ফলে স্থানীয় বাজারে ডলারের দাম বেড়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, গত বছরের ২৬ এপ্রিল যেখানে প্রতি ডলার পেতে ব্যয় করতে হতো ৮৬ টাকা, সেখানে চলতি বছরের ২৬ এপ্রিলে তা বেড়ে হয়েছে ১০৭ টাকা। যদিও আমদানি বাণিজ্যে এর চেয়ে বেশি দরে ডলারে লেনদেন হচ্ছে। সামনে রেমিট্যান্স প্রবাহ না বাড়লে ও আমদানি ব্যয় কাক্সিক্ষতহারে কমাতে না পারলে ডলারের দাম আরো বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/745055