৩ মে ২০২৩, বুধবার, ৮:৪৮

আমাদের নদ-নদীর মরণ দশা

-খন্দকার হাসনাত করিম

এককালের প্রমত্তা পদ্মা আজ শুষ্ক ধূ-ধূ বালুচর। ব্রিজের উপর থেকে নদীর দিকে তাকালে মনটা হু হু করে ওঠে। এই কি সেই পদ্মা? একই হাল যমুনার। ভৈরব, মেঘনা, ব্রহ্মপুত্র, মধুমতি, কুমার, নবগঙ্গা, তিস্তা, চিত্রা, মহানন্দা, ফেনী নদী- শুষ্ক মৌসুমে সব ক’টির প্রবাহে মাটি ফেটে খাক। নদীর বুকে চলে চাষবাস, গো-মহিষ চারণের বাথান, কোথাও কোথাও পুকুর কেটে মাছ চাষ, চলাচলের মেঠো পথ। শুষ্ক মৌসুমে বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে মানুষ দিব্যি হেঁটে পার হয় বিশুষ্ক যমুনা। মূলত শীতের পরে নাব্যতার লেশমাত্র থাকে না ছোট-বড় প্রায় সব নদনদীতে।

অনেক নদী দেশের টপোগ্রাফি (ভূচিত্র) থেকে লুপ্ত হয়ে গেছে। পড়ে আছে শুধু চিহ্ন। নদী নেই। সহস্রাধিক মূল ও শাখা প্রবাহের মধ্যে টিকে আছে মাত্র চারশ’ নদী। বহু নদ-নদী হয়েছে অবৈধ দখলের শিকার। যশোর শহরে ঢাকা রোড সেতুর উপর দাঁড়ালে শুধু শহরের ইমারত সারি চোখে পড়ে। দখল হতে হতে এখন নদীর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া ভার। ভূপৃষ্ঠস্থ পানির স্তর এত নেমে গেছে যে, আগের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি গভীর পাইপ পুঁতলেও পানি উঠছে না। অথচ এই ভূপৃষ্ঠস্থ পানিকে অমোঘ সম্পদ গণ্য করে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়া দেশজুড়ে ‘খাল খননের’ বিপ্লব শুরু করেছিলেন। স্বাধীনতার পরও দেশে স্রোতসম্পন্ন নদ-নদীর সংখ্যা ছিল ১,২৭৪টি। হারিয়ে ‘নিখোঁজ’ হয়ে গেছে ৫৫০টি নদ-নদী। বাকিগুলোও পানির অভাবে, দখলে, দূষণে মরতে বসেছে।

দিন কতেক আগে নারায়ণগঞ্জ থেকে নদী পার হয়ে বন্দর থানায় গিয়েছিলাম। শীতলক্ষ্যায় পানি আছে বটে, তবে দূষণে মিশ্রণে সে পানি ঘন আলকাতরার মতো হয়ে গেছে। বড় নদীর সাথে সংযুক্ত নদীগুলোর সংযোগস্থলে চর পড়ায় সেগুলো শুকিয়ে মরতে বসেছে। নদীগুলোতে খননের (ড্রেজিং) কোনো লক্ষণ নেই। সংযোগ চর সরিয়ে নাব্যতা ফিরিয়ে আনারও উদ্যোগ কার্যত অবর্তমান। নদী বাঁচলে কৃষি বাঁচবে, বাংলাদেশ বাঁচবে। কিন্তু সেই নদীগুলো মৃত্যুশয্যায়। নদীর আঁক-বাঁক ধরে বিস্তার ঘটেছে সভ্যতার। সেই নদী যদি শ্বাসরুদ্ধ হয়ে এভাবে মরে যেতে থাকে, তাহলে দেশের কী হবে? কৃষিইবা বাঁচবে কী করে? দেশের কৃষি ও মৎস্য সম্পদ নদ-নদী, হাওর-বাঁওড়, খাল-বিল, জলাশয়গুলোর ওপর নির্ভরশীল। আমরা উন্নয়নের ধারণা দিচ্ছি ব্রিজ, কালভার্ট নির্মাণের আগে নদীর ওপর এগুলোর প্রভাব জরিপের পরিবেশগত এবং ভূবৈশিষ্ট্যগত (টপোগ্রাফিক বা হাইড্রোমরফলজিক্যাল) গবেষণা কী চালাচ্ছি? রাজশাহী এখন আর পদ্মা বিধৌত নয়; পদ্মার চরবেষ্টিত। তেমনি দশা পাবনা। একসময় গোমতি নদী ছিল কুমিল্লা-দাউদকান্দির জন্য ঝুঁকি। এখন সেই গোমতি নিজে বিশুষ্ক ধূ-ধূ বালিয়াড়ী। পানিশূন্য হয়ে গেছে একসময়ের খর¯্রােতা মহানন্দা। শুকিয়ে গেছে পদ্মার শাখা নদী বরমঙ্গলা ও নারদ নদ। পদ্মা-বিধৌত রাজবাড়ী জেলা এখন মরুপ্রায়। শুকিয়ে বিবর্ণ হয়ে গেছে বগুড়ার যমুনা, করতোয়া ও বাঙালী নদী। নীলফামারী শুকাচ্ছে তিস্তায় পানি নেই বলে। প্রাণহীন ও নিস্তরঙ্গ হয়ে গেছে ধলেশ্বরী ও কালীগঙ্গা, মনু, আড়িয়াল খাঁ, আত্রাই, গড়াই, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, কপোতাক্ষ, বংশী, ঘাগট, নবগঙ্গা, কুশিয়ারা, ডাকাতিয়া, ভদ্রা, সাঙ্গু, চিত্রা, ভৈরব, মাথাভাঙ্গা, রূপসা, পশুর এমনকি গিরিকন্যা কর্ণফুলীও। অথচ ভরাট তলদেশ উপরে কূল বিনাশ করবে এ নদীগুলো বর্ষা মৌসুমে। বর্ষায় উজানে ভারত খুলে দেবে বাঁধ, ভেসে যাবে ভাটির বাংলাদেশ। চর ডুবিয়ে, কূল ভাসিয়ে বানের তাণ্ডবে লয় হয়ে যাবে দেশের প্রধান চারটি প্রবাহের সাথে সংযুক্ত সব কয়টি শাখা ও উপনদী, হাওর-বাঁওড়-খাল। (এই প্রধান প্রবাহ-চতুষ্টয় হলো : ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা, সুরমা-মেঘনা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাহাড়ি নদীগুচ্ছ)।

বাংলাদেশের নদ-নদীগুলোর আজকের এ মরণদশার জন্য প্রধানত দায়ী উজানে পানি অবরোধ (যা আন্তর্জাতিক আইন ও প্রবিধানের গুরুতর লঙ্ঘন)। দ্বিতীয় কারণ দূষণ, সেতু নির্মাণ, পলি জমা, নদী ভাঙন ও চর জাগা এবং বাঁধ নির্মাণ প্রভৃতি। যেমন বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা ও ধলেশ্বরী মরছে দূষণে, শিল্প বর্জ্য ও রসায়নে; পদ্মা মরছে ফারাক্কার কারণে; যমুনা শুকাচ্ছে সেতুর জন্য; পশুর ও রূপসা মরছে মাত্রাতিরিক্ত জলসেচের কারণে; ইছামতি মরছে পলি জমে; চিত্রা ও গড়াইও মরছে চর পড়ে; করতোয়া মরছে ভাঙনে ও অন্যদিকে চর পড়ে; তিস্তা মরছে ভিনদেশী বাঁধের কারণে।

মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি, ঘর বাড়ি নির্মাণ, কলকারখানা স্থাপনেও বহু নদী ক্রমেই সঙ্কুচিত হয়ে পড়ছে। নদীতে বর্জ্য ফেলার কারণেও অনেক ছোট নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে। জাহাজ ও লঞ্চ থেকে তেল নিঃসরণেও নদী দূষিত হচ্ছে, কমে আসছে নদীতে মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণির সংখ্যা। রিসাইকেল করা ছাড়া শিল্প দ্রবণ বর্জ্য নদীতে ফেলা নিষেধ। তবে বংশী, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা বা ধলেশ্বরীর পানি দেখে মনে হয় না নদীর তীরস্থ কলকারখানার শিল্প দ্রবণ রিসাইকেল করে গাঙে ফেলা হয়। বুড়িগঙ্গার দূষণের প্রধান কারণ হলো ডাই-কেমিক্যাল ও চামড়া শিল্পের বিষাক্ত ক্ষার। বুড়িগঙ্গার পানিতে লিটারে ৩ মিলিগ্রাম টক্সিন মাত্রার ১৭ গুণ বেশি ক্ষার পাওয়া গেছে। দেখা গেছে, বুড়িগঙ্গার তলদেশে জমে থাকা অপচনশীল পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্যরে স্তর গড়ে ১৬ ফুট। গঙ্গা এবং ব্রহ্মপুত্র বছরে যে ১৬৬.৭০ কোটি টন পলি নিয়ে আসে সেগুলো যায় কই? সবই নদী বাঁকে বা শেষে মোহনায় গিয়ে চর তোলে এবং প্রবাহ রুদ্ধ করে দেয়। নদীর নাব্যতা না থাকায় অভ্যন্তরীণ জল পরিবহন ক্ষেত্রে সৃষ্টি হয়েছে অচলাবস্থা। ঘাট আছে, ঘাটে পন্টুন বাঁধা আছে। এগুলোর ব্যবস্থাপনায় সরকারকে কোটি কোটি টাকাও পানিতে ফেলতে হচ্ছে। অথচ স্টিমার তো দূরে থাক, ছোট লঞ্চ চলার মতো নাব্যতাও নেই নদীতে। ড্রেজিং হচ্ছে না বললেই চলে। স্রেফ নদ-নদীকে যদি সচল রাখা যায় তাহলে কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দ্বিগুণ হতে পারে আকারে, উৎপাদনে, বৈচিত্র্যে ও বনায়নে। আমাদের আজ যে পরিবেশগত বিপর্যয় চলছে, খরা, বন্যা, ফসলহানি, মৎস্য প্রজনন সীমাবদ্ধতা, পাট জাগ দিতে না পারার বিড়ম্বনাগুলোর জন্যও দায়ী নদীর গতিহীনতা, নাব্যতা সঙ্কট এবং পলিতে ভরাট নদীবক্ষ।

নদীতে পানি নেই বলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমে নেমে যাচ্ছে; অন্যদিকে বাড়ছে উপকূলীয় এলাকায় ক্ষতিকর লবণাক্ততা। সরকার নির্বিকার; মানুষ অসতর্ক বা অসচেতন। পানিসম্পদ নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে প্রয়োজনীয় আগ্রহ এবং তাগিদ অবর্তমান। নদী দখল হয়ে যাচ্ছে ক্ষমতাশালীদের দাপটে; অথচ এ নিয়ে জোরালো রাজনৈতিক ভূমিকা নেই কোনো পক্ষের। গণমাধ্যম তাদের বিবেক ও দেশপ্রেমের তাড়নায় যতটা সম্ভব বিপর্যয়ের স্বরূপ এবং পরিণতির কথা তুলে ধরছেন। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেশ রক্ষার চেয়ে যৌনাচার ও অনাসৃষ্টির আগ্রহই প্রবল। কত বড় প্রবঞ্চনা, আমরা বাংলাদেশকে বলি নদীমাতৃক দেশ! বাস্তবে এর ঠিক বিপরীতটা সত্য। আমরা আসলে এক নদীঘাতক দেশ। নদীকে শুকিয়ে মেরে আমরা নদী, নৌকা, নৌকা প্রতীক, নদী নিয়ে গদ্যপদ্য কত কিছু না করছি! এটাকে প্রবঞ্চনা বলব না তো কী? মানুষকে জানাতে হবে, জাগাতে হবে। পানি সম্পদ যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেই বার্তা এবং সরকার ও জনগণের যা করণীয় সে সম্পর্কে বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। জানাতে হবে নদী বাঁচলে পরিবেশ বাঁচবে। কৃষি বাঁচবে। অর্থনীতি বাঁচবে। দেশ বাঁচবে। ক্ষমতায় থাকা বা ক্ষমতায় যাওয়ার মধ্যে কী এমন বাহাদুরী, যদি দেশই না বাঁচল?

গানটা যখন শুনি, মনটা ভারী হয়ে ওঠে। চপলা, চঞ্চলা করদিনীকে নিয়ে লেখা এ গানে বলা হচ্ছে ‘ও নদীরে, একটি কথা শুধাই শুধু তোমারে, বল কোথায় তোমার দেশ, তোমার নেই কি চলার শেষ? ও নদী রে ... ’। বাংলাদেশে ব্রিজ, বাঁধ, অবকাঠামো এগুলোর কথা উঠতে আমরা অনুচিতভাবে এবং অন্যায়ভাবে একটা কথা শুনি, তা হলো নদী শাসন। শব্দটা বড়ই বেতমিজী শব্দ। মানুষ নদী শাসন করার কে? মানুষ নদী উন্নয়ন করবে, নদীর প্রবাহ বাঁচিয়ে নদী বাঁচাবে, এটাই তো সঙ্গত। সেই নদী, প্রকৃতির সেই ধারাকে শাসন বা গতিরোধ করে আমরা এত সর্বনাশ করছি, তার পরও ‘নদী শাসন’ কথাটা আমরা আমাদের অভিধান থেকে খারিজ করি না কেন? আমরা যে ‘শাসন’ করছি তার ধরন হলো দূষণ, তীর ও চর দখল, নদীর বহর সংকোচন, বালু চুরি, মাটি চুরি, নদী তীরে অবৈধ দখল ও স্থাপনা তৈরি, ব্রিজ করতে গিয়ে পিলার স্থাপন, নিয়মিত খনন না করে নদী তলদেশ ভরাট ও বর্জ্যরে স্তূপীকরণ, পানিতে বিষ ও বর্জ্য নিঃসরণ, আরো কত কী? আমরা দেশ স্বাধীন করেছি; কিন্তু নদ-নদীকে করেছি বন্দী ও সঙ্কুচিত।

১৯৫০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ক্রুগ মিশন’ রিপোর্টে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক জীবনের সঙ্কট সমাধানের একটি পথরেখা দেয়া হয়। সেই রিপোর্টেও বাঁধ, পরিখা, বেড়ি বাঁধ (্ক্রস ড্যাম), স্রোত অবরোধ, খাল খনন, জলবিদ্যুৎ উৎপাদন এসবের কথা বলা ছিল। তখন অবশ্য এগুলো না করলে নিঃস্ব, রিক্ত পূর্ব বাংলার অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়ত। পূর্ব বাংলায় তখন ঘরে ও নগরীর রাস্তায় কুপি বাতি জ্বালিয়ে আঁধার দূর করার যৎসামান্য আয়োজন ছিল। ঢাকার রাজপথে কুপি বাতি জ্বালানো হতো ঢাকার প্রজাহিতৈষী নবাবদের দয়ায় ও অর্থানুকূল্যে। ঢাকেশ্বরী কটন মিল ও কুষ্টিয়ার মোহিনী টেক্সটাইল মিলে স্রেফ এ দুই জায়গায় জেনারেটর চালিয়ে ডিসি কারেন্ট দেয়া হতো মিলে। জনগণের তাতে কোনো উপকার হতো না। কাপ্তাইতে বাঁধ দিয়ে জলবিদ্যুৎ তৈরি না হলে গোটা প্রদেশ বহু দিন অন্ধকারে থাকত। আমরা আজ বদ্বীপ মহাপরিকল্পনার কথা বলছি, কিন্তু নদী-বিধৌত সে বদ্বীপ তো আর থাকছে না। বদ্বীপ মহাপরিকল্পনা নিয়ে ভাবার নৈতিক মুরাদ কোথায় আমাদের? এক সময় আমরা দেশাত্মবোধের কারণে স্লোগান দিতাম, ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা-তোমার আমার ঠিকানা।’ সেই পদ্মা মেঘনা যমুনাকে বহমান রাখতে আমরা কী করেছি? নদীগুলো তো আজ মরতে চলেছে! বাংলাদেশে অর্ধসহস্র যে নদ-নদী টিকে আছে এগুলোর অধিকাংশ অভ্যন্তরীণ নদী। ৫৪টি নদী সীমান্তবর্তী। এ নদীগুলো ভারতের উজান জলনীতি বা পানি লুণ্ঠনের কারণে এবং বর্ষায় বাঁধখোলা পানির তাণ্ডবের শিকার। গোটা গাঙ্গেয় অববাহিকা সর্বনাশা ফারাক্কা বাঁধে ফাঁসে শ্বাসরুদ্ধ। গঙ্গার পর এবার তিস্তা নিয়ে শুরু হয়েছে ‘জল-সন্ত্রাস’।

চীনে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময় মাও সেতুং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক, আমলা-প্রশাসক ও নগরবাসী শিক্ষিত মানুষকে গ্রামে গিয়ে সাধারণ মানুষের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাঁধ নির্মাণ, অবকাঠামো নির্মাণ প্রভৃতি বড় কাজে অংশ নিতে পাঠান। ঠিক এ দৃশ্য অনুসরণ করেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়া। জিয়া যথার্থ বুঝেছিলেন পানি ছাড়া আমরা বাঁচব না। তাই নদীকে নাব্য করতে হবে। খুঁড়ে গভীর করতে হবে নদীর তলদেশ। তাতে বর্ষার বন্যার বানভাসিও কমবে, মাঘ-ফাল্গুন-চৈত্র্যের মরুময়তাও ঠেকানো যাবে। এর পরও আমাদের বুঝতে বাকি থাকা উচিত যে, কেন জিয়াকে প্রাণ দিয়ে তার দেশপ্রেমের মূল্য দিয়ে যেতে হয়েছে? বাঁচতে হলে বাঁচাতে হলে তাই আমাদের ফের নদ-নদী খননে যেতে হবে। বন্ধ করতে হবে নদী লুণ্টন, নদীদূষণ এবং ভূগর্ভস্থ পানির অপচয়। বাংলাদেশ থেকে ভারত পাট নিচ্ছে, ইলিশ নিচ্ছে, সবই নিচ্ছে। বিক্রি করছে খাদ্যশস্য, মেশিনারি, সুতাসহ আর সব কিছু। এতবড় বাজার ভারতের অর্থনীতির এক বিশাল আশীর্বাদ। অথচ লুটে নিচ্ছে গঙ্গার পানি। জলপাইগুড়ি জেলার গজলডোবায় বাঁধ দিয়ে জল আটকিয়ে মহানন্দায় নিয়ে যাচ্ছে উজানের পানি। আমাদের দিকে আশার মূলা ঝুলাচ্ছে। এভাবে কথার ইন্দ্রজালে আটকে থাকলে আমরা উজানের পানির ন্যায্য হিস্যা কোনো দিন পাব না। আমাদের আবার যেতে হবে সালিশ-দরবারে।

নদ-নদীতে ড্রেজিং এবং শুকনো নদীতল খনন অভিযান আবার চালু করতে পারলে আমরা ফের নদীতে নাব্যতা ফিরে পাব, দূষণ কমাতে পারব, উপকূলীয় লবণাক্ততা থেকে প্রাণ ও উদ্ভিদ বাঁচাতে পারব। বন্ধ ফেরি আবার চালু করতে পারব এবং অভ্যন্তরীণ নৌপথকে আবার কম খরচে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের মাধ্যম বানাতে পারব। কৃষিতে আনতে পারব সত্যিকারের বিপ্লব। পলির আস্তর সরিয়ে নদ-নদীকে ফিরিয়ে দিতে পারব গভীরতা ও ¯্রােত। দেশজুড়ে আজ তাই স্লোগান উঠুক : দেশবাসী, আবার হাতে কোদাল তুলে নাও/ খাল কেটে, পাড় বেঁধে নদ-নদী বাঁচাও।/নদী বাঁচলে বাঁচবে দেশের জান/নদীই হবে জীবনদায়ী, বাংলাদেশের প্রাণ ।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা
hasnatkarimpintu@gmail.com

https://www.dailynayadiganta.com/post-editorial/744930